ঈদের দিনে পাঞ্জাবি পরলে বাঁ দেখলেই কেমন জানি উৎসবের একটা ছবি আমাদের চোখে ভেসে ওঠে। এই একটিমাত্র পোশাক, যেটা ছেলেদের গায়ে জড়াতেই উৎসবের দিকে টেনে নিয়ে যায়। নতুন পাঞ্জাবি ছাড়া ছেলেদের ঈদ যেন ঠিক জমে না। কারণ ঈদের নামাজ তো পরতে হবে পাঞ্জাবি পরেই।

বাঙালির এই চিরাচরিত ঐতিহ্যকে ধরেই প্রতি বছর ঈদ উপলক্ষে বিয়ানীবাজারের ছোটবড় ও অভিজাত বিপণী বিতাগুলোতে আনা হয়েছে পাঞ্জাবির বিশাল কালেকশন। শপিংমলগুলোতে যেমন পাওয়া যাচ্ছে দেশী-বিদেশী ছেলেদের পোশাকের বিপণি বিতানগুলোতে আকর্ষণীয় ফ্যাশন্যাবল পাঞ্জাবি, তেমনি ফ্যাশন হাউজগুলোতেও রয়েছে দেশীয় কাপড়ে তৈরি পাঞ্জাবির সমারোহ।

এবারের ঈদ আয়োজনে ছোট-বড় ও অভিজাত বিপণী বিতানসহ ছেলেদের ফ্যাশন হাউসগুলো গুরুত্ব দিয়েছে আবহাওয়ার বিষয়টিকে। গরম ও বৃষ্টির এই ঋতুতে আবহাওয়ার সাথে সামঞ্জস্য রেখে সাজিয়েছে তাদের নানা আয়োজন। রেডি এবং আনরেডি উভয় ধরনের পাঞ্জাবিতে রয়েছে বিয়ানীবাজারের তরুনদের চাহিদা বলছেন ক্রেতা-বিক্রেতা উভয়েই। পাঞ্জাবি যদিও প্রতি বছর ঈদে সমান আকর্ষণ নিয়েই বাজারে আসে। তবে এর কাটিং, প্যাটার্ন, লেন্স, কালার এসবে কিন্তু প্রতিবারই কিছু না কিছু নতুনত্ব দেখা যায়। এবারের ঈদে স্লিম ফিটিং পাঞ্জাবির প্যাটার্ন বেশি চলছে। সেই সাথে লং, সেমি লং লেন্থ থাকছে।

রঙের ক্ষেত্রে উজ্জ্বল রঙের পাশাপাশি স্টাইপ, হালকা প্রিন্ট এসবও থাকছে। তবে সুতির কাপড়ই প্রাধান্য পেয়েছে। কারণ গরমের এই সময়ে সুতির মতো আরামদায়ক আর কোনো কাপড় হতে পারে না। প্রতিটি দোকানগুলোতে আলাদা করে সাজানো হয়েছে পাঞ্জাবির ঈদ কালেকশন। ঈদে ট্র্যাডিশনাল পাঞ্জাবির পাশাপাশি হালকা কারুকাজ করা পাঞ্জাবিও থাকছে। নানা ধরনের প্রিন্টের নকশা করা পাঞ্জাবিও থাকছে। এ ছাড়া টাইডাই করা পাঞ্জাবিও পাওয়া যাচ্ছে। হাতা, গলায় ও বোতামের ধার ধরে হালকা কাজ করা পাঞ্জাবি বেশ চলছে।

পৌরশহরের জামান প্লাজা, আজির প্লাজা, আজির মার্কেট, আল-আমিন শপিং কমপ্লেক্স, হাজী আব্দুস সাত্তার শপিং কমপ্লেক্সসহ অন্য শপিংমলগুলো ঘুরে দেখা যায়, এবার ক্রেতাদের পছন্দের শীর্ষে রয়েছে রঙিন কাপড় ও হাতের কাজের নকশা করা পাঞ্জাবি এবং ছাপার কাজের পাঞ্জাবি। অনেকই আবার এক কালারের সুতি ও টরে কাপড় কিনে নিজের পছন্দ মতো সাইজ ও ডিজাইন দিয়ে সেলাই করিয়ে নিচ্ছেন দর্জি কারিগর দিয়ে।

