আমরা আমাদের চলতি পথে অনেকের সঙ্গেই বিভিন্ন সম্পর্কে জড়াই,কিন্তু সব সম্পর্কই সব সময় জীবনের পূর্ণতা দেয় না! বলা যায়, সব সম্পর্কই দিনের শেষে সম্পর্কিত হয়ে উঠেনা। কারণ, এই সম্পর্কগুলোর বেশিরভাগই গড়ে উঠে স্বার্থ সংশ্লিষ্টতা নিয়ে! কিন্তু, এর মাঝেও কিছু সম্পর্ক তখনই বন্ধুত্বে গড়ায়, যখন তাতে যুক্ত হয় পারস্পরিক ভালোবাসা, শ্রদ্ধা ও মমত্ববোধ। আর তাই, বন্ধুত্বের নির্দিষ্ট কোন বয়স বা গন্ডি নেই! লেবানিজ দার্শনিক কাহলিল জিবরান বলেছেন, ‘বন্ধু তো সেইজন যে ধারণ করবে তোমার আত্মা, যাকে দেখে তোমার মনে হবে আলো আসছে আলো!’

সেই হারিয়ে যাওয়া বন্ধুদের আবারও খুঁজে পাওয়ার আকাংখায় পুনর্মিলনীর ছলে সোমবার (২৫ নভেম্বর) দুপুরে হয়ে গেল বিয়ানীবাজারের পঞ্চখন্ড হরগোবিন্দ সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের ১৯৭৬ ব্যাচের সহপাঠিদের জমজমাট বন্ধু সম্মিলন।

বিদ্যালয়ের ১৯৭৬ ব্যাচের কিছু উদ্যমী সহপাঠিদের উদ্যোগে পুরনো হারিয়ে যাওয়া বন্ধুদের আবারও খুঁজে পাওয়ার আকাঙ্ক্ষায় আর বন্ধুত্বের বন্ধনকে আরও দৃঢ় করার মানসে তাদের এ আয়োজন। হারিয়ে যাওয়া পুরনো স্কুল বন্ধু, প্রিয় সহপাঠীদের খুঁজে পেয়ে ছেলেবেলা আর কৈশোরের পুরনো অনেক স্মৃতিই যেন তাড়া করে ফিরছিল সকলের মনে। বন্ধুদের সামনে পেয়ে সকলেই হয়ে পড়েছিলেন ভীষণ নষ্টালজিক। দূরত্ব যে কখনোই প্রাণের বন্ধুত্বে কোন ছেদ ফেলেনি, তা এ মিলন মেলায় আগত বন্ধুদের দেখে প্রমাণিত হলো- সম্পর্কে আন্তরিকতা, বিশ্বস্ততা, শ্রদ্ধাবোধ ও ভালোবাসা থাকলে প্রাণে প্রাণ মিলবেই।

সোমবার দুপুরটা অন্য অনেকের কাছেই সাদামাটা মনে হলেও পিএইচজি হাস্কুলের ‘৭৬ ব্যাচের প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের চোখে ছিল উচ্ছ্বাস আর মনে ছিল নানা রঙ আর ভাবনায় ছিল পুনর্মিলনীকে কেন্দ্র করে প্রাণের মেলায় পুরনো ভালোবাসা আর সুদীর্ঘ প্রায় ৩৭-৩৮ বছর আগের স্কুলের প্রিয় বন্ধুদের মুখ দেখতে পারার বাসনা!

বিদ্যালয় মিলনায়তনে আয়োজিত এ পুনর্মিলনী অনুষ্ঠানে সহকারী শিক্ষক তমাল সেন এর সঞ্চালনায় আমন্ত্রিত অতিথি ছিলেন বিদ্যালয়ের সাবেক প্রধান শিক্ষক আলী আহমদ, বর্তমান প্রধান শিক্ষক আব্দুল হাছিব জীবন।

এসময় ‘৭৬ ব্যাচের সহপাঠিদের মধ্যে স্কুল জীবনের নানা রঙিন স্মৃতি নিয়ে স্মৃচারণমূলক বক্তব্য রাখেন মইনুদ্দিন মনু, সুলেমান হোসেন ও আব্দুল মুকিত।

ধীরে ধীরে ঘনিয়ে আসে বিদায়ের ক্ষণ, অবসান হলো প্রাণের মেলার! কিন্তু, সকলেই নিশ্চিত, পুনর্মিলনী উৎসব হয়তো ফুরালো, কিন্তু প্রাণে যে মিলনের বান এসেছে তা তো সহজে ফুরোবার নয়! সকলের বিশ্বাস, প্রাণের এই উচ্ছ্বাস ছড়িয়ে যাবে সবার মাঝে। যারা মিলেছিল আর যারা আসতে পারেনি প্রাণের এই উৎসবে সবার সাথেই আগামীতে আবার দেখা হবে, এই বন্ধন আরও দৃঢ় হবে আগামীতে। এই কামনায় অশ্রু সজল চোখে সমাপ্তি ঘটে অসাধারণ এ পুনর্মিলনী উৎসবের।

পুনর্মিলনীতে অংশ নেন ‘৭৬ ব্যাচের শিক্ষার্থী ফজলুল হক, বদরুল আলম আবুল, সুহেল আহমদ, ফারুক আহমদ, সেলিম উদ্দিন, আব্দুর রহমান, কুতুব উদ্দিন, আব্দুন নূর, আব্দুল খালিক মাখন, নিম্বর আলী, ময়েজ উদ্দিন, খসরু মিয়া, শফিক উদ্দিন, জয়াদ আলী, সুলতান হোসেন, আলতাফ হোসেন, আসাদ উদ্দিন, ফখরুল ইসলাম, আব্দুল মুকিত, দেলোয়ার হোসেন মুক্তা, এনামুল হক, শমসুল ইসলাম, আব্দুল কাইয়ুম, শমছুল ইসলাম কাজল, সাব্বির আহমদ দুলন, বীরবল আহমদ, কনক কুমার দে, আব্দুল খালিক, সফর উদ্দিন সমর, খলিলুর রহমান, জামিল আহমদ ও আবুল কালাম।

পুনর্মিলনী উৎসব শেষে সকল সহপাঠিরা মিলে বিয়ানীবাজারের কৃতিসন্তান সিলেট শিক্ষাবোর্ডের সাবেক চেয়ারম্যান একেএম গোলাম কিবরিয়া তাপাদারের রোগমুক্তি কামনা করে মোনাজাত করেন।