যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত প্রবাসী বাংলাদেশীদের অন্যতম বৃহৎ ও প্রাচীনতম আঞ্চলিক সংগঠন যুক্তরাষ্ট্রস্থ বিয়ানীবাজার সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সমিতির দ্বিবার্ষিক নির্বাচন ঘিরে ভোটার, প্রার্থী এবং সমর্থকদের উত্তেজনা এখন চরমে। সাজ সাজ রব বিরাজ করছে নিউইয়র্কের বিয়ানীবাজার অধ্যুষিত এলাকাগুলোতে। গত ১২ সেপ্টেম্বর নমিনেশন দাখিলের পর থেকে সে উত্তেজনা বেড়েছে কয়েক গুণ। যাচাই-বাছাই শেষে সবগুলো মনোয়নপত্র গ্রহণ করেছে নির্বাচন কমিশন। এরপর থেকে প্রার্থীরা ছুটছেন ভোটারদের দ্বারে দ্বারে। বিয়ানীবাজার সমিতির ইতিহাসে এবারই সর্বোচ্চ পাঁচ হাজারের বেশি ভোটার নির্বাচিত করবেন তাদের পছন্দের প্রার্থীদের আগামী ১০ অক্টোবরের সাধারণ নির্বাচনে। ভোটারদের মন জোগাতে প্রার্থীরা দিচ্ছেন নানা প্রতিশ্রুতি।

গত ২০ সেপ্টেম্বর ছিল প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ দিন নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কোন প্রার্থী তাদের প্রার্থিতা প্রত্যাহার না করায় ১৯ টি পদে দুই প্যানেল থেকে ৩৮ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।

এদিকে গত সোমবার ২১ সেপ্টেম্বর নিউইয়র্কের ওজন পার্কে প্রতিদ্বন্দী দুই প্যানেল মান্নান-মাহবুব এবং মিসবাহ – অপু পরিষদের প্রার্থীদের পরিচিতি সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।

মান্নান-মাহবুব পরিষদ ওজন পার্কের আল-মদিনা পার্টি সেন্টারে অনাড়ম্বর এক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে প্যানেল পরিচিতি সভা সম্পন্ন করেছে।

প্যানেলের ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক বীর মুক্তিযোদ্ধা মুজাহিদুল ইসলামের সভাপতিত্বে এবং সদস্য সচিব জহির উদ্দিন জুয়েল, আব্দুল বাছিত খান বুলবুল, মোহাম্মদ তুলনের যৌথ সঞ্চালনায় সভায় অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন সুলতান কবির চুনু মিয়া,আজমল হোসেন কুনু, আব্দুল হাই লন, হাজী শামসুল ইসলাম, হারুন মিয়া, গউছ উদ্দিন খান, আব্দুস শাকুর খান মাখন, মস্তুফা উদ্দিন, বুরহান উদ্দিন কফিল, ময়নুল হোসেন, হেলাল আহমদ, আলতাফ হোসেন চৌধুরী ইছবা, সভাপতি পদপ্রার্থী মোহাম্মদ আব্দুল মান্নান, সাধারণ সম্পাদক পদপ্রার্থী নাজমুল হক (মাহবুব), আব্দুল হাসিব, আব্দুন নূর, সালে আহমদ মনিয়া, আব্দুল কুদ্দুস টিটু, আক্তার মিয়া মুক্তা, সিরাজুল ইