বিয়ানীবাজার পৌরসভা ও মোল্লাপুর ইউনিয়নের লাসাইতলা এলাকার ওপর দিয়ে বয়ে গেছে বাবুর খাল। দীর্ঘদিন ধরে স্থানীয় এলাকার কৃষকেরা সেচের সুবিধার জন্য এই খালটি ব্যবহার করে আসছেন। এখন সেচকাজের জন্য খুব একটা ব্যবহার না হলেও পানি নিষ্কাশনের একমাত্র পথ এই খালটি। সম্প্রতি এই খাল দখল করে সাইদুল ইসলাম নামে এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে অবৈধভাবে স্থাপনা নির্মাণের অভিযোগ উঠেছে। এ নিয়ে ভুক্তভোগী স্থানীয় এলাকাবাসী প্রতিবাদ ও সড়ক অবরোধে স্থাপনা নির্মাণে বাঁধা দিলে প্রশাসনের দায়িত্বশীলরা নির্মাণ কাজ বন্ধ করার নির্দেশ দেন।

জানা গেছে, মঙ্গলবার (২ ফেফ্রুয়ারি) সকাল ১১টায় পৌরসভাসহ ভুক্তভোগী তিন ইউনিয়নের বাসিন্দারা বিয়ানীবাজার-চন্দরপুর সড়ক অবরোধ করে প্রতিবাদ জানান। এসময় বিয়ানীবাজার উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা আতাউর রহমান খান প্রতিবাদী জনতাকে বিষয়টি দেখে দেয়ার আশ্বাস দিলে তারা অবরোধ তুলে নেন। পরে বিক্ষুব্ধ জনতা বিষয়টি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মৌসুমী মাহবুব, পৌরসভার মেয়র মো. আব্দুস শুকুর ও বিয়ানীবাজার থানার ওসি হিল্লোল রায়কে বিষয়টি অবহিত করেন। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নির্দেশে সহকারী কমিশনার (ভূমি) মুশফিকুন নূরের নেতৃত্বে উপজেলা প্রশাসন ঘটনাস্থলে আসে। এসময় পৌর প্রশাসন ও থানা পুলিশের উপস্থিতিতে সরকারি ও ব্যক্তি মালিকানাধীন জমির সীমানা নির্ধারণ না হওয়া পর্যন্ত সাইদুল ইসলাম নির্মাণ কাজ বন্ধ রাখার নির্দেশ দেন। এর আগে সরকারি জমির স্থান চিহ্নিত করার জন্য প্রশাসনের দায়িত্বশীলদের উপস্থিতিতে সেখানে লাল পতাকা টানানো হয়।

এসময় উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা আতাউর রহমান খান বলেন, সরকারি খাল দখল করে পানি নিষ্কাশনের পথ বাঁধাগ্রস্থ করায় আশপাশের কয়েক গ্রামের বাসিন্দারা প্রতিবাদ জানান এবং সড়ক অবরোধ করেন। আমি খবর পেয়ে সেখানে গিয়ে তাদের বুঝিয়ে অবরোধ তুলে নিতে বললে তারা অবরোধ প্রত্যাহার করে নেন। তিনি বলেন, বর্তমান সরকার খাসজমি ও খাল পুনরুদ্ধার করতে সবর্ত্র অভিযান চালাচ্ছে। বিয়ানীবাজারেও সরকারি খাল দখল করে কেউ পানি নিষ্কাশন ও সেচের সুবিধার পথ বাঁধাগ্রস্থ করতে পারবে না।

সরেজমিনে গিয়ে জানা গেছে, লাসাইতলা এলাকার বিয়ানীবাজার-চন্দরপুর সড়ক সংলগ্ন বাবুর খালটির মধ্যভাগে প্রায় ৫ ফুট পর্যন্ত কংক্রিটের পিলার ও ঢালাই করে ড্রেন নির্মাণ করা হয়েছে। ঢালাইয়ের কাজের জন্য পিলারের ওপরে রড বসানো এবং ওই স্থানে দেয়াল তৈরি করা হয়েছে। এছাড়া খালের দুই পাড়ের অংশে মাটিও ভরাট করা হয়েছে। এসব স্থাপনা নির্মাণের জন্য খালের প্রায় ১০০ ফুট জায়গা দখল করা হয়েছে। তবে খালটি পৌরসভা অংশে থাকায় দু’দিন পূর্বে বিয়ানীবাজার পৌর প্রশাসন স্থাপনা নির্মাণ কাজ বন্ধ রাখার নির্দেশ দিলেও অভিযুক্ত ব্যক্তি সেটা অমান্য করে নির্মান কাজ অব্যহাত রেখেছেন।

 

আন্দোলনরতদের মধ্যে জমির উদ্দিন, আব্দুল ফাত্তাহ বকশি, আজাদ উদ্দিন, আলমগীর হোসেন রুনু, ছফর উদ্দিন, আব্দুর রাজ্জাক, জিয়াউর রহমান, জসিম উদ্দিনসহ আরও কয়েকজন স্থানীয় বাসিন্দা জানান, আশপাশের কয়েক গ্রামের পানি নিষ্কাশনের একমাত্র পথ খালটি। দখলের কারণে এটি অনেকটাই ছোট হয়ে এসেছে। এর মধ্যে ছাইদুল ইসলাম খালের ওপর পাকা ড্রেন নির্মাণ করছেন। ফলে বর্ষা মৌসমে পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা ব্যাহত হবে। সরকারি খাল এভাবে দখল হলেও প্রশাসনের নজরদারি নেই। তারা প্রভাবশালী হওয়ার কারণে কেউ তাদের কাজে বাধা দিতেও সাহস পাচ্ছেন না। তাই বাধ্য হয়ে আমরা ভুক্তভোগীরা আন্দোলনে নেমেছি। এরই প্রেক্ষিতে স্থানীয় প্রশাসন ড্রেন উচ্ছেদে তাদের প্রয়োজনীয় আইনী কার্যক্রম শুরু করায় আমরা সন্তুষ্ট হয়েছি।

স্থানীয়দের অভিযোগ, প্রসাশনের নির্লিপ্ততায় দীর্ঘদিন ধরে প্রভাবশালীরা দখল করায় বাবুর খালটি এখন মরা খালে পরিণত হয়েছে। তাই খালের দুই পাড়ের অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করে খালটি খনন করে খালের নাব্যতা ফিরিয়ে আনার দাবি জানান তারা।

এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মৌসুমী মাহবুব ‘বিয়ানীবাজার নিউজ২৪’কে বলেন, খাল বা জলাধার বন্ধ করে কোনো স্থাপনা নির্মাণ করা যাবে না। তাছাড়া প্রবাহমান খাল ভরাট করে পানি প্রবাহ আটকানো অবৈধ। তিনি বলেন, স্থানীয় এলাকাবাসীর অভিযোগের প্রেক্ষিতে আমি বিষয়টি সরেজমিনে পরিদর্শন করে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য এসিল্যাণ্ড ও সার্ভেয়ার টিমকে নির্দেশনা দিয়েছি। তারা সেখানে সরেজমিনে গিয়ে বিষয়টি দেখেছে এবং ওই খা্টিল সরকারি না ব্যক্তি মালিকানাধীন সেটা নির্ধারণ না হওয়া পর্যন্ত স্থাপনা নির্মাণ বন্ধ করার নির্দেশ দিয়েছে। তিনি বলেন, এরপরও যদি অভিযুক্তরা স্থাপনা নির্মাণ কাজ বন্ধ না করে তাহলে তাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় আইনী ব্যবস্থা নেয়া হবে।

শখের বসে সবজি চাষ, বিয়ানীবাজারের ৯ তরুণের সাফল্য