কলেজ শিক্ষার্থী সুলতান আহমদ জানায়, সারাবছর সাধারণ পাঞ্জাবি তেমন একটা পরা হয় না। তবে ঈদে পোষাক হিসেবে পাঞ্জাবিই পছন্দ। সে জানায় তার পছন্দ মতো নকশা করা ১টি পাঞ্জাবি কিনেছেন ১হাজার ২শ’ টাকা দিয়ে। সাব্বির হোসেন নামে এক ক্রেতা জানান, তিনি ভালোমানের কাপড়ের একটি পাঞ্জাবি কেনারে জন্য এসেছেন। দুই-তিনটি দোকানে পাঞ্জাবি পেয়েছেন। যা দেখতে খুবই সুন্দর। বেশিরভাগই ভারত থেকে আনা পাঞ্জাবি। কিন্তু দামটা একটু বেশি মনে হচ্ছে। কারণ গতবছরও এ ধরণের পাঞ্জাবি অনেক সাশ্রয় মূল্যে কিনেছেন।

জাহিদ আহমদ নামে আরেক ক্রেতা বলেন, যাই বলুন এবার বাজারে পাঞ্জাবির কালেকশন খুব ভালো। কাপড়, রঙ ও নকশা সব অসাধারণ। ঈদের নামাজ পড়তে পাঞ্জাবি কিনতে হবে। ভাবছি ভালো মানের একটি পাঞ্জাবি কিনবো। যা ঈদের দিনসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠানে পড়া সম্ভব হবে।

নান্দনিক ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট ও কসমেটিক্সের স্বাত্তাধিকারী জাকির হোসের বলেন, আমরা মূলত বিভিন্ন বিয়ে বা সামাজিক অনুষ্ঠানে পাঞ্জাবি ভাড়া দিয়ে থাকি। কিন্তু বিয়ানীবাজারের তরুনদের চাহিদা ও রুচির কথা নজরে এনে এবছর থেকে বিক্রি করা শুরু করেছি। দেশি-বিদেশি পাঞ্জাবী কালেকশন করেছি। এ বছর এবারও ঈদ পড়েছে গরমে । তাই ক্রেতাদের কথা চিন্তা করে গরম এবং বৃষ্টি দুটোর কথাই মাথায় রেখে এবারের ঈদে পাঞ্জাবির কাপড়ে এসেছে ভিন্নতা। এবার পাঞ্জাবিতে প্রাধান্য পেয়েছে বিভিন্ন ধরণের সুতি কাপড়ের। তাতে নানা ধরণের কাজ করা হয়েছে। এছাড়া পাঞ্জাবির কাপড়ে ব্যবহার করা হয়েছে জামেবার, তসর, সিল্ক, খাদি, তাঁতের কাপড়, মটকা, জয় সিল্ক, কাতান ইত্যাদি। তিনি জানান, বিভিন্ন শ্রেণীপেশার মানুষের কথা চিন্তা করে মাত্র ৬শ’ টাকা থেকে আড়াই হাজার টাকার মধ্যে নতুন ডিজাইনের পাঞ্জাবি পাওয়া যাচ্ছে।

ব্যবসায়ীর জুয়েল আহমদ জানান, এবার পাঞ্জাবীতে রয়েছে নতুনত্ব। গলা, কলার, হাতা বা বুকের সামনে আছে নানা ধরণের নকশা। এসব নকশায় রয়েছে সুতোয় বোনা হস্তশিল্পের কাজ। এছাড়াও রয়েছে স্ক্রীন প্রিন্ট ও এম্ব্রডরির কাজ, রয়েছে কারচুপি বা জারদৌসী কাজের পাঞ্জাবি। এবারের ঈদে উজ্জ্বল রঙের প্রাধান্য থাকছে পাঞ্জাবিতে। লাল, খয়েরি, কমলা, নীল, কালো, সাদা, ছাই, হালকা সবুজ, হলুদ, বেগুনি ইত্যাদি রঙের পাঞ্জাবি পাওয়া যাচ্ছে। লম্বা পাঞ্জাবিতে কলার ও বুকের দিকে থাকছে পুঁতি বা সুতার কাজ।