বিয়ানীবাজারের চারখাই ইউনিয়নের একটি বিদ্যালয়ের নির্মানাধীন ভবন সংযুক্ত শৌচাগারের ট্যাংকে পড়ে সামির হোসেন (৯) নামে এক বাঁক শিশুর মৃত্যু হয়েছে। বৃহস্পতিবার বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টার দিকে লাংলাকোনা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে এ দুর্ঘটনা ঘ‌টে। নিহত শিশু সামির হোসেন উপজেলার চারখাই ইউ‌নিয়‌নের দত্তগ্রা‌মের অটোরিকশা চালক গৌছ উদ্দিনের ছেলে।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, সামির হোসেন নামের ওই শিশুটি জন্মগতভাবেই বাঁক প্রতিবন্ধী। শিশুটির প্রায়শই বাড়ির আশপাশে ঘুরে বেড়ায়। প্রতিদিনের ন্যায় বৃহস্পতিবার দুপুরবেলা সে লাংলাকোনা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দিকে ঘুরতে বের হয়। সেই বিদ্যালয়ের নির্মানাধীন ভবনের কাজ দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ থাকায় গ্রামীণ রাস্তা সংলগ্ন শৌচাগারের নির্মানাধীন ট্যাংক অরক্ষিত অবস্থায় পড়ে আছে। তাছাড়া বৃষ্টির পানি জমে সেই ট্যাংকের উপরিভাগে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়ে বিপদজনক হয়ে উঠেছে। গ্রামের রাস্তা সংলগ্ন শৌচাগারের সেই ট্যাংকে ঘুরতে গিয়ে অসাবধানতাবশত খেলার ছলে ট্যাংকের মধ্যে পড়ে ডুবে যায় শিশু সামির হোসেন। পরে শিশুটির মরদেহ পানির উপরে ভেসে উঠলে পথচারীরা প্রথমে দেখতে পান এবং পুলিশ ও জনপ্রতিনিধিদেরকে বিষয়টি অবগত করেন। পরে খবর পেয়ে চারখাই ইউপি চেয়ারম্যান মাহমুদ আলী, চারখাই পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ এসআই ফয়সল আহমদ ও এসআই নূর নবী ঘটনাস্থলে পৌছে লাশটি উদ্ধার করেন।

জানা গেছে, নিহত শিশু সামির হোসেনের বাবা গৌছ উদ্দিন ও তার পরিবারের অনুরোধে প্রেক্ষিতে লাশটি ময়নাতদন্ত ছাড়াই বৃহস্পতিবার বিকাল ৫টায় জানাজার নামাজ শেষে স্থানীয় গোরস্থানে দাফন করা হয়।

বিয়ানীবাজার থানার ওসি হিল্লোল রায় শিশুটির মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করে বলেন, নিহত শিশুটির পরিবার কোন অভিযোগ দায়ের করেনি। পরে শিশুটির বাবার অনুরোধে ময়নাতদন্ত ছাড়াই লাশ তাদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।

এলাকাবাসীর অভিযোগ, লাংলাকোনা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নতুন ভবনের নির্মানকাজ দীর্ঘদিন পূর্বে সম্পন্ন হলেও ভবন সংযুক্ত শৌচাগারের কাজ বন্ধ রয়েছে। ফলে শৌচাগারের নির্মা্নাধীন ট্যাংকের উপরিভাগের অংশে বৃষ্টির পানি জমে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হওয়ায় ট্যাংকটি দিন দিন বিপদজনক হয়ে উঠেছে। তাছাড়া ট্যাংকের পাশ ঘেঁষা গ্রামীণ রাস্তা দিয়ে প্রতিদিন লোকজন যাতায়াত করার করার কারণে স্থানটিতে আরও দূর্ঘটনার আশংকা করছেন এলাকাবাসী। আগামীতে যাতে ওই স্থানে আর কোন দূর্ঘটনা না ঘটে সেজন্য স্কুলভবনের নির্মানাধীন শৌচাগারের ট্যাংকটির নির্মাণ কাজ সম্পন্ন করতে সংশ্লিষ্টদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন।

এ ব্যাপারে বিয়ানীবাজার উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসের সহকারি অফিসার মো. আশরাফুল ইসলাম বলেন, বিষয়টি খুবই দুঃখজনক। বাঁক প্রতিবন্ধী শিশুটির মৃত্যুতে আমরা শোকাহত। স্কুলের শৌচাগারের অরক্ষিত ট্যাংকের নির্মাণ কাজ দ্রুত শেষ করতে জনস্বার্থ প্রকৌশলী অনুরোধ করা হয়েছে।

এদিকে, স্কুলের শৌচাগারের অরক্ষিত ট্যাংকে শিশুর মৃত্যুর খবর পেয়ে নিহত শিশুটির বাড়িতে ছুটে যান বিয়ানীবাজার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আশিক নূর। তিনি নিহত শিশুটির বাড়িতে গিয়ে তার পরিবারের সাথে দেখা করেন এবং তাদেরকে স্বান্তনা জানান। এসময় তিনি নিহতের পরিবারকে নগদ ২০ হাজার টাকার আর্থিক সহায়তা প্রদান করেছেন।

ইউএনও মো. আশিক নূর বলেন, নির্মাণ চলাকালে শৌচাগারের ট্যাংকের মুখে বৃষ্টির পানি জমে জলাবদ্ধতা তৈরি হয়েছে। সে কারণে অসাবধানতাবশ্ত শিশুটি সেখানে পড়ে যায়। বিদ্যালয়ের নির্মানাধীন শৌচাগারের অরক্ষিত ট্যাংকের নির্মাণ কাজ কবে শেষ হবে মুঠোফোনে প্রতিবেদকের এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আগামী দুই থেকে তিন দিনের মধ্যে শৌচাগারের নির্মাণকাজ শেষ করতে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দিয়েছি।

বিয়ানীবাজারে এনসিডি মডেল কর্নার স্থাপনের সফলতা, সেবা নিচ্ছেন ৬ সহস্রাধিক কার্ডধারী রোগী