করোনাভাইরাসের প্রভাবে বিয়ানীবাজারে স্বাভাবিক জীবনযাত্রায় এসেছে পরিবর্তন। অনেকে পেশা বদল করে জীবিকা নির্বাহের জন্য বেছে নিয়েছেন ভিন্ন ভিন্ন পন্থা। এসব শ্রমজীবীদের অনেকেই সরকারি সহায়তা পেলেও তা প্রয়োজনের তুলনায় কম। জীবিকার তাগিদে তাই বিকল্প ব্যবস্থা হিসেবে তারা বেছে নিয়েছেন নতুন পেশা। পথে নামলেই যাদের দেখা মেলে অহরহ।

করোনাভাইরাসের কারণে বিয়ানীবাজার পৌরসভার কসবা গ্রামে বসবাসরত মাছুম আহমদের মাথায় যেন আকাশ ভেঙে পড়েছে। দীর্ঘদিন ধরে উপজেলার মাথিউরা ইউনিয়নের মা মহল নামের একটি কমিউনিটি সেন্টারে ম্যানেজার হিসেবে কাজ করে আসছিলেন মাছুম আহমদ। ভালোই চলছিল তাঁর কর্মজীবন।সেই আয়ে মা-বাবা, স্ত্রী ও দুই সন্তান নিয়ে কোনো রকমে খেয়েপরে দিন কাটছিল তার। তবে করোনাভাইরাসের প্রকোপে কমিউনিটি সেন্টার ব্যবসায় ধ্বস নামায় মাছুমের আয়ের পথ বন্ধ হয়ে গেছে। ঘরে বসে থাকলে পেট চলে না। জীবিকার তাগিদে বাধ্য হয়ে তাই খিলিপান ও সিগারেটের বাক্স নিয়ে বসেছেন পৌরশহরের প্রধান রাস্তায়।

প্রতিবেদকের সাথে আলাপকালে মাছুম আহমদ জানান, গত প্রায় চার মাস ধরে বেতন পাননি তিনি। তাই মা-বাবা, স্ত্রী ও সন্তানদের নিয়ে অনেক কষ্টে দিন কাটছিল তার। পরিস্থিতি এমন হয়ে দাঁড়িয়েছে যে কারও কাছে সাহায্য চাইতেও পারছেন। তাই বাধ্য হয়ে রাস্তার ধারে পান-সুপারি ও সিগারেট বিক্রি করছেন। মাছুম জানান, এখন দৈনিক ৫-৬’শ টাকা আয় করেন তিনি। আর এ আয় দিয়ে পরিবারের খরচ সামলাতেই হিমশিম খেতে হচ্ছে তাঁকে। তার ওপর বাসাভাড়াসহ আনুসাঙ্গিক খরচা চালিয়ে যাওয়া তার পক্ষে অসম্ভব।

নিরুপায় হয়ে খিলিপান-সিগারেট বিক্রি করলেও এ পেশায় স্থায়ী হতে চান না মাছুম। তার বিশ্বাস, করোনার এই ঘোর অমানিশা কেটে একদিন নতুন সূর্যোদয় হবে। তিনি ফিরতে পারবেন তার কর্মস্থলে, আবারও স্বাভাবিক হয়ে ওঠবে সবকিছু। পরিবার নিয়ে স্বাছন্দ্যে দিন কাটাবেন তিনি।

করোনায় বদলে যাওয়া পরিস্থিতিতে মাছুমের মতো এমন অনেক শ্রমজীবী রয়েছেন, যারা নিজেদের পেশা এবং ব্যবসায়ের ধরন পাল্টে প্রতিনিয়ত টিকে থাকার লড়াই করে যাচ্ছেন। তাদেরই একজন হচ্ছেন প্রায় ২০ বছর ধরে বাবুর্চি পেশায় যুক্ত থাকা বাবুল আহমদ। কাজ করতেন স্থানীয় সিরাজ উদ্দিন বাবুর্চির সাথে। করোনার প্রকোপে কাজ হারিয়ে পৌরশহরের রাস্তায় রাস্তায় ভ্যানে করে পেয়াজ, রসুন, আদা ও আলু বিক্রি করছেন তিনি। বাবুল আহমদ জানান, এর আগে কিছুদিন কাঁচামাল বিক্রি করেছি। এখন পেয়াজ-রসুন, আদা ও আলু বিক্রি করে দৈনিক ২০০-২৫০ টাকা লাভ করি। এই আয় দিয়েই পরিবারের ভরণ পোষণ চালিয়ে নিচ্ছেন তিনি।

করোনার ধাক্কায় পেশা বদলে ফেলেছেন মাছুম ও বাবুলের মতো আরও অনেকেই। জীবিকার তাগিদে বেছে নিয়েছেন নতুন নতুন পথ। অনেকে আবার পাল্টে নিয়েছেন ব্যবসার ধরণ। তেমনি আরেক শ্রমজীবী হচ্ছেন উপজেলার মাথিউরা ইউনিয়নের নালবহর গ্রামের বাসিন্দা আব্দুস সাত্তার। দীর্ঘদিন ১০-১২ বছর ধরে ডেকোরেটার্সের ব্যবসা করেন তিনি। কিন্তু করোনা প্রাদুর্ভাবে তার সেই ডেকোরেটার্স ব্যবসাও থমকে গেছে। এতে বন্ধ হয়ে গেছে আয়ের পথ। এক আত্মীয়ের কাচ থেকে হাজার বিশেক টাকা ধার নিয়ে শুরু করেছেন কাপড়ের ব্যবসা।

এ প্রতিবেদকের সাথে আলাপকালে আব্দুস সাত্তার জানান, করোনাভাইরাস দুর্যোগ শুরু হওয়ার পয় থেকেই ব্যবসা নেই। ব্যবসা না থাকলে আয়ও বন্ধ। অনেক কষ্টে পরিবার নিয়ে দিনাতিপাত করছি। প্রধানমন্ত্রীর ২৫০০ টাকা প্রনোদনা প্যাকেজ সহায়তা পেলেও এটা দিয়ে তো আর সংসার চালানো সম্ভব নয়। তাই ২০ হাজার টাকা ধার অরে কাপড়ে ব্যবসা শুরু করেছি।

এদিকে, করোনা পরিস্থিত কবে নাগাদ স্বাভাবিক হবে তা সবারই অজানা, এ অবস্থায় বিপাকে পড়েছেন নিম্ন আয়ের নানা পেশার অসংখ্য মানুষ। সংসারের খরচ সামাল দিতে বিকল্প পেশা শুরু করতে হয়েছে তাদের। সামনের দিনগুলো তাদের কাছে অনিশ্চিত হলেও সুদিন ফেরার স্বপ্নে বিভোর হয়ে দিন কাটাচ্ছেন এসব শ্রমজীবীরা।

করোনা বদলে দিয়েছে পেশা