দীর্ঘ ১৬ বছর পর বিয়ানীবাজার উপজেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে আগামী ৭ নভেম্বর। এই খবরে নড়েচড়ে বসেছেন  সংগঠনের নেতাকর্মীরা। কাউন্সিলকে ঘিরে তাই পদ প্রত্যাশীরা দৌড়ঝাঁপ শুরু করে দিয়েছেন। চলছে নিজ নিজ বলয়ের সভা, বৈঠকসহ কমিটির জন্য মোর্চা গঠনের পরিকল্পনা। দেশের বৃহৎ এ সংগঠনের উপজেলা কমিটির সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক ও সাংগঠনিক সম্পাদক পদ প্রত্যাশীরা সংখ্যা দুই ডজনেরও বেশি। সম্মেলন ঘনিয়ে আসার সাথে সাথে এ সংঘ্যা আরো বাড়তে পারে। পদ প্রত্যাশীদের অনুসারী ও শুভাকাঙ্খিরা পছন্দের প্রার্থীকে নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার-প্রচারণা শুরু করেছেন।

গত বুধবার সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের বর্ধিত সভায় জেলার সম্মেলনের পূর্বে বিভিন্ন উপজেলা ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সম্মেলন করার নির্দেশ দেন কেন্দ্রীয় নেতারা।  আগামী ৭ নভেম্বর বিয়ানীবাজার উপজেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে ১২ অক্টোবর সংগঠনের বর্ধিত সভা অনুষ্ঠিত হবে। জেলা আওয়াম লীগের নির্দেশে উপজেলা আওয়ামী লীগের দায়িত্বশীলরা বর্ধিত সভা আয়োজনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। তবে এসব প্রস্তুতিতে সমন্বয়ের অভাব দেখা দিয়েছে। মূলত সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক দুই মেরুতে অবস্থান করায় বর্ধিত সভার প্রস্তুতিতে ঘাটতি দেখা দিতে পারে বলে শংকা প্রকাশ করেছেন তৃণমূল নেতাকর্মীরা।

বর্ধিত সভার প্রস্তুতি ঘাটতি থাকলেও উপজেলা আওয়ামী লীগের পদ প্রত্যাশীরা কাউন্সিলরদের সাথে যোগাযোগ কোন ঘাটতি রাখছেন না। এর মধ্যে বিগত সময়ে কাউন্সিল তালিকার মধ্য থেকে অনেকেই প্রয়াত হয়েছেন আবার অনেকেই প্রবাস গমন করেছেন। বর্ধিত সভায় জেলার দায়িত্বশীলদের এপদগুলো নতুনদের দিয়ে পুরণ করার দাবি জানাতে পারেন। এমনকি কাউন্সিলর তালিকা ইউনিয়ন ভিত্তিক ২১ থেকে ৩১- এ উন্নত করতে জেলার দায়িত্বশীলদের কাছে আবেদন করা হবে।

উপজেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলনকে সামনে রেখে সভাপতি পদে নাম শোনা যাচ্ছে- বর্তমান সভাপতি আব্দুল হাছিব মনিয়া, সাধারণ সম্পাদক মুক্তিযোদ্ধা আতাউর রহমান খান, সহ সভাপতি আব্দুল আহাদ কলা, মাথিউরা ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ নেতা জমির উদ্দিন, চারখাই ইউপি চেয়ারম্যান মাহমদ আলী।

সাধারণ সম্পাদক পদে পদপ্রত্যাশীদের তালিকা দীর্ঘ। এ পদে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠিক সম্পাদক আহমদ হোসেন বাবুল ও জাকির হোসেন, প্রচার সম্পাদক হারুনুর রশিদ দিপু, সহ দপ্তর সম্পাদক দেওয়ান মাকসুদুল ইসলাম আউয়াল, পৌর আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও পৌর মেয়র মোঃ আব্দুস শুকুর, উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা স্বেচ্ছাসেবকলীগের সভাপতি আবুল কাশেম পল্লব, উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান ও উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক আহবায়ক জামাল হোসেন, আওয়ামী লীগ নেতা ও সাবেক মুড়িয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন কবির, মোল্লাপুর ইউপি আওয়ামী লীগের সভাপতি বদরুল ইসলাম বদই এর নাম শোনা যাচ্ছে।

সাংগঠনিক সম্পাদক পদে মাথিউরা ইউপি চেয়ারম্যান সিহাব উদ্দিন, দুবাগ ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুস ছালাম, লাউতা ইউপি চেয়ারম্যান গৌছ উদ্দিন, শহীদ পরিবারের সন্তান  আলমগীর হোসেন রুনু, উপজেলা শ্রমিক লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহজানুল ইসলাম লায়েক, মোল্লাপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. আতাউর রহমান, উপজেলার যুবলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ও যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী সাব্বির আহমদ, মোল্লাপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক আফজল আহমদ তাপাদার এর নাম শোনা যাচ্ছে।

২০০৩ সালে বিয়ানীবাজার উপজেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। ৬৭ সদস্য বিশিষ্ট উপজেলা আওয়ামী লীগের বর্তমান কমিটির অধিকাংশ দায়িত্বশীল প্রবাসগমন করেছেন এবং অনেকেই প্রয়াত হয়েছেন। সংগঠনের ৬৭ দায়িত্বশীলদের মধ্যে বিয়ানীবাজারে রয়েছে ৩৫/৪০ জন। এর মধ্যে গত ১৬ বছর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক এক সাথে থাকায় বিভিন্ন সময় দলের অভ্যন্তরীণ কোন্দল মাথা ঝাড়া দিয়ে উঠলেও দুই নেতা সামলে নিয়েছিলেন। কিন্তু এবার বিগত উপজেলা নির্বাচন নিয়ে সভাপতি ও সম্পাদকের মধ্যে বিরোধ প্রকাশ্যে দেখা দেয়। ফলে দুই জনের বিপরীতমূখী অবস্থায় আগামী ৭ নভেম্বর সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। দেখার বিষয়ে কাউন্সিলরবৃন্দ সম্মেলনে নতুন না পুরাতন- কাদের দায়িত্বশীল পদে বেছে নেন।

এদিকে, দীর্ঘ ১৭ বছর পর বিয়ানীবাজার উপজেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন হচ্ছে তাই তৃণমূল নেত্তাকর্মীদেরও আগ্রহের কমতি নেই। কর্মীরা পছন্দের প্রার্থীকে নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার-প্রচারনা চালিয়ে যাচ্ছেন। তবে কাউন্সিলে দলীয় আদর্শে বিশ্বাসী ত্যাগী আর নিবেদিতদের স্থান দিতে আহবান জানিয়েছেন তৃণমূল কর্মীরা।