সোয়া চার কিলোমিটার সড়ক সংস্কারে খরচ হয়েছে সোয়া চার কোটি টাকা। মাস সাতেকের মতো হলো এই কাজ শেষ হয়েছে। স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) কাজ বুঝে নিয়ে ঠিকাদারের সব পাওনাও ইতোমধ্যে পরিশোধ করেছে। কিন্তু সড়কটির ১০/১২টি স্থানে গর্ত, ফাটল এবং পাশ ভেঙে পার্শ্ববর্তী খালে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। এ ছাড়া সড়কের বিভিন্ন অংশে খোয়া উঠে যত্রতত্র ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে। এমন অবস্থায় টানা দুই মাস পাড়ি দিলেও সড়কটি রক্ষায় এখনো উদ্যোগ নেয়নি স্থানীয় এলজিইডি অফিস। বলছিলাম বিয়ানীবাজার উপজেলার বিয়ানীবাজার-চন্দরপুর সড়কের কথা।

সোয়া চার কিলোমিটার অংশের সংস্কার কাজ শেষ হওয়ার পাঁচ মাসের মাথায় সড়কের ১০/১২টি স্থানে গর্ত, ফাটল এবং পাশ ভেঙে পার্শ্ববর্তী খালে বিলীন হতে শুরু করে। এ ছাড়া সড়কের বিভিন্ন অংশে খোয়া উঠে যত্রতত্র ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে। আর এই সড়কটিই গত ৮ জুন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য, সিলেট-৬ (গোলাপগঞ্জ-বিয়ানীবাজার) আসনের সাংসদ নুরুল ইসলাম নাহিদ এ সড়কের সংস্কার কাজের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন। সড়কটির এমন অবস্থা গত দুই মাস ধরে বিরাজ করলেও ধসে যাওয়া অংশ সংস্কারে কোন উদ্যোগ গ্রহণ করেনি স্থানীয় এলজিইডি অফিস। আর এ নিয়ে স্থানীয়রা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। গত ৯ আগস্ট ‘বিয়ানীবাজারে সোয়া চার কোটি টাকার সড়ক পাঁচ মাসেই শেষ!’   শিরোনামে বিয়ানীবাজার নিউজ২৪ ডটকমে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হওয়ার পরও সড়কটি সংস্কারে বেখেয়াল স্থানীয় প্রকৌশল অফিস।

এলাকাবাসীর অভিযোগ, সড়কের সংস্কার কাজের দায়িত্বে থাকার ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটি সাব কন্ট্রাক্টর দিয়ে সংস্কার কাজ করিয়েছে। উপজেলা প্রকৌশল অফিসের কর্মকর্তাদের দায়িত্বে খাময়েখালিপনা ও অবহেলার সুযোগে রাস্তার সংস্কার কাজে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার করেছে। নিম্নমানের নির্মাণসামগ্রী দিয়ে সংস্কার কাজ চালিয়ে যাওয়ায় এলাকাবাসী উপজেলা প্রকৌশল অফিসকে বিষয়টি একাধিকবার অবহিত করলেও উপজেলা প্রকৌশল অফিস থেকে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি। যার কারণে সংস্কার কাজ শেষ হবার পাঁচ মাসের মধ্যে রাস্তার বিভিন্ন স্থানে গর্ত, ফাটল ও পাশ ভেঙ্গে পার্শ্ববর্তী খালে বিলীন হয়ে গেছে। কিন্তু অজানা কারণে গত দুই মাস ধরে সড়কটির এমন অবস্থার সমাধানে কোন প্রদক্ষেপও গ্রহণ করেনি এলজিইডি অফিসের দায়িত্বশীলরা।

উপজেলা প্রকৌশল অফিস সূত্রে জানা গেছে, ২০১৯ সালের জুলাই মাসে সোয়া ৪ কোটি টাকায় বিয়ানীবাজার-চন্দরপুর সড়কের প্রথম চার কিলোমিটারের বেশি অংশ সংস্কারের জন্য স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের প্রকৌশল বিভাগ মেসার্স রাশিদুজ্জামান পিটার নামের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে নিয়োগ করে। ওই বছরের অক্টোবরে সড়ক সংস্কার কাজ শুরু হয়। সড়কের এক কিলোমিটার অংশের মেকাডম শেষ করতে সময় লেগেছে ছয় মাস। গত বছরের মার্চে করোনার প্রাদুর্ভাব দেখা দেওয়ায় সংস্কার কাজ বন্ধ হয়ে যায়। সংস্কার কাজের মেয়াদ বৃদ্ধির পর চলতি বছরের জানুয়ারিতে এসে রাস্তাটির সংস্কার কাজ শেষ হয়

মাহবুব হোসেন নামে এক পথচারী বলেন, সংস্কার কাজ শেষ হবার এতো অল্প দিনে যদি একটি সড়ক যদি ভেঙে যায় তাহলে সহজে অনুমান করা যায় এখানে কী পরিমাণ অনিয়ম ও দুর্নীতি হয়েছে। তিনি বলেন, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সংশ্নিষ্ট দপ্তরের কর্মকর্তারা জড়িত না থাকলে এত নিম্নমানের কাজ হওয়ার কথা না।

আবিদুল ইসলাম নামে আরেকজন বলেন, দীর্ঘ ভোগান্তির পর এই সড়কটি সংস্কার করা হয়েছে। কিন্তু প্রকৌশল অফিসের উদাসীনতা ও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের অনিয়মের কারণে বার বার আমাদেরকেই দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। স্থানীয় যুবক ছাদিকুর রহমান জানান, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অবহেলায় এত কম সময়ের মধ্যে সড়ক ভেঙে যাবে কিংবা গর্ত ও ফাটল হবে- সেটা আমরা ভুক্তভোগীরা চিন্তাই করতে পারেনি। তিনি সড়কটির ক্ষতিগ্রস্ত অংশ পুনঃসংস্কারের জন্য তিনি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সুদৃষ্টি কামনা করেছেন।

এদিকে, গত দুই মাস ধরে সড়কটি ভেঙ্গে পার্শ্ববর্তী খালে বিলীন হয়ে যাবার খবর জানেন না বিয়ানীবাজার উপজেলা প্রকৌশল অফিসের প্রকৌশলী মো. হাসানুজ্জামান। তিনি বলেন, আমরা সড়কের ধস নামা ঠেকাতে বেড়া দিয়েছিলাম। পুনরায় সড়ক ভেঙ্গে যাবার খবর আমা জানা নেই। রোববার সরেজমিনে পরিদর্শন করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করবো।