বিয়ানীবাজারে মহামারী করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ দিন দিন ভয়াবহ রূপ ধারণ করছে। প্রবাসী অধ্যুষিত এ উপজেলায় এখন পর্যন্ত করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছেন ৩৪৫জন। সাধারণ মানুষের মধ্যে করোনার নমুনা পরীক্ষা আগ্রহ অনেকটা কমে গেছে। নেহায়েত বাধ্য হয়ে যারা নমুনা পরীক্ষা করাচ্ছেন তাতেই শনাক্তের সংখ্যা বাড়ছে। এ উপজেলায় এখন পর্যন্ত করোনা শনাক্তের হার ১ শতাংশেরও কম।

বিয়ানীবাজারে আগস্টের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত করোনার সংক্রমণ ভয়াবহভাবে বেড়েছে। উপজেলায় করোনা শনাক্তের প্রায় ৬ মাসে ৩৪৫জন রোগীর মধ্যে শুধুমাত্র আগস্ট মাসেই আক্রান্ত হয়েছেন ৯১জন। আর সর্বমোট ১৭ মৃত্যুর মধ্যে ৬জনই মারা গেছেন এই মাসে।

উপজেলা স্বাস্থ্য বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, বিয়ানীবাজারে দিন দিন বাড়ছে করোনা রোগীর সংখ্যা। গত ৩১ জুলাই পর্যন্ত এ উপজেলায় করোনায় আক্রান্ত রোগী সংখ্যা ছিল ২২৯জন, সুস্থ ১৪৪জন ও মৃত্যু ১১জন। কিন্তু গত ১ আগস্ট থেকে ৩১ আগস্ট পর্যন্ত আক্রান্ত হয়েছেন ৯১জন। এর মধ্যে মৃত্যুবরণ করেছেন ৬জন ও সুস্থ হয়েছেন ৭৪জন। এরপর গত ১ সেপ্টেম্বর থেকে শনিবার (৫ সেপ্টেম্বর) দুপুর ২টা পর্যন্ত উপজেলায় ২৫জন সংক্রমিত ও একজন মৃত্যুবরণ করেছেন। এ নিয়ে উপজেলায় মোট আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৩৪৫জনে। এর মধ্যে সুস্থ হয়েছেন ২২৮জন, মারা গেছেন ১৮জন ও চিকিৎসাধীন রয়েছেন ১০০জন রোগী। উপজেলায় এখন পর্যন্ত করোনা শনাক্তের হার ১ শতাংশেরও কম। মৃত্যুর হার ৫.২২ শতাংশ থাকলেও কমেছে সেরে উঠার হার। বর্তমানে সুস্থতার হার ৬৬.০৯ শতাংশ।

এদিকে, পরিস্থিতি মোকাবেলায় পৌরশহরসহ উপজেলায় ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেছে প্রশাসন। স্বাস্থ্যবিধি মানাসহ মাস্ক ব্যবহার নিশ্চিত করতে চলছে সচেতনতামূলক কার্যক্রম। কিন্তু এরপরও মাস্ক ব্যবহারের উপর গুরুত্ব নেই অধিকাংশ মানুষের। হিসাব অনুযায়ী প্রায় ৭৫ ভাগ মানুষই মাস্ক ব্যবহার করছেন না বা করলেও সঠিকভাবে সেটি ব্যবহার হচ্ছে না। শনিবার সকালে পৌরশহর ঘুরে দেখা যায়, শহরে আসা প্রায় ৬০ ভাগেরও বেশি মানুষ মাস্ক ব্যবহার করছেন না। আর প্রায় ১০ শতাংশ মানুষ মাস্ক ব্যবহার করলেও তারা সঠিকভাবে করছেন না।

তবে মাস্ক ব্যবহারের বিষয়ে প্রশাসন বলছে, মানুষ যাতে করোনায় সংক্রমিত না হয় সেজন্য প্রশাসনের পক্ষ থেকে এই মাস্ক ব্যবহারের জনসচেতনতামূলক কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে। শতভাগ মাস্ক ব্যবহারের জন্য কোথাও কোথাও ভ্রাম্যমাণ আদালতও পরিচালনা করা হচ্ছে। এছাড়াও জনপ্রতিনিধিদের সম্পৃক্ত করে কমিটি গঠন করা হয়েছে, যাতে করে সকল মানুষ মাস্ক ব্যবহার করে। আমরা আশা করছি আগামী দিনগুলোতে সচেতনতার মাধ্যমে সকলে মাস্ক ব্যবহার করবে। আর শতভাগ মানুষ মাস্ক ব্যবহার করলে করোনার যে সংক্রমণ তা অনেকাংশেই হ্রাস পাবে।

স্বাস্থ্য সংশ্লিষ্টদের মতে, করোনার নমুনা পরীক্ষা‍য় মানুষের আগ্রহ অনেকটা কমে গেছে। নেহায়েত বাধ্য হয়ে যারা নমুনা পরীক্ষা করাচ্ছেন তাতেই শনাক্তের সংখ্যা বাড়ছে। এর কারণ হিসেবে করোনা পরীক্ষায় সরকারিভাবে ফি নির্ধারণ এবং মানুষের অচেতনতাকেই দায়ী করছেন তারা। অন্যদিকে, আক্রান্তদের মধ্যে তবে যারাই সুস্থ হচ্ছেন তাদের বিষয়ে স্বাস্থ্য সংশ্লিষ্টদের ধারণা, স্বাস্থ্য বিভাগের দিক থেকে রোগীদের সঠিক দিকনির্দেশনা দেওয়া, সার্বক্ষণিক ফলোআপ করা, আক্রান্তদের মধ্যে অধিকাংশের জটিল কোনো উপসর্গ না থাকা করোনা রোগীরা দ্রুত সেরে উঠছেন।

উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডা. আবু ইসহাক আজাদ জানান, বিয়ানীবাজারে প্রথম করোনা রোগী শনাক্ত হয় গত ২৪ এপ্রিল। এরপর থেকে পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকলেও ঈদের পর করোনার সংক্রমণ আশংকাজনকভাবে বেড়ে যায়। পরে সচেতনতামূলক ব্যাপক কার্যক্রম অব্যাহত রাখায় রোগীর সংখ্যা কিছুটা কমতে শুরু করেছে। তবে বর্তমানে জনসাধারণের মধ্যে স্বাস্থ্য সচেতনতা না থাকায় আগস্ট মাস দ্বিতীয় সর্বোচ্চ সংখ্যক করোনা রোগী সংক্রমিত হয়েছেন। যার ধারাবাহিকতায় সেপ্টেম্বর মাসের প্রথম ৫ দিনে ২৫জন আক্রান্ত হয়েছেন।

শনাক্তের হার কমে যাওয়ার বিষয়ে ডা. আবু ইসহাক আজাদ বলেন, করোনা পরীক্ষায় নিজেদের অসচেতনতার জন্য মানুষের আগ্রহ আগের তুলনায় কিছুটা কমে গেছে। এখন যারাই পরীক্ষা করাচ্ছেন তাদের বেশিরভাগই করোনা আক্রান্তদের প্রত্যক্ষ সংস্পর্শে থাকা সন্দেহভাজন। তাছাড়া প্রথমদিকে মানুষ যেভাবে সচেতন ছিল, এখন সে তুলনায় মানুষের মধ্যে সচেতন থাকার প্রবণতাও কিছুটা কমে গেছে। তিনি আরও বলেন, অন্যান্য উপজেলার তুলনায় আমাদের এখানে সংক্রমণ ও মৃত্যুর হার এখনও পর্যন্ত বেশি।

ডা. আবু ইসহাক আজাদ বলেন, উপজেলায় করোনার ভয়াবহ বিস্তার দেখা দিয়েছে। স্বাস্থ্যবিধি না মানলে এ ভয়াবহতা নিয়ন্ত্রণ করা কোনভাবেই সম্ভব হবে না। সবাইকে শারীরিক দূরত্ব মানার পাশাপাশি মাস্ক ব্যবহার করা অনুরোধ জানান তিনি।

বিয়ানীবাজারে আরো ১৪ জন করোনা রোগী শনাক্ত, মোট আক্রান্ত ৩৪৫