প্রবাসী অধ্যুষিত বিয়ানীবাজারে লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়তে শুরু করেছে করোনা আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা। প্রথম দিকে দেশের অন্যান্য উপজেলার চেয়ে আক্রান্তের সংখ্যা কম থাকলেও জুন মাসের শেষ দিকে এসে এ সংখ্যা আশঙ্কাজনক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। উপজেলায় গত ৩০ জুন পর্যন্ত শনাক্ত হন ১০২ জন করোনা রোগী। গত ১ জুলাই থেকে সে সংখ্যা ৫ দফায় বেড়ে ৭ জুলাই পর্যন্ত ১৪০ জনে এসে দাঁড়িয়েছে। গত এক সপ্তাহে ৩৮জনের শরীরে করোনাভাইরাসের অস্বিস্ত শনাক্ত হয়েছে। সংক্রমিতে সংখ্যা বাড়ার বিষয়টি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে স্থানীয় স্বাস্থ্য বিভাগ।

উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা গেছে, গত ২৪ এপ্রিল টাঙ্গাইল ফের এক জুয়েলার্স কারিগর বিয়ানীবাজারে প্রথম করোনা আক্রান্ত ব্যক্তি হিসেবে শনাক্ত হন। গত ৩১ মে পর্যন্ত মোট রোগীর সংখ্যা যা ছিল, তার প্রায় ৭ গুণের বেশি আক্রান্ত হয়েছেন গত জুন মাসের ৩০ দিনে। গত ৩১ মে পর্যন্ত উপজেলায় আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ছিল ১০। আর ১ জুন থেকে ৩০ জুন পর্যন্ত করোনায় সংক্রমিত হয়েছেন ৮৮ জন। কিন্তু ১ জুলাই থেকে ৭ জুলাই- এ সময়ের মধ্যে ৩৮জন আক্রান্ত শনাক্ত হয়েছেন। এর মধ্যে ১ জুলাই ৩জন, ৩ জুলাই ১৪জন, ৫ জুলাই ১জন, ৬ জুলাই ১১জন ও ৭ জুলাই ৯জন। এই এক সপ্তাহের প্রতিদিন প্রায় ৫ জনেরও বেশি মানুষ করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। গতকাল মঙ্গলবার সর্বশেষ ৯জন শনাক্ত হওয়ার মধ্য দিয়ে এ উপজেলায় করোনায় আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ১৪০জন। সংক্রমিত হয়ে এ উপজেলায় করোনায় মোট মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৫ জনে।

স্বাস্থ্য প্রশাসনের দায়িত্বশীলরা জানিয়েছেন, এ উপজেলা থেকে ৮৭৫ টি নমুনা ল্যাবে পাঠানো হয়েছে এর মধ্যে ফল এসেছে ৮৪৭টির। তবে অপেক্ষমাণ ২৮টি নমুনার প্রতিবেদন আসলে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা আরও বৃদ্ধি পাবে। অন্যদিকে, আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ার সাথে সাথে বাড়ছে সেরে ওঠা রোগীর সংখ্যাও, এখন পযর্ন্ত ৫০জন রোগী করোনা মুক্ত হয়েছেন। আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ার ব্যাপারে দায়িত্বশীলরা জানান, বিভিন্ন এলাকায় হোম আইসোলেশনে থাকা করোনা রোগীদের সংস্পর্শে আসা-যাওয়ার কারণে একই পরিবারে একাধিক সদস্য করোনায় আক্রান্ত হওয়ার মাত্রাও দিন দিন বাড়ছে।

উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ মোয়াজ্জেম আলী খান চৌধুরী বলেন, বিয়ানীবাজারে করোনায় আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা এপ্রিল-মে মাসের তুলনায় গত জুন মাসে অনেক বেশি বেড়েছে। যত বেশি নমুনা ল্যাবে যাচ্ছে, ততই আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। তবে এর মধ্যে আমরা ৫০জনকে সুস্থ করতেও পেরেছি। তিনি বলেন, জুন মাসের শুরু থেকেই এ অঞ্চলে করোনার সামাজিক সংক্রমণ শুরু হয়ে গেছে। এর ফলস্বরুপ জুলাইয়ের শুরতেই এক সপ্তাহে ৩৮ জন আক্রান্ত হয়েছেন। তিনি বলেন, মূলত স্বাস্থ্যবিধি না মানার কারণে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। সেক্ষেত্রে আমরা মানুষকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার জন্য সচেতন করার চেষ্টা করে যাচ্ছি।

বিয়ানীবাজার পৌরসভার মেয়র মো. আব্দুস শুকুর বলেন, প্রতিদিনই উপজেলায় করোনায় সংক্রমিত ব্যক্তির সংখ্যা বাড়ছে। আক্রান্তের ৭৫ ভাগেরও বেশি পৌর এলাকার হওয়ায় পৌরসভা করোনার হটস্পটে পরিনত হয়েছে। তিনি বলেন, এখন বড় চ্যালেঞ্জ মানুষকে স্বাস্থ্যবিধি মানতে বাধ্য করা। সবাই সচেতন হলেই কেবল মহামারী করোনা ভাইরাসের বিস্তার ঠেকানো সম্ভব। এখন বড় চ্যালেঞ্জ মানুষকে স্বাস্থ্যবিধি মানতে বাধ্য করা। সবাই সচেতন হলেই কেবল মহামারী করোনাভাইরাসের বিস্তার ঠেকানো সম্ভব।

বিয়ানীবাজারে আরও ৯ জন করোনা আক্রান্ত