দীর্ঘ ১৭ বছর যা হয়নি- তা এক বছরে হয়ে যাবে এমনটা মনে করেন না পৌরবাসী। তবে এক বছরের স্বল্প সময়ে দৃশ্যমান কিছু কাজকে স্বাগত জানিয়েছেন পৌর নাগরিকবৃন্দ। এসব উন্নয়ন অগ্রাযাত্রা অব্যাহত রাখতে এর ধারাবাহিকতা চান পৌর নাগরিকবৃন্দ।

২০১৭ সালের ২৫ এপ্রিল ও ৮ মে দুই দফা নির্বাচন শেষে সরাসরি ভোটে বিয়ানীবাজার পৌরসভা প্রথম নির্বাচিত মেয়র পায়। আব্দুস শুকুর মেয়র নির্বাচিত হওয়ার পর প্রথম অভিব্যক্তিতে জনগণের শাসক নয় সেবক হিসাবে কাজ করার কথা বলেন। একই সাথে ১২ নির্বাচিত কাউন্সিলর নিজেদের সাধ্য অনুযায়ী কাজ করার আশাবাদ ব্যক্ত করেন। নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরা তাদের মেধা ও শ্রম দিয়ে পৌরবাসীর আস্থা অর্জন করতে সক্ষম হন।

২০১৭ সালের ২৩ মে বিয়ানীবাজার পৌরসভার প্রথম নির্বাচিত পরিষদ দায়িত্ব গ্রহণ করে। নতুন পরিষদ দ্রুত সময়ের মধ্যে অধিকতর গুরুত্বপূর্ণ খাতগুলোর সংস্কার কাজে হাত দেন। অনেকটা পরিপক্ক জনপ্রতিনিধিদের মতো করে নির্বাচিত পৌর পরিষদ প্রথমেই পৌরসভাকে জলজট মুক্ত করে।

বছরের শুরুতেই অতিবৃষ্টির কারণে পৌরসভায় জলজট দেখা দেয়। দায়িত্বগ্রহণ করেই পৌর মেয়র আব্দুস শুকুর নিজের পরিষদকে নিয়ে জলজট মুক্ত পৌরসভা উপহার দেন। একই সাথে পৌরশহর ও শহরের বাইরের সকল ড্রেন অল্প দিনের মধ্যে করে পরিস্কার।

জলজট মুক্ত পৌরসভার পরই নতুন করে সড়কের প্রশস্থ বৃদ্ধি, পানি নিস্কাশন ব্যবস্থা গড়ে তুলতে কর্মপ্রণয়ন, পৌর বাস টার্মিনাল নির্মাণ, বেশ কয়েকটি সড়কে সংস্কার কাজ, পৌরসভাকে সিসিটিভি আওতায় নিয়ে আসা, বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ প্রকল্প প্রণয়ন, তিনটি পাওয়ার পাম্প স্থাপন করেন। টিএন্ডটি সড়ক বৃষ্টি হলেই ডুবে থাকতো, একই সাথে সারা বছর জুড়ে ড্রেনের ময়লায় ঢেকে থাকতো সড়কের উপরিভাগ। পৌরসভার নিজস্ব তহবিল থেকে আরসিসি ঢালাই, প্রশস্থা বৃদ্ধি এবং ড্রেনের গভীরতা বৃদ্ধি করায় এ সড়ক এখন নতুন পৌরসভার সঠিক পথে পরিচয় বহন করছে। একই সাথে উপজেলা চত্বর এলাকায় সড়কের প্রশস্থতা বৃদ্ধি ও ড্রেন নির্মাণ করায় যানজট মুক্ত ও সৌন্দর্যবর্ধিত হয়েছে। খাসাড়িপাড়া স্কুল রাস্তা ও ড্রেন নির্মাণ, কসবা-ত্রিমূখীবাজার-নবাং রাস্তা সংস্তার, ফতেহপুর রাস্তা সংস্কার, মোল্লাপুর গ্রামের রাস্তার আরসিসি ঢালাইসহ বেশ কিছু উন্নয়ন কাজ সম্পন্ন হয়েছে।

পৌরশহরকে পরিচ্ছন্ন রাখতে কয়েক দফা পরিচ্ছন্ন কর্মী নিয়োগ করেন। দুই দফা ময়লা আর্বজনা পরিস্কারের পর পৌরশহর ও শহরতলী এলাকার সড়ক ও মার্কেট ঝাড়ু দেয়া- যা পৌরবাসীর দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। শহরকে পরিচ্ছন্ন রাখতে বিভিন্ন মার্কেটে বাস্কেট স্থাপন, থানার উত্তর পার্শে্ব স্থায়ী ডাস্টবিন স্থাপন করেন পৌরসভার নির্বাচিত নগর পিতা।

নির্বাচিত পরিষদের প্রথম লক্ষ্য ছিল পৌরসভাকে জলজট মুক্ত করা। একই সাথে একেক ওয়ার্ডের উন্নয়নের একে রকম পরিকল্পনা ও উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়। নির্বাচিত পরিষদের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় এবার বর্ষা মৌসুমে বিয়ানীবাজার পৌরসভার কোথায় জলজট দেখা যায়নি। এটি এ পরিষদের প্রথম সফলতা বলে মনে করেন খাসাড়িপাড়ার অধিবাসী ব্যবসায়ী জাকির হোসেন। তিনি এ রকম পরিকল্পনামাফিক উন্নয়নের ধারাবাহিকতা চান।

নতুন পৌর পরিষদের দায়িত্ব গ্রহণের অল্পদিনের মধ্যে বিয়ানীবাজার পৌরসভার গ্রেড উন্নীত হয়ে ১ম গ্রেডের পৌরসভায় রূপান্তরিত হয়। পৌরসভার নিজস্ব ট্রাক, রোলার সংযোজন করা হয়। লাসাইতলায় পরিবহণ স্ট্যান্ড নির্মাণের জন্য জমি অধি:গ্রহণ করা হয়েছে।

পৌরসভার প্যানেল মেয়র-১ ছয়ফুল ইসলাম ঝুনু জানান, সফলতা-ব্যর্থতার বিচার করবেন পৌরবাসী। তবে আমরা পৌর এলাকার প্রধান সমস্যা চিহ্নিত করে এগিয়ে যাচ্ছি।

পৌরবাসী জানান, মাত্র এক বছরে মেয়র মো. আব্দুস শুকুর পৌরবাসীর আস্থা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছেন। তাঁর বিরুদ্ধে অনিয়মের কোন অভিযোগ উত্তাপিত হয়নি। পৌর কার্যালয়কে সকল শ্রেণী পেশার মানুষের আস্থার ঠিকানায় পরিণত করেছেন। সাধারণ মানুষ এখানে সামাজিক শৃংখলার জন্য সালিশ বিচারের সঠিক সিদ্ধান্ত পাচ্ছে। প্রবাসীরা দেশে এসে যথাযথ সম্মান পাচ্ছেন। তাঁদের পৌর কার্যালয়ে বরণ করে নেয়া হচ্ছে। এছাড়া মেয়র আব্দুস শুকুর নিজে সকল সামাজিক অনুষ্টানে নিজে উপস্থিত হচ্ছেন। পৌরবাসী কারো মৃত্যু হলে শোক প্রকাশ করছেন। কারো সফলতার সংবাদে অভিনন্দন জানাচ্ছেন। কোথাও দ্বন্ধ-সংঘাত-সংঘর্ষ হলে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়ে মীমাংসার চেষ্টা চালাচ্ছেন।

পৌরসভার ১নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা জয়নাল আবেদীন বলেন, আমাদের গুরুত্বপূর্ণ রাস্থা অলুয়াতলী সড়ক সংস্কারের কাজ চলছে। গুরুত্বপূর্ণ এই সড়কের কাজ শেষ হলে এতদঞ্চলের মানুষের আর বড় ধরণের কোন কাজের প্রয়োজন পড়বেনা। তবে তিনি পুরো শহর আলোকিত করতে ষ্ট্রীট লাইট স্থাপনের দাবী জানান।

খাসাড়িপাড়ার বাসিন্দা আতাউর রহমান বলেন, সকল ওয়ার্ডে উন্নয়ন কাজের সুষম বন্টন হচ্ছে। তাছাড়া মেয়র-কাউন্সিলার কারো বিরুদ্ধে সাধারণ মানুষের অভিযোগ নেই। এটা একটা বড় অর্জন। নিদনপুর ৯নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা আব্দুল কাদির জানান, এই এক বছরে আমরা পৌর পরিষদের উপর সন্তুষ্ট। অনেক উন্নয়ন কাজ দ্রুত সম্পন্ন হচ্ছে। এটা ভালো লক্ষণ।

বিয়ানীবাজার পৌরসভার ভারপ্রাপ্ত প্রকৌশলী আশরাফুল ইসলাম জানান, কিছু উন্নয়ন কাজ সম্পন্ন করতে একটু সময় অতিবাহিত হচ্ছে। কারণ নির্মাণ সামগ্রীর দাম আকস্মিক বৃদ্ধি পাওয়ায় এ জটিলতা তৈরী হয়েছে। অচিরেই এসব বিষয় সমাধান হবে।

সরজমিন দেখা যায়, সংস্কারের উদ্যোগ নেয়া সড়কগুলো একটু প্রসস্থ করা হচ্ছে। পৌরসভার এ উদ্যোগ সফল হলে ভবিষ্যতের জন্য বিয়ানীবাজার পৌরবাসী দু:শ্চিন্তামুক্ত হবে। পৌর এলাকার কলেজ গেটের সম্মুখে তৈরী করা সড়ক এবং উপজেলা প্রশাসনমুখি সড়ক সংস্কার করে পরিচ্ছন্ন শহর গড়ার কাজ শুরু হয়েছে। নিয়মিত পৌরশহর পরিচ্ছন্ন করা হচ্ছে।

সার্বিক বিষয় নিয়ে পৌর মেয়র মো. আব্দুস শুকুর জানান, মেয়র নির্বাচনে যে আশা নিয়ে পৌরবাসী আমাকে ভোট দিয়ে বিজয়ী করেন, আমি সে আশা বাস্তবায়নের চেষ্টা করছি। আমি পৌরবাসীর খাদেম হয়ে কাজ করতে চাই। এই একবছরে আমি পৌর এলাকার প্রধান সমস্যা চিহ্নিত করে উন্নয়ন কাজে হাত দিয়েছি। এখন সবাই সহযোগীতা করলে বিয়ানীবাজার পৌরসভা একটি মডেল-আধুনিক পৌরসভায় রূপ পাবে। তিনি পৌর এলাকার এই উন্নয়ন কর্মকান্ডে সহায়তা করার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদের কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।

২০১৭সালের ৮মে বিয়ানীবাজার পৌরসভার প্রথম মেয়র হিসেবে মো: আব্দুস শুকুরকে বেসরকারীভাবে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়। ২২ মে তিনি সিলেটের বিভাগীয় কমিশনারের কাছে শপথ গ্রহণ করেন। তিনি বিগত দিনে বিয়ানীবাজার পৌর আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। গত নির্বাচনে তিনি নৌকা মার্কার প্রার্থী হিসেবে জয়লাভ করেছিলেন।