প্রবাসী অধ্যুষিত বিয়ানীবাজার উপজেলাজুড়ে বেড়েছে হিজড়াদের উৎপাত। তবে পৌরশহরজুড়ে এদের উৎপাতের মাত্রাটা যে লাগামহীন হয়ে দাঁড়িয়েছে। রাস্তায় চাঁদাবাজির পাশাপাশি পৌরশহরের বিভিন্ন বিপনী বিতান ও ব্যবসায়ীক প্রতিষ্ঠান, প্রশিক্ষণ কেন্দ্র, দোকানপাট, এমনকি স্থানীয় পত্রিকা অফিসগুলোতেও হানা দিচ্ছে হিজড়ারা। তবে এ নিয়ে মোটেও মাথাব্যথা নেই পুলিশ প্রশাসনের।

জানা গেছে, বিয়ানীবাজার পৌরশহরের বিভিন্ন এলাকায় হিজড়াদের কবলে পড়ে প্রতিদিন সর্বস্বান্ত আর অপমানিত হচ্ছেন অনেকে। এমন অবস্থায় বিয়ানীবাজারবাসী অতিষ্ঠ এবং কোমলমতি শিশু-কিশোরসহ সাধারণ মানুষরা আতঙ্কিত। হিজড়ারা কয়েকটি দলে ভাগ হয়ে রাস্তার পাশে বসে থাকে। বিশেষ করে বিয়ানীবাজার পৌরশহর ও এলাকায় তাদের উৎপাত খুব বেশি। এদের টার্গেট বেশি থাকে বিয়ে বাড়ি এবং বরযাত্রী বহনকারী গাড়িগুলোতে। বিয়ের গাড়িবহর দেখলেই হিজড়ারা দলবেঁধে পথ আগলে রেখে বড় অংকের চাঁদা দাবি করে বসে। চাহিদামতো টাকা না দিলে হিজড়ারা চটে যায় এবং অনেক সময় অশ্লীল অঙ্গভঙ্গি করে পরণের কাপড় খুলে ফেলে।  এত চরম বিব্রতকর অবস্থায় পড়েন বর ও বরযাত্রী নারী-পুরুষরা।

এমন একটি ঘটনা গতকাল সোমবার বিয়ানীবাজার পৌরশহরের মধ্যবাজারে ঘটেছে। ওইদিন দুপুরে বরযাত্রী বহনকারী একটি বিয়ে গাড়ি আটকে চাঁদা দাবি করে একদল হিজড়া। এসময় বরযাত্রী পক্ষের লোকজন টাকা দিতে না চাইলে হিজড়াদের অশ্লীল আচরণে হতভম্ব হয়ে পড়েন তারা। পরে  উপায়ন্তর না পেয়ে মান-ইজ্জতের ভয়ে বরপক্ষের লোকজন হিজড়াদের দাবি করা টাকা দিয়েই ছাড় পেয়েছেন বলে জানা গেছে। এভাবেই প্রতিনিয়ত সম্মানহানির ভয়ে অসহায় হয়ে হিজড়াদের চাহিদামতো চাঁদা দিয়েই গন্তব্যে যেতে হচ্ছে বরযাত্রীদের।

সম্প্রতি বিয়ানীবাজার উপজেলার বিভিন্ন বাড়ি-ঘরে গিয়েও হানা দিচ্ছে হিজড়ারা। বাড়ি বাড়ি গিয়ে মানুষের দরজায় দাঁড়িয়ে ৫-১০ কেজি পর্যন্ত চাল দাবি করে বসে তারা।  কেউ দিতে অস্বীকৃতি জানালে তাদের বাচ্চাদের জিম্মি করে চাল বা টাকা আদায় করে হিজড়ারা। এতে চরম আতঙ্কে আছেন মানুষজন। হিজড়াদের হাত থেকে রেহাই পাচ্ছে না শিশু-কিশোর, নারী-পুরুষ কেউই। টাকা না দিলে মারমুখী হয়ে উঠেছে হিজড়ারা। ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে হিজড়ারা বিভিন্ন জিনিসপত্র ছিনিয়ে নিচ্ছে জোর করে । না দিলে ব্যবসায়ীদের ওপর হামলা করছে তারা। এমন ভয়ঙ্কর অবস্থায়ও পুলিশ নিরব রয়েছে।

এদিকে, পৌরশহরের মধ্যবাজারের প্রধান সড়কের ফুটপাথে শীতকালীন পিঠা, হরেক রকমের চাটনী ও চানা-পেয়াজুর  ভ্রাম্যমাণ ব্যবসা রয়েছে হিজড়াদের। মাস খানেক পূর্বে ফুটপাথ থেকে অবৈধ হকারদের উচ্ছেদ অভিযান পরিচালিত হলে সেখানে অনাকাঙ্ক্ষিত একটি আচরণের সম্মুখীন হতে হয়েছে পৌর প্রশাসনকে। একজন হিজড়া সেদিন প্রকাশ্যে বেহায়াপনায় উপস্থিত পৌর প্রশাসনসহ মানুষজন লজ্জায় পড়ে যান। তবে উপজেলার সচেতন মহলের দাবি, হিজড়াদের পুনর্বাসনে সরকারের উদ্যোগে নেয়া প্রয়োজন।

এ ব্যাপারে জানতে বিয়ানীবাজার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হিল্লোল রায় বলেন,  হিজড়া কর্তৃক চাঁদা দাবির বিষয়ে আমাদের কাছে কেউ অভিযোগ করেনি। অভিযোগ দিলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

মুড়িয়া হাওর উন্নয়ন প্রকল্পের দাবি বিয়ানীবাজারের কৃষকদের