বিয়ানীবাজার উপজেলায় দিন দিন করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ভয়াবহ রূপ ধারণ করছে। করোনায় পরীক্ষায় মানুষের আগ্রহ কমে গেলেও আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা বাড়ছে। বৈশ্বিক মহামারি করোনা পরিস্থিতিতে এখানকার মানুষের মধ্যে নেই ভীতি, উদ্বেগ, উৎকণ্ঠা। সবার চলাফেরা ও দৈনন্দিন কাজ এখানে ভাবলেশহীন। পৌরশহরসহ ১০ ইউনিয়নের অন্য কোথাও নেই করোনার কোনো ছাপ। সবকিছু চলছে স্বাভাবিক নিয়মে আগের মতোই। তবে মানুষের মধ্যে জনসচেতনতা তৈরির লক্ষ্যে পার্শ্ববর্তী উপজেলাগুলোর মতো বিয়ানীবাজারে নেই প্রশাসনের কোন কার্যকরী উদ্যোগ।

সরেজমিনে বিয়ানীবাজার পৌরশহরসহ বিভিন্ন ইউনিয়ন ঘুরে কোথাও জনমনে করোনার উদ্বেগ চোখে পড়েনি। এর মধ্যে চারখাই বাজার, দুবাগ বাজার, বৈরাগীবাজার, সারপার বাজার, থানা বাজার, বারইগ্রাম বাজার, দাসউরা, ঈদগাহবাজার, আছিরগঞ্জ, বিবিরাই বাজারের চিত্র যেন চিরচেনা, আগের মতোই। গ্রামীণ এসব হাট-বাজারে মাছ, তরিতরকারি যার যা প্রয়োজন তা কিনে নিচ্ছেন স্বাভাবিকভাবেই। যারা নিয়মিত হোটেলে নাস্তা সেরে অভ্যস্ত তারা এখনো তাই করছেন। চায়ের স্টলে বসে গল্প করে চা-সিগারেট পান করে আর টিভি দেখে সময় কাটছে অনেকের। সকাল থেকে রাত ১০টা অবধি চলছে আড্ডা। টিভি পর্দায় খবরে চোখ রাখলেও অধিকাংশ সময় তারা বিভিন্ন চ্যানেলে সিনেমা দেখে আগের মতোই সময় পার করছেন।

এদিকে, মাস্ক পড়া বাধ্যতামূলক হলেও এখানকার নিত্যদিনের চিত্র দেখলেই মনে হয় না যে দেশের অন্যান্য উপজেলার তুলনায় বিয়ানীবাজারে আক্রান্ত ও মৃতের হার দিন দিন বাড়ছে। এছাড়া গণপরিবহণে স্বাস্থ্যবিধি মানার নির্দেশনা থাকলেও যান চালক কিংবা সাধারণ যাত্রীরা কেউই তা মানছেন না। তবে এসব ক্ষেত্রে সিলেট ও মৌলভীবাজার জেলার বিভিন্ন উপজেলায় ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হলেও বিয়ানীবাজারে নীরব ভূমিকায় রয়েছে প্রশাসন। অনেক ক্ষেত্রে উপজেলা প্রশাসনের এসব কর্মকাণ্ডের প্রচারাভিযান কনফারেন্স রুমের ফটো সেশন কিংবা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকের পোস্টেই সীমাবদ্ধ রয়েছে।

প্রায় সাড়ে তিন লাখেরও মানুষের বসতি প্রবাসী অধ্যুষিত বিয়ানীবাজার উপজেলায়। শুক্রবার রাত ৮টায় এ প্রতিবেদন লিখা পর্যন্ত এ উপজেলায় করোনা পরীক্ষা করা হয়েছে ১১৯২ জনের। এর মধ্যে সংক্রমিতদের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২৬৮ জনে। মারা গেছেন ১৪জন এবং সুস্থ হয়ে উঠেছেন ১৮৫। এ উপজেলায় করোনা পরীক্ষায় মানুষের আগ্রহ নেই বললেই চলে। এ পর্যন্ত শনাক্তের হার ০.৫ শতাংশ, অর্থাৎ প্রতি ২০০ জনে একজন করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। তবে সুস্থতার হার ৬৯.০৩ শতাংশ হলেও পার্শ্ববর্তী অন্যান্য উপজেলার তুলনায় মৃত্যুর হারও বেশি। বর্তমানে মৃত্যুর হার ৫.২২ শতাংশ।

আক্রান্তদের মধ্যে যারা মৃত্যুবরণ করেছেন তারা সকলেই পঞ্চাশোর্ধ নারী-পুরুষ। তারা বার্ধ্যকসহ শারীরিক নানা রোগেও আক্রান্ত ছিলেন। জুলাইয়ের শেষ দিকে আর আগস্টে প্রথম সপ্তাহের দিকে আক্রান্তদের মধ্যে ৩০ জনেরও বেশি প্রবাসী রয়েছেন। স্বাস্থ্য সংশ্লিষ্টদের মতে, করোনার নমুনা পরীক্ষা‍য় মানুষের আগ্রহ অনেকটা কমে গেছে। নেহায়েত বাধ্য হয়ে যারা নমুনা পরীক্ষা করাচ্ছেন তাতেই শনাক্তের সংখ্যা বাড়ছে। এর কারণ হিসেবে করোনা পরীক্ষায় সরকারিভাবে ফি নির্ধারণ এবং মানুষের অচেতনতাকেই দায়ী করছেন তারা।

আক্রান্তদের মধ্যে তবে যারাই সুস্থ হচ্ছেন তাদের বিষয়ে স্বাস্থ্য সংশ্লিষ্টদের ধারণা, স্বাস্থ্য বিভাগের দিক থেকে রোগীদের সঠিক দিকনির্দেশনা দেওয়া, সার্বক্ষণিক ফলোআপ করা, আক্রান্তদের মধ্যে অধিকাংশের জটিল কোনো উপসর্গ না থাকা করোনা রোগীরা দ্রুত সেরে উঠছেন।

উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মোয়াজ্জেম আলী খান চৌধুরী বলেন, করোনায় আক্রান্ত অধিকাংশ রোগীর মধ্যে দেখা দেওয়া লক্ষণগুলো মৃদু। ফলে তাঁরা দ্রুত সেরে উঠছেন। শুরুতে করোনা রোগীর সেরে ওঠার হার কম থাকলেও এখন দ্রুত সেরে ওঠার হার বাড়ছে। তিনি বলেন, করোনা রোগীরা মনোবল দৃঢ় করে নিয়ম মেনে চললেই সুস্থ হয়ে উঠবেন। আক্রান্তদের জটিল কোনো উপসর্গ দেখা না দেয়ায় হোম আইসোলেশনে রেখে চিকিৎসা দেয়া সম্ভব হচ্ছে।

শনাক্তের হার কমে যাওয়ার বিষয়ে ডা. মোয়াজ্জেম আলী খান চৌধুরী বলেন, করোনা পরীক্ষায় নিজেদের অসচেতনতার জন্য মানুষের আগ্রহ আগের তুলনায় কিছুটা কমে গেছে। এখন যারাই পরীক্ষা করাচ্ছেন তাদের বেশিরভাগই করোনা আক্রান্তদের প্রত্যক্ষ সংস্পর্শে থাকা সন্দেহভাজন। তাছাড়া প্রথমদিকে মানুষ যেভাবে সচেতন ছিল, এখন সে তুলনায় মানুষের মধ্যে সচেতন থাকার প্রবণতাও কিছুতা কমে গেছে। তিনি আরও বলেন, অন্যান্য উপজেলার তুলনায় আমাদের এখানে মৃত্যুর হার এখন পর্যন্ত করোনা আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে তারা সকলেই পঞ্চাশোর্ধ। তাছাড়া নানা রোগেও আক্রান্ত ছিলেন।

রূপসী বাংলার চালকের ভুলে ভয়াবহ দুর্ঘটনা