প্রায় ১ বছরের কাছাকাছি সময় পেরিয়ে বিয়ানীবাজার পৌরশহরে ফিরে এসেছেন মৎস্য ব্যবসায়ীরা। ফের শুরু হয়েছে মাছবাজার। পৌরশহরের মোরগগলির পূর্বপাশে ব্যক্তি মালিকাধীন জায়গা ভাড়া নিয়ে পৌর কর্তৃপক্ষ সেখানে বাজারের স্থান নির্ধারণ করে দেয়। ফলশ্রুতিতে বৃহস্পতিবার সকাল ১১টায় আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রারাম্ভ করে মাছবাজার।

বিয়ানীবাজার উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আবুল কাশেম পল্লব, পৌর মেয়র মোঃ আব্দুস শুকুর, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কাজী আরিফুর রহমানের ঐকান্তিক প্রচেষ্ঠায় এ সংকট নিরসন হয়। নিশ্চয়ই এরকম একটি জটিল পরিস্থিতি সুন্দর প্রক্রিয়ায় নিয়ে আসতে তাদের প্রচুর শ্রম, ঘাম ও সময় নষ্ট হয়েছে। এজন্য তাদেরকে অশেষ ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা। পাশাপাশি ধন্যবাদ জানাই মৎস্য ব্যবসায়ীদের যারা এ প্রক্রিয়াকে সহজতর করতে সহযোগিতা করেছেন। একই সঙ্গে ধিক্কার জানাই সেইসব স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠিকে যারা এ সংকট তৈরি করে সাধারণ মানুষকে ভোগান্তিতে রেখেছিল দীর্ঘদিন।

মাছবাজার নিয়ে দীর্ঘ জটিলতার অবসান নিঃসন্দেহে আমাদের তথা এতদ্বঞ্চলের সকল শ্রেণিপেশার মানুষের স্বস্থিদায়ক এবং আশাজাগানিয়া বার্তা। আশা করি মৎস্য ব্যবসায়ীদের অন্যান্য দাবিগুলো পূরণে সর্বাত্মক চেষ্ঠা চালিয়ে যাবেন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।

মাছবাজার সংকট নিয়ে একটু পেছনে যদি খেয়াল করি তবে দেখতে পাই, সৃষ্ঠ এ সংকট সমাধানের চেয়ে জটিলতা তৈরী করতে কতিপয় কুচক্রি মহল পর্দার অন্তরালে থেকে নানা কূটকৌশল এবং অপরাজনীতি করেছেন। কেবল বাহিরে থেকে নয় ক্ষমতাসীন রাজনীতির অনেকেই এই মাছবাজার নিয়েও নানা কূটকৌশল করেছেন। এসব মুখোশধারী ব্যক্তি বিশেষ সমাজের সবখানে সবসময় বিচরণ করে থাকে। আমরা যারা সামাজিক এবং রাজনীতি সচেতন তাদের সামনে এসব মুখোশধারীদের চেহারা অনেকখানি দৃশ্যতঃ। যারা এ জটিলতাকে পুঁজি করে নিজেদের স্বার্থে রাজনীতি করে ফায়দা নিতে চেয়েছেন তাদের বিরুদ্ধে সজাগ থাকতে হবে। পাশাপাশি যাদের কারণে দীর্ঘদিন থেকে চরম ভোগান্তিতে ছিলেন এ অঞ্চলের মানুষ, সেইসব ব্যক্তি বিশেষের মুখোশ উন্মোচন খুবই জরুরী।

একটি কথা অবশ্য বলে রাখা দরকার, সাবেক পৌর প্রশাসক তফজ্জুল হোসেন এই দায় কিছুতেই এড়াতে পারেন না। যদিও তার সময়ে কিচেন মার্কেট স্থাপন ছিল যুগান্তকারি পদক্ষেপ তথাপি এ মার্কেট নির্মাণের নকশা ছিল অপরিকল্পিত। যার খেসারত দিতে হচ্ছে পুরো বিয়ানীবাজারবাসীকে। ভবিষ্যতে এ ধরনের স্থাপনা নির্মাণে কর্তৃপক্ষকে আরোও সচেতন ও দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিতে হবে।

পৌরশহর পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার জন্য রাস্তার পাশ থেকে সবজি ও মাছবাজার অন্যত্র সরিয়ে নেয়ার দাবি ছিল সকল সচেতন মহলের। মূলত এ যৌক্তিক দাবি বাস্তবায়নের ফলেই দেখা দেয় সংকট। যে সংকট নিরসন করতে গিয়ে আমাদেরকে দীর্ঘ ১ বছরের কাছাকাছি সময় দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে। ভবিষ্যতে আমাদের জীবনযাত্রায় প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হোক এরকম কোনো সংকট, কোনো রকমের জটিলতা আমরা চাই না। আমরা চাই সুন্দর, সমৃদ্ধ ও সোহার্দ্যপূর্ণ একটি বিয়ানীবাজার। সকলের সমন্বিত প্রচেষ্টায় এগিয়ে যাক হাজার বছরের ঐতিহ্যের লালিত ভূমি আমাদের এই জনপদ। জয় হোক সত্য ও সুন্দরের, জয় হোক সম্প্রীতির।

লেখক- নির্বাহী সম্পাদক, বিয়ানীবাজার নিউজ২৪।