বিয়ানীবাজার উপেজলার শেওলা ইউনিয়নের গুচ্ছগ্রামে বসবাস করেন দুবাগ ও শেওলা ইউনিয়নের প্রায় শতাধিক পরিবার। আজ রবিবার সেখানে পরিদর্শনে যান উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান। দুর্গত মানুষ তাকে পেয়ে ত্রাণের জন্য আহাজারি করেন। অনেকেই না খেয়ে উপোস থাকার বর্ণনা দিয়ে কেঁদে ফেলেন। চেয়ারম্যান আশ্বাস দেন আগামীকাল এ গ্রামে ত্রাণ বিতরণ করা হবে।

কুশিয়ারা নদীর তীর ঘেঁষে গুচ্ছ গ্রামের অবস্থান। দুপুর ১টার দিকে উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আতাউর রহমান খান সেখানে পরিদর্শনে গেলে গ্রামের নারী, পুরুষ, শিশুরা তাকে ঘিরে ধরে নিজেদের দুঃখ দুর্দশার বর্ণনা দেন। গত দশ দিন থেকে নিধারুন কষ্টের কথা জানাতে গিয়ে কেঁদে ফেলেন দিনমজুর সাজু আহমদ (৩০)।

গুচ্ছ গ্রামের স্বামী পরিত্যক্ত ও বিধবা মহিলাদের অনেকেই ভিক্ষা করে জীবিকা নির্বাহ করেন। এ গ্রামে বসবাসরত পরিবারের অধিকাংশ সদস্যরা পরের বাড়িতে মুজরী খেঁটে সংসার চালান। বানের পানিতে দুবাগ ও শেওলা ইউনিয়ন তলিয়ে যাওয়ায় তাদের কাজ বন্ধ রয়েছে। কুশিয়ারা নদীর তীর ঘেঁষে থাকা গুচ্ছ গ্রামের সবগুলো বাড়ি-ঘর পানিতে ডুবে যায়। ঘরের খাটে, মাচা বেঁধে গত দশ দিন থেকে বসবাস করছেন দুর্গত পরিবারের বাসিন্দারা। পানি নেমে গেলেও তাদের দুর্ভোগ কমেনি। ঘর থাকার উপযোগী করতে দিনরাত পরিশ্রম করতে হচ্ছে।

সিরাজ উদ্দিেনর ছেলে হাবিল আহমদ একজন দিন মজুর। পানিতে পুরো এলাকা তলিয়ে যাওয়া গত ১০ দিন থেকে তিনি বেকার রয়েছেন। এর প্রভাব পড়েছে দৈনন্দিন জীবনে। সংসারের শিশুদের মুখে খাবার তুলে দিয়ে তারা প্রায়ই উপোস করছেন বলে জানান।

মৃত ময়নার মিয়া স্ত্রী খুজেদা বেগম (৪০) বলেন, শেওলা ইউনিয়নের বাসিন্দা হলেও একদিন মাত্র চেয়ারম্যান-মেম্বার আমাদের দেখতে এসেছেন। ভিক্ষা করে সংসার চালানো বিধবা ফরিনা বেগম। তিনি বলেন, ঘর থেকে বেরুতে না পারলে আমাদের কে ভিক্ষা দেবে। তার উপরে সরকারি ত্রাণও পাচ্ছি না। এখন বুঝে নেন কি কষ্টে দিন কাটাচ্ছি।

গুচ্ছ গ্রামের প্রবীন মুরব্বি সিরাজ উদ্দিন বলেন, আমার গ্রামের সকলেই দিনমজুর। যাদের ঘরে পুরুষ নাই তারা ভিক্ষা করে জীবিকা নির্বাহ করেন। তিনি বলেন, টুনু মেম্বার (নুরুল ইসলাম টুনু) এক সপ্তাহ আগে এলাকার দশজনকে ত্রাণ দিয়েছেন। শেওলা ইউনিয়নের প্রায় ৮০ পরিবার এবং দুবাগ ইউনিয়নের প্রায় ২০ পরিবার এখন ত্রাণ পাননি।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মু: আসাদুজ্জামান বলেন, যারা ত্রাণ পাননি সে তালিকা সম্পন্ন হয়েছে। গুচ্ছ গ্রামসহ দুর্গত এলাকায় ত্রাণ না পাওয়া পরিবারের মধ্যে ত্রাণ বিতরণ করা হবে। তিনি বলেন, ত্রাণের কোন সল্পতা নেই। পরিষদ থেকে পাওয়া তালিকার উপর নির্ভর করে ইউনিয়নে ত্রাণের চাল বরাদ্ধ দেয়া হয়েছিল।

উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আতাউর রহমান খান বলেন, যেসব এলাকায় এখনো ত্রাণ যায়নি সেসব এলাকায় আগামীকাল (আজ) থেকে ত্রাণ পাঠানো হবে। আমরা প্রতিটি দুর্গত এলাকা গিয়ে মানুষের পাশে থেকে তাদের দুঃখ দুর্দশা লাঘবের চেষ্টা করছি।