বিয়ানীবাজারে রাসায়নিক সারের বিকল্প হিসেবে কেঁচো সারের (ভার্মি কম্পোস্ট) দিকে ঝুঁকে পড়েছেন কৃষকরা। চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদন শুরু হয়েছে। কেঁচো সার ব্যবহারে কৃষকদের ইতিবাচক সাড়া মিলছে বলে জানিয়েছে উপজেলা কৃষি বিভাগ।

উপজেলার দুবাগ ইউনিয়নের দুবাগ গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, ওই গ্রামের কৃষাণী পারুল বেগম স্থানীয় কৃষি বিভাগের সহযোগিতায় বাণিজ্যিকভাবে কেঁচো সার উৎপাদন করছেন। বর্তমানে আশেপাশের কৃষকরা ফসল উৎপাদনে রাসায়নিক সার ব্যবহার কমিয়ে দিয়েছেন। বিকল্প হিসেবে কেঁচো সার ব্যবহার করছেন। তার উৎপাদিত জৈব সার এখন বিক্রি হচ্ছে অন্য কৃষকদের কাছে। কৃষি অফিসের সার্বিক সহযোগিতা নিয়ে উপজেলার বিভিন্ন কৃষকদের কাছে সার এবং কোঁচো বিক্রি করে বারতি আয়ের সুযোগ হয়েছে।

পারুল বেগম বলেন, প্রথমে ৬টি রিং দিয়ে উৎপাদন শুরু করলেও পরে চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় আরো ৬টি রিং য়ুক্ত করেছি। কয়েক দিন আগে ২১০ কেজি সার ও ৭হাজার টাকার কোঁচো বিক্রি করেছেন তিনি।

শেওলা ইউনিয়নের ঢেউনগরের স্নাতকউত্তর উত্তীর্ণ যুবক আব্দুর রব জানান, সবজি চাষে ব্যবহারে সফলতা এবং উৎপাদন প্রক্রিয়া সহজ হওয়ায় প্রশিক্ষণ নিয়ে কেঁচো সার উৎপাদনের উদ্যোগ নিয়েছি। আবর্জনা, গোবর ও কচুরিপানা মিশিয়ে বস্তায় ভরে ১০ থেকে ১৫ দিন রাখতে হয়। পরে বস্তা থেকে বের করে সিমেন্টের রিং স্লাবে রেখে সেখানে কেঁচো ছেড়ে দেওয়া হয়। এভাবেই কয়েক দিন পর ভার্মি কম্পোস্ট তৈরি হয়ে যায়। ভার্মি কম্পোস্টের ভালো বাজার তৈরি করা সম্ভব মনে করেন তিনি।

উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা যায়, কয়েক বছর আগেও উপজেলার কৃষকরা ফসল উৎপাদনে রাসায়নিক সারের উপর নির্ভরশীল ছিলেন। কিন্তু সচেতনতা বৃদ্ধি পাওয়ায় রাসায়নিক সার ছেড়ে কেঁচো সারের দিকে ঝুঁকে পড়েছেন তারা। কেঁচো সার ব্যবহারে সফলতা পেয়েছেন কৃষকরা। কেঁচো সার মাটির জৈবশক্তি বৃদ্ধি করে। ফসলে পানি সেচ কম লাগে, তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখে। ফসল উৎপাদনে কৃষকের চাষ খরচ অনেক কম হয়। ফসলের ফলন বৃদ্ধিসহ পুষ্টিগুণ বৃদ্ধি করে।

বাজারে কেঁচো সারের চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় অনেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে উৎপাদনে নেমেছে। এ ক্ষেত্রে নারীরাও পিছিয়ে নেই। কৃষকরা কেঁচো সার দিয়ে ফসল উৎপাদন করে লাভবান হচ্ছেন। রাসায়নিক সার ছাড়াই ফুলকপি, বাঁধাকপি, লাউ ও টমেটোসহ বিভিন্ন ফসল উৎপাদন করছেন কৃষকরা।

উপজেলার কৃষি কর্মকর্তা মো. আনিছুজ্জামান বলেন, রাসায়নিক সারের চেয়ে তুলনামূলক খরচ কম এবং জমির জন্য অতন্ত উপকারী হওয়ায় জৈব সার উৎপাদনে কৃষকদের নানা ভাবে উৎসাহিত করা হচ্ছে। এর প্রস্তুত প্রণালীও তুলনামূলক সহজ। এই কম্পোস্ট ব্যবহারে জমির উর্বরতা শক্তি বৃদ্ধি পায়। মাটির স্বাস্থ্য সংরক্ষণে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে। ফসলের উৎপাদন বৃদ্ধি করে, গুনগত মান বাড়ায় এবং গুদামজাত শস্যের সংরক্ষণ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। চলতি বছরেরে স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত এই সার পঞ্চখ- ভার্মি কম্পোষ্ট নামে বাজারজাত করন করার সবধরনের পক্রিয়া সম্পন্ন করা হয়েছে।

পঞ্চখন্ডের নামে জৈব সার বাজারজাত করবেন বিয়ানীবাজারের কৃষকরা