সরকার নির্ধারিত দাম উপেক্ষা করে ট্যাক্স স্ট্যাম্প ছাড়াই বিয়ানীবাজার পৌরশহরসহ উপজেলার বিভিন্ন ছোটবড় হাট-বাজারে অবাধে বিক্রি হচ্ছে ১ থেকে ২ টাকায় নিন্মস্তরের সিগারেট। গত কয়েক মাস ধরে এসব নকল সিগারেটের বিক্রি প্রায় দ্বিগুণ বেড়েছে বলে জানা গেছে।

সমর্থিত সূত্রগুলো বলছে, আগে যেখানে দিনে এ ধরনের সিগারেট ৬-৭ লাখ বিক্রি হতো, এখন সেখানে প্রতিদিন বিক্রি হচ্ছে ১৫ লাখেরও বেশি সিগারেট। ফলে ধূমপান নিয়ন্ত্রণ যেমন ব্যর্থ হচ্ছে তেমনি নিম্নস্তরের কর হার হিসাবে এসব সিগারেট থেকে প্রতিমাসে সরকার রাজস্ব হারাচ্ছে প্রায় ১৫-১৮ কোটি টাকারও বেশি।

জানা যায়, সরকার নির্ধারিত দাম অনুযায়ী নিন্মস্তরের সিগারেট প্রতি শলাকা ৩ টাকায় খুচরা বাজারে বিক্রি হওয়ার কথা, যেখানে ভোক্তাদের কাছে সিগারেটের প্রতি শলাকা ৩ টাকার নিচে বিক্রয় অবৈধ বলে গণ্য হয়। কিন্তু বিয়ানীবাজার উপজেলাসহ আশেপাশ কয়েকটি উপজেলায় যেসব সিগারেট পাওয়া যাচ্ছে তা কর পরিশোধিত নয় এবং নকল সিগারেট হওয়ায় খুচরা বাজারে উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান শলাকা প্রতি ১ থেকে ২ টাকায় বিক্রি করে থাকে।

সরেজমিনে দেখা গেছে, বিয়ানীবাজার উপজেলাসহ পার্শ্ববর্তী গোলাপগঞ্জ, জকিগঞ্জ, বড়লেখা উপজেলায় নিন্ম আয়ের ক্রেতাদের লক্ষ্য করে স্থানীয় সকল ছোটবড় হাট-বাজারে এসব সিগারেট বিক্রি সম্প্রসারিত করে চলেছে কয়েকটি সংঘবদ্ধ চক্র। এসব এলাকায় সেনর গোল্ড পিওর, সেনর গোল্ড ফাস্ট, সেনর গোল্ড ইউনিক, সেনর গোল্ড প্লাস, টার্গেট, দেশ ব্ল্যাক, পিকক, টাইগার, পার্টনার, জেটসহ প্রভৃতি নামে এসব সিগারেট বিক্রি হতে দেখা গেছে। এসব সিগারেটের মোড়ক পর্যবেক্ষণ করে দেখা গেছে, বেশির ভাগেরই ট্যাক্স স্ট্যাম্প নেই। এমনকি কিছু কিছু মোড়কে নকল বা ফটোকপি ট্যাক্স স্ট্যাম্প ব্যবহার করা হচ্ছে। অনেক প্যাকেটের গায়ে আবার নেই উৎপাদনকারী কোম্পানির নাম।

তবে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ন্যাশনাল টোব্যাকো লি্মিটেড ও যমুনা টোব্যাকোর মতো কিছু কোস্পানি এ ধরনের সিগারেট উৎপাদন করে থাকে। এসব প্রতিষ্ঠান বিভিন্ন ধরনের মোড়কে ট্যাক্স স্ট্যাম্প ছাড়া নকল সিগারেট সংঘবদ্ধ উপায়ে বাজারজাত করছে। অন্যদিকে, দাম কম হওয়ায় কোন কিছুর তোয়াক্কা না করেই ক্রেতারা এসব সিগারেট কিনে ঠকছেন এবং সরকার রাজস্ব আয় হতে বঞ্চিত হচ্ছে। অন্যদিকে, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী যদি কখনও অভিযান পরিচালনা করে জরিমানা করে, তখন কিছুদিনের জন্য এসব অবৈধ সিগারেট বিক্রি বন্ধ থাকে। পরিস্থিতি বুঝে সংঘবদ্ধ চক্র আবার সক্রিয় হয়ে ওঠে এবং দোকানিদের জরিমানার টাকার সমপরিমাণ সিগারেট বিনামূল্যে সরবরাহ করে। ফলে বিক্রেতা আবার নতুন উদ্যমে এ ধরনের সিগারেট বিক্রিতে উৎসাহী হয়ে ওঠেন।

বিয়ানীবাজার পৌরশহরের কয়েকটি তামাকজাত পণ্য বিক্রয়কারী ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ঘুরে দেখা যায়, সেই দোকানগুলোতে বিপুল পরিমাণ এধরনের নকল সিগারেট বিক্রয়ের জন্য রাখা হয়েছে। এসব দোকান থেকে পাইকারি মূল্যে কিনে উপজেলার ছোটবড় বাজারে অবাধে বিক্রি হচ্ছে নকল সিগারেট।

পৌরশহরের এক দোকানী জানান, ‘বর্তমানে বাজারগুলোতে এসব সিগারেটের চাহিদা বেশি থাকায় বিক্রিও বেশি। বেশি বিক্রিতে লাভাংশের হার বেশি থাকে তাই তিনি এ সিগারেট বিক্রি করেন।’ তিনি আরো জানান, ‘এসব সিগারেট বিভিন্ন সময় বিভিন্ন নামে বাজারে আসে। নিম্ন আয়ের ক্রেতারা কম দাম দেখে বেশি কেনেন।’

বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনে সিগারেটের প্যাকেটগুলোতে সচিত্র স্বাস্থ্য সতর্ক বাণী থাকার বিধান রয়েছে। কিন্তু সম্প্রতি বাজারে যেসব অবৈধ সিগারেট অবাধে বিক্রি হচ্ছে সসব সিগারেটের প্যাকেটে কোন ধরনের স্বাস্থ্য সতর্ক বাণী না থাকায় তাতে আসক্ত হচ্ছে স্কুল-কলেজ পড়ুয়া তরুণ-যুবস্ময়াজ। এতে জনস্বাস্থ্য হুমকির মিখে পড়ার পাশপাশি সরকারও বিপুল পরিমাণ রাজস্ব হারাচ্ছে।’

এদিকে, সম্প্রতি এসব সিগারেটের বিক্রয় বেশি থাকার কারণে প্রধানমন্ত্রীর ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে ধূমপানমুক্ত করার ঘোষণা ও বাস্তবায়ন পরিকল্পনা হুমকির মুখে পড়ছে। কারণ এসব সিগারেটের দাম কম হওয়ায় নিম্নআয়ের মানুষের মাঝে ধূমপানের প্রবণতা বাড়ছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এসব সিগারেটের বিরূদ্ধে পদক্ষেপ না নিলে ধূমপান নিয়ন্ত্রণ বাস্তবায়ন অধরাই থেকে যাবে।

এ ব্যাপারে বিয়ানীবাজার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কাজী আরিফুর রহমান বলেন, ‘এসব অবৈধ ও নকল সিগারেটের অবাধ বিক্রি বন্ধে সারাদেশে প্রশাসন সবসময়ই তৎপর রয়েছে। রাজস্ব সংগ্রহ নিশ্চিত এবং চোরাচালান করা সিগারেট বাজারজাতকরণ সম্পূর্ণরূপে বন্ধ করতে বিয়ানীবাজার পৌরশহরসহ উপজেলার বিভিন্ন হাট-বাজারে মোবাইল কোর্ট পরিচালনার মাধ্যমে প্রশাসনের তৎপরতা অব্যাহত রয়েছে। খুব শীঘ্রই মোবাইল কোর্ট এসব অবৈধ ও নকল সিগারেটের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করবে।’