বিয়ানীবাজার উপজেলায় গেল জুন ও জুলাই মাসে অস্বাভাবিকভাবে ৫ আত্মহত্যার ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে ২ টি আত্মহত্যার কারণ জানা গেলেও ৩ টি আত্মহত্যার কারণ উদঘাটন করা জায়নি। এদিকে আত্মহত্যার প্রবণতা বেড়ে চলতে পারে বলে আশংকা প্রকাশ করেছেন বিশ্লেষকরা। সর্বশেষ গত এক সপ্তাহে যমুনা ব্যাংক বিয়ানীবাজার শাখার ব্যাবস্থাপক এবং দাসউরায় এক প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষার্থীর আত্মহত্যা ঘটনায় সর্ব মহলে বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়।

গত ৩১ জুলাই যমুনা ব্যাংক বিয়ানীবাজার শাখার ব্যাবস্থাপক স্বজল কান্তি দাস নিজ ভাড়া বাসায় আত্মহত্যা করেন। পৌরশহরের দক্ষিণ বাজারের আল আরাফা ব্যাংক ভবনের তৃতীয় তলায় তিনি ভাড়া থাকতেন। স্বজল কান্তি দাসকে আত্মহত্যা ঘটনায় প্ররোচনার অভিযোগে পুলিশ সিলেট থেকে ২ জনকে আটক করে। এর আগে নিহতের ভাই সুজীব কান্তি দাস বাদী হয়ে আটককৃতদের অভিযুক্ত করে বিয়ানীবাজার থানায় মামলা দায়ের করেন। পুলিশ তাঁর কক্ষ  সুইসাইড নোট ও ব্যাংকের কার্যালয় থেকে একাধিক চিরকুট উদ্ধার করে।

গত ২৬ জুলাই বুধবার বিয়ানীবাজার উপজেলার তিলপাড়া ইউনিয়নের দাসউরা গ্রামের তাহির আলীর তোলার বড় মেয়ে হাবিবা আক্তার মরিয়ম (১১) আত্মহত্যা করেছে। সে দাসউরা বালিকা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৫ম শ্রেণির শিক্ষার্থী ছিল। তার আত্মহত্যার কোন কারণ জানা যায় নি।

এছাড়া গত ১৯ জুলাই বুধবার বিয়ানীবাজার উপজেলার মুড়িয়া ইউনিয়নের সীমান্তবর্তী নওয়াগ্রাম এলাকায় কালাম আহমদ (৫৫) আত্নহত্যা করেছেন। তিনি চাঁদপুর জেলার মৃত ছাদ উদ্দিনের ছেলে। তবে মুড়িয়া ইউনিয়নের সাতলপাড়ের আইয়ুব আলীর মেয়ে সুলতানাকে বিয়ে করে। দ্বিতীয় স্ত্রী সুলতানার ঘরে এক মেয়ে সন্তান রয়েছে। তার প্রথম স্ত্রীর ঘরে আরও দুই সন্তান। ধারণা করা হচ্ছে পারিবারিক কলহ থেকে তিনি আত্মহত্যা করেন।

গত ১১ জুন রবিবার বিয়ানীবাজার উপজেলার মুড়িয়া ইউনিয়নের ছোটদেশ (বড় ছুটিয়াং) গ্রামের মিছবাহ উদ্দিনের পুত্র আবিদ আহমদ আত্মহত্যা করেছে। সে দোকানি ছিল। তার আত্মহত্যার কোন কারণ জানা যায়নি।

গত ২ জুন বুধবার বিয়ানীবাজার উপজেলার কুড়ারবাজার ইউনিয়নের খসির নয়াগ্রামের মৃত লাল মিয়ার পুত্র হোসাইন আহমদ (২৬) গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছেন। জানা যায়, প্রবাস ফেরত হোসাইন অর্থনৈতিক টানা পোড়নের কারণে মানসিকভাবে ভেঙ্গে পড়েন। এ অবস্থায় নিজের ভবিষ্যৎ নিয়ে হতাশাগ্রস্থ হয়ে তিনি আত্মহত্যা করেছেন।

পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, সামাজিক অস্থিশীলতা ও নিয়ন্ত্রণহীনতায় আবেগ ও অবিশ্বাসের কারণেই এ ধরনের আত্মহত্যা ঘটছে। এ ব্যাপারে সিলেটে মেট্রোপলিটন পুলিশ (এসএমপি) এর অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশানার জেদান আল মুসা বলেন, “আমি যতগুলো আত্মহত্যার ঘটনা দেখেছি। প্রায় সবগুলো ঘটনার পেছনে নিয়ন্ত্রণহীন আবেগই বেশি কাজ করেছে বলে মনে হয়েছে। এছাড়া অবিশ্বাস বেড়ে যাওয়ার কারণে সমাজে একটা অস্থিরতাও কাজ করছে। অবশ্য মাঝে মধ্যে ব্যতিক্রম এক দেইটা ঘটনা পাওয়া যায়। তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে অস্থিরতাই দায়ী।”

শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজ বিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ও বিশিষ্ট সমাজবিজ্ঞানী মো. আল আমিন বলেন, নৈতিক মূল্যবোধের অভাব, পারিবারিক বন্ধন দুর্বল হয়ে পড়া, খেলার সাথী না পাওয়া এবং সর্বেপারি বিজাতীয় সংস্কৃতির আগ্রাসনকেই এক্ষেত্রে দায়ী।  তবে কর্মক্ষেত্রে বা পারিবারিক ক্ষেত্রে বিভিন্ন অবিশ্বাস ও সন্দেহ থেকে এরকম ঘটনা ঘটে যায়। এক্ষেত্রে সকলেরই দায়িত্বশীল আচরণ এবং পারস্পারিক সহযোগিতা খুবই প্রয়োজন। তিনি বলেন, আত্মহত্যা প্রবনতা থেকে মুক্তি পেতে হলে সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধি পারিবারিক বন্ধন দৃঢ় করার পাশাপাশি নৈতিক মূল্যবোধের চর্চা করতে হবে।