বিয়ানীবাজার উপজেলার সরকারি-বেসরকারি ১৭৬টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নেই কোনো শহীদ মিনার। এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার নির্মাণ করার কোনো পরিকল্পনা সংশ্নিষ্ট শিক্ষা বিভাগের আছে কিনা, তাও জানা যায়নি। এতে শিক্ষার্থীরা জানতে পারছে না ভাষার সঠিক তাৎপর্য, জানাতে পারছে ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা।

উপজেলায় শহীদ মিনার শূন্য এই বিদ্যালয়গুলোর মধ্যে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সংখ্যা ১৪০টি এবং মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও মাদ্রাসার সংখ্যা ৩৬টি। তাই সব মিলিয়ে এবারও এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শত শত শিক্ষার্থী (করোনাকালীন ছুটির পর বিদ্যালয় খুললে) নিজ বিদ্যালয়ে শহীদ মিনারের অভাবে ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে পারবে না।

আব্দুল আজিজ নামের নবম শ্রেণীর এক ছাত্র জানায়, আমাদের বিদ্যালয়ে শহীদ মিনার নেই। প্রতিবছর অস্থায়ী শহীদ মিনারে আমরা শ্রদ্ধা নিবেদন করি। একই কথা জানান শামিমা আখতার নামের দশম শ্রেণীর এক ছাত্রী। সে জানায়, বিদ্যালয়ে শহীদ মিনার না থাকায় শিক্ষক ও ছাত্র-ছাত্রী মিলে অস্থায়ীভাবে শহীদ মিনার স্থাপন করে তারা শ্রদ্ধা জানান।

উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা গেছে, বিয়ানীবাজার উপজেলায় জাতীয়করণসহ ১৫০টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় আছে। এই বিদ্যালয়গুলোর মধ্যে শুধু ১০টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে আছে শহীদ মিনার। আর বাকি ১৪০টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে নেই কোনো শহীদ মিনার। এভাবে দীর্ঘদিন ধরে শহীদ মিনারশূন্য অবস্থায় রয়েছে বিদ্যালয়গুলো। একইভাবে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিস থেকে জানা গেছে, বিয়ানীবাজার উপজেলায় তাদের নিয়ন্ত্রণাধীন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ৬২টি। এর মধ্যে মাধ্যমিক বিদ্যালয় হচ্ছে ৪৫টি এবং মাদ্রাসা হচ্ছে ১৭টি। এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে শহীদ মিনার আছে ২৬টিতে। আর বাকি ৩৬টি বিদ্যালয় ও মাদ্রাসায় নেই কোনো শহীদ মিনার।

বিয়ানীবাজার উপজেলা প্রাথমিক সহকারি শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ছফর উদ্দিন জানান, বিদ্যালয়গুলোতে শহীদ মিনার না থাকায় ভাষার মাসে অত্যন্ত সমস্যায় পড়তে হয়। ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করতে পারে না শিক্ষার্থীরা। বিদ্যালয় খোলা থাকলে এবারও একই ধরনের সমস্যায় পড়তে হতে পারে।

উপজেলা সহকারি প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আশরাফুল ইসলাম বলেন, প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শহীদ মিনার নির্মাণ করার মতো অর্থ বরাদ্দ দেওয়া হয় না। আর বরাদ্দ না পেলে আমরা কীভাবে শহীদ মিনার নির্মাণ করে দেব। তবে শিশু শিক্ষার্থীদের ইতিহাস সচেতন করতে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শহীদ মিনার নির্মাণ জরুরি। এ কাজে স্থানীয় সুধীজন কিংবা বিত্তশালীদের এগিয়ে এলে ভালো হয়।

উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মৌলদুর রহমান বলেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার থাকাটা জরুরি। কিন্তু শহীদ মিনার নির্মাণের জন্য সরকারিভাবে অর্থ বরাদ্দ দেওয়া হয় না। এছাড়া শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের নির্মাণ সংশ্নিষ্ট কাজ দেখে শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর। আমরা বিষয়টি শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরসহ সংশ্নিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জানাব। পাশাপাশি এসব বিদ্যালয়ের প্রধান ও পরিচালনা কমিটিকেও বিষয়টি জানানো হবে।

স্থানীয় সরকার বিভাগের উপজেলা প্রকৌশলী মোহাম্মদ হাসানুজ্জামান জানান, সরকারিভাবে বিদ্যালয়গুলোতে শহীদ মিনার নির্মাণের কোনো নির্দেশনা থাকে না। নির্দেশনা পেলেই তারা দ্রুত শহীদ মিনার নির্মাণ করে দেবেন। সেক্ষেত্রে সরকারিভাবে বাড়তি অর্থ বরাদ্দ দিতে হবে।

বিয়ানীবাজারে সরু রাস্তায় ভোগান্তিতে সহস্রাধিক চলাচলকারী