সিলেটের বিশ্বনাথে স্কুল থেকে হুসাইন আহমদ (৫) নামের এক শিশুকে অপহরণ করে মুক্তিপণ দাবির অভিযোগে হাতে নাতে দুই ছাত্রীকে আটক করেছে পুলিশ। হুসাইন আহমদ উপজেলার দৌলতপুর ইউনিয়নের সিংরাওলী গ্রামের বকুল মিয়ার পুত্র ও স্থানীয় সিংগেরকাছ বাজার ইকরা মডেল একাডেমীর প্লে শ্রেণীর ছাত্র।

আটককৃতরা হচ্ছে বকুল মিয়ার আপন চাচাতো বোন একই গ্রামের আলা উদ্দিনের মেয়ে আলিমা বেগম (১৬) ও রাহিমা আক্তার পূর্নিমা (১৩)। আটককৃত আলিমা বেগম সিংগেরকাছ পাবলিক বহুমূখী উচ্চ বিদ্যালয় এন্ড কলেজের ৯ম শ্রেণীর ছাত্রী ও রাহিমা আক্তার পূর্নিমা একই বিদ্যালয়ের ৬ষ্ঠ শ্রেণীর ছাত্রী বলে তারা জানায়।

জানা গেছে, প্রতিদিনের ন্যায় আজ সোমবার (৯এপ্রিল) সকালে সিংগেরকাছ বাজারস্থ ইকরা মডেল একাডেমীতে যায় হুসাইন আহমদ। দুপুর ১১ টা ৪৫ মিনিটের সময় রাহিমা আক্তার পূর্নিমা উক্ত একাডেমীতে গিয়ে সে নিজেকে হুসাইন আহমদের ফুফু (পিতার চাচাতো বোন) পরিচয় দিয়ে তাকে (হুসাইন) বাড়ি নিয়ে যেতে চায়। একপর্যায়ে একাডেমী থেকে হুসাইনকে সাথে নিয়ে রাহিমা আক্তার পূর্নিমা ও আলিমা বেগম বিশ্বনাথ বাজারে অবস্থান নেয়। বেলা ১টায় হুসাইনকে বাড়ি নিয়ে যেতে তার পিতা বকুল মিয়া স্কুলে গিয়ে জানতে পারেন তার ছেলে ফুফুর সাথে দুপুরে বাড়িতে চলে গেছে। এসময় তিনি বুঝতে পারেন তার ছেলেকে অপহরণ করা হয়েছে। একপর্যায়ে বকুল মিয়ার মোবাইল ফোনে একটি অপরিচিত নাম্বার থেকে কল আসে এবং তার কাছে ২০হাজার টাকা মুক্তিপণ দাবি করা হয়। বলা হয় ‘তুমার ছেলে আমাদের কাছে আছে, বিকাশ নাম্বারে ২০হাজার পাঠিয়ে দিলে আমার তাকে অক্ষত অবস্থায় দিয়ে দিব’। জবাবে বকুল মিয়া বলেন ‘২০হাজার নয়, প্রয়োজন হলে ৫০ হাজার টাকা আমি দিয়ে দিব তবুও আমার ছেলেতে ফেরত চাই’। এসময় অপহরণের প্রমাণ হিসেবে অপহৃত হুসাইনকে দিয়ে মোবাইল ফোনে তার পিতার সাথে কথা বলায় অপহরণকারীরা। তাৎক্ষণিক বকুল মিয়া বিশ্বনাথ থানায় এসে পুলিশকে বিষয়টি অবহিত করেন। এরই মধ্যে অপহরণকারীরা বিকাশের মাধ্যমে দ্রুত টাকা পাঠিয়ে দিতে বার বার বকুল মিয়াকে ফোন করে।

একপর্যায়ে পুলিশের পরামর্শে অপহরণকারীদের দেয়া বিকাশ নাম্বারে ১০হাজার টাকা পাঠিয়ে দেওয়া হয় এবং ট্র্যাকিং এর মাধ্যমে ওই বিকাশ নাম্বারের অবস্থান চিহিৃত করে পুলিশ। তাৎক্ষণিক বিশ্বনাথ থানার অফিসার ইন-চার্জ (ওসি) শামসুদ্দোহা পিপিএম ও পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) দুলাল আকন্দ দ্রুত উপজেলা সদরের আল হেরা মার্কেটের নীচ তলায় বিকাশ এজেন্ট গ্রামীণ টেলিকম-১ এ গিয়ে হাতে নাতে ওই দুই নারীকে আটক করেন এবং অপহৃত শিশুকে উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসেন। এসময় ওই দোকানের মালিক উপজেলার রামপাশা ইউনিয়নের রামপাশা গ্রামের সুলতান খানের পুত্র ফিরোজ খান (২৮) ও সামছুল ইসলাম খান (৩০) কে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করে থানায় নিয়ে আসে পুলিশ।

এদিকে, শিশু অপহরণের ঘটনায় উপজেলা সদরে তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে। ঘটনার খবর পেয়ে তাৎক্ষণিক কৌতহলী জনতা থানায় ভিড় জমান। ভিড় সামাল দিতে থানা পুলিশকে হিমশিম খেতে হয়। একপর্যায়ে থানার প্রধান ফটকটি বন্ধ করে দেওয়া হয়। উদ্ধারকৃত শিশু হুসাইন অক্ষত থাকলেও তার মধ্যে আতংক বিরাজ করছে। পিতা ও স্বজনদের কোলে থেকেও সে কান্নাকাটি করছে। আতংকে বাবার কোলে মুখ লুকিয়ে কাঁদছে।
ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বিশ্বনাথ থানার অফিসার ইন-চার্জ (ওসি) শামসুদ্দোহা পিপিএম বলেন, অপহৃত শিশুকে উদ্ধার ও অপহরণকারী ২ নারীকে আটক করা হয়েছে। এছাড়া জিজ্ঞাসাবাদের জন্য বিকাশের মালিক সহ ২জনকে থানায় নিয়ে আসা হয়েছে।