দীর্ঘ প্রায় দেড় বছর বন্ধ থাকার পর আজ রোববার খুলেছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। সারা দেশের মতো বিয়ানীবাজারেও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রাঙ্গন আবারো মুখরীত হয়েছে শিক্ষার্থীদের কলবরে। যেন চিরচেনা পরিবেশে ফিরেছে প্রতিষ্ঠানগুলো। শিক্ষার্থীদের বরণ করতে প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে নানা আয়োজন গ্রুহন করা হয়। নেয়া হয় স্বাস্থ্যবিধির নিয়ম। নতুন এ নিয়মের মাধ্যমে চলছে পাঠদান কার্যক্রম।

করোনা ভাইরাসের প্রকোপের কারণে গত বছরের ১৮ মার্চ বন্ধ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেয়া হয়। শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্য ঝুঁকি বিবেচনায় এনে সরকারের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানালেও দীর্ঘ সময় বন্ধ থাকায় শিক্ষার্থী অভিভাবকসহ বিভিন্ন মহল থেকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলে দেয়ার আহবান জানান। অবশেষে করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসায় সরকার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলে দিয়েছে। এতে প্রায় দেড় বছর বন্ধ থাকার অবসান ঘটলো আজ ১২ সেপ্টেম্বর।

শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রবেশদ্বারে লাইন বেঁধে ঢুকছেন মাস্ক পরিহিত শিক্ষার্থীরা। থার্মোমিটার দিয়ে মাপা হচ্ছে তাদের শরীরের তাপমাত্রা। ক্লাসেও নেওয়া হলো স্বাস্থ্যবিধির বিধান। সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখেই ক্লাসে ফিরলেন শিক্ষার্থীরা।

করোনা সংক্রমন থেকে শিক্ষার্থীদের রক্ষা করতে স্বাস্থবিধি মেনে চলছে পাঠদান। নতুন এ নিয়ম-নির্দেশনা মেনে শিক্ষার্থীদের পাঠদান দেয়া হচ্ছে বলে জানান দায়িত্বশীলরা। সকাল থেকে বেশ কিছু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন করেন বিয়ানীবাজার পৌরসভার মেয়র আব্দুস শুকুর। এ সময় তিনি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রস্তুতি ও ব্যবস্থাপনা দেখে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেন।

পিএইচজি সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক আব্দুল হেকিম বলেন, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা মেনে সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে। আজ শিক্ষার্থীরা সামাজিক দুরত্ব বজায় রেখে বিদ্যালয়ে প্রবেশ করেছে। এ সময় শিক্ষকরা তাদের তাপমাত্রা পরীক্ষা করেছেন।

পাঠদান কার্যক্রম চললে শিক্ষামন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা মেনে। এতে স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় পাঠদান কার্যক্রমে এসেছে আমুল পরিবর্তন। পঞ্চম, অষ্টম ও এসএসসি পরীক্ষার্থীদের জন্য প্রতিদিন ক্লাস থাকলেও অন্য শ্রেণির জন্য সপ্তাহে একদিন করে পাঠদান কার্যক্রম নির্ধারণ করা হয়েছে।

বিয়ানীবাজার বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক অসীম কান্তি তালুকদার বলেন, পাঠদান কার্যক্রম চলাকালে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার পাশাপাশি শ্রেণি কক্ষে সামাজিক দুরত্ব বজায় রাখা হয়েছে। আশাকরি সুষ্ঠু পরিবেশে পাঠদান কার্যক্রম আমরা চালিয়ে যেতে পারবো। নতুন এ নিয়মে কোন সমস্যা হবে।

শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের আসার পর কোন শিক্ষার্থী হঠাৎ করে অসুস্থ হয়ে পড়লে প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়ার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। একই সাথে প্রত্যেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে একটি করে আইসোলেন কক্ষ প্রস্তুত রয়েছে। শিক্ষার্থীদের যেকোন ধরনের স্বাস্থ্য ঝুঁকি এড়াতে এ ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।

বিয়ানীবাজার কামিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মো. আব্দুল্লাহীল বাকী চৌধুরী বলেন, সরকার নির্দেশিত স্বাস্থ্যবিধি মেনেই মাদ্রাসা খোলা হয়েছে। যেসব শিক্ষার্থীর মাস্ক ছিল না তাদেরকে প্রতিষ্ঠান থেকে মাস্ক দেয়া হয়েছে।

উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মৌলুদুর রহমান বলেন, বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন করেছি। সব বিদ্যালয় নির্দেশনা মেনে পাঠদান কার্যক্রম চালু রাখছে। কোন শিক্ষার্থী অসুস্থ হলেও প্রাথমিক চিকিৎসার ব্যবস্থাসহ নির্দিষ্ট একটি কক্ষও প্রস্তুত রাখা হয়েছে।

বিয়ানীবাজার সরকারি কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ তারিকুল ইসলাম বলেন, প্রথম দিন হিসাবে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি কিছুটা কম। তবে সন্তোষজনক। আশাকরি এই পরিবেশে শিক্ষার্থীরা মানিয়ে নেব এবং আমরা সকল পরিস্থিতি মোকাবেলা করে সতর্কভাবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে পাঠদান কার্যক্রম চালিয়ে যাবো।

দীর্ঘদিনের নিরব নিস্তব্ধতা ভেঙ্গে মুখোর হয়ে উঠেছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। শিক্ষার্থীদের মুখরতায় যেন প্রাণ ফিরে পেয়েছে সবুজ ক্যাম্পাসগুলো। দীর্ঘ সময় কলেজে ছাত্র সংগঠনগুলোর তৎপরতা ছিল চোখে পড়ার মতো। সবারই প্রত্যাশা সুস্থ ও স্বাভাবিক সময়ের মতো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো কোমলমতি শিক্ষার্থীদের পদভারে সজীব থাকুক।