চলছে ভাদ্র মাস। আমন ধানের চারা রোপনের ধুম পড়েছে বিয়ানীবাজারে। ধানের মৌসুমগুলোর মধ্যে এ উপজেলায় আমন আবাদ শীর্ষে। দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে বোরো এবং তৃতীয় আউশ। এবছরও আশা করা যাচ্ছে আমন আবাদ এলাকা ৯০০০হেঃ অতিক্রম করবে। মৌসুমটি প্রায় শতভাগ বৃষ্টিনির্ভর হওয়ায় অনুকূল আবহাওয়া ও জমির জো-অবস্থা আবাদকে আরও ত্বরান্বিত করছে। পাহাড়ী ঢল ও বন্যার আশংকা সব সময়ই তাড়া করে এ এলাকার ধান চাষীদের। আবহাওয়ার পরিস্থিতি ভালো এবং বন্যার আগাম সতর্কতা বিশ্লেষন করে আশা করা যায় আমন আবাদ নির্বিঘ্নেই হবে। তারপরও আশংকা থেকে যায় কৃষক তাদের কষ্টার্জিত ফসল শেষ পর্যন্ত ভালোয় ভালোয় ঘরে তুলতে পারবে তো? কেননা বর্তমান কৃষি প্রতিনিয়তই বিভিন্ন চ্যালেঞ্জের সম্মূখীন। রোগ বালাইয়ের প্রাদুর্ভাব কৃষকের হাসিকে ম্লান করে দিতে পারে যেকোনো সময়। তাই আমাদের প্রস্তুতি নিতে হবে আগে ভাগেই। এ এলাকার আমন ফসলের সবচেয়ে সংবেদনশীল ক্ষতিকারক পোকা পামরি পোকা। স্থানীয়ভাবে এ এলাকার কৃষকগন লোহাঝুরি পোকা বলে থাকেন। এ পোকার আক্রমনে ফসল ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হতে পারে। তাই জানতে হবে এখনই———– এ পোকার সবকিছু।

পোকার পরিচিতিঃ
পূর্নাঙ্গ পামরি পোকা কালো রঙের। সারাদেহ কাঁটাযুক্ত। কীড়া অতি ক্ষুদ্র এবং হলদে বর্ণের। কীড়া ধান পাতার দুই স্তরের মাঝখানে অবস্থান করে এবং সবুজ অংশ খায়। স্ত্রী এবং পুরুষ উভয় পোকা গড়ে ১৪-২০দিন বেঁচে থাকে। এই পোকা ফসলের চারা অবস্থা থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ কুশি অবস্থা পর্যন্ত আক্রমন করে। বছরে কমপক্ষে ০৪বার বংশবিস্তার করতে পারে। প্রতিটি স্ত্রী পোকা ৩-৪দিনের মধ্যে প্রায় ৩০০টি ডিম দেয়।

[image link=” http://beanibazarnews24.com/wp-content/uploads/2018/08/pamri.jpg” img=” http://beanibazarnews24.com/wp-content/uploads/2018/08/pamri.jpg” caption=” পামরি পোকা “]

পোকার বংশবিস্তারের অনুকূল পরিবেশঃ
 জমিতে দাঁড়ানো পানি
 উচ্চ তাপমাত্রা(২৫-৩০ ডিগ্রি সেঃ গ্রেঃ)
 উচ্চ আদ্রতা(৮০% এর উপরে)
 অতিরিক্ত বৃষ্টি
 ক্রমাগত কয়েকদিন যাবৎ রাতের তাপমাত্রা উঠানামা
 আড়াইল, শ্যামা, আঙ্গুরী ঘাস, মুড়ি ফসল, বন্য ধান ইত্যাদির উপস্থিতি

ক্ষতির লক্ষনঃ
 পূর্ণবয়স্ক পোকা এবং কীড়া উভয়ই ধান গাছ আক্রমন করে
 কীড়া পাতার দুটি স্তরের ভিতরে সুড়ঙ্গ করে খায়
 পূর্ণবয়স্ক পোকা পাতার শিরা বরাবর কুড়ে কুড়ে খায়, ফলে আক্রান্ত পাতায় লম্বালম্বি দাগ দেখা যায়
 যে অংশটুকু খায় সেখানে শুধুই পাতলা পর্দা দেখা যায়

দমন ব্যবস্থাপনাঃ
 হাত জাল দিয়ে পোকা ধরে মেরে ফেলা
 কুশি অবস্থায় আক্রান্ত পাতা কেটে ধ্বংস করা। তবে কাইচথোড় আসার পর পাতা কাটলে ফসলের ক্ষতি হবে
 জমিতে দাঁড়ানো পানি সরিয়ে দেয়া
 সুষম সার ব্যবহার। অতিরিক্ত ইউরিয়া সার ব্যবহার না করা
 জমিতে বা আইলে আড়াইল, শ্যামা, আঙ্গুরী ঘাস বা বন্য ধান থাকলে তা সরিয়ে ফেলা
 সমকালীন চাষাবাদ অর্থাৎ একই এলাকায় সবাই মিলে একই সময়ে একই ফসল আবাদ করা
 গাছের প্রতি গোছায় ৪টি পূর্ণবয়স্ক পোকা থাকলেই শুধুমাত্র কীটনাশক প্রয়োগের চিন্তা করা উচিত। সেক্ষেত্রে কার্বোসালফান (মারশাল/সানসালফান/এডভানটেজ/এমিটেজ) গ্রুপের যেকোন ০১টি ২মিঃলিঃ/প্রতি লিটার পানিতে মিশিয়ে স্প্রে করা। প্রতি ১০ লিটার পানিতে মিশ্রিত ঔষধ ৫ শতাংশ জমিতে প্রয়োগ করা যায়।

 

লেখক : কৃষিবিদ পরেশ চন্দ্র দাস, উপজেলা কৃষি অফিসার, বিয়ানীবাজার, সিলেট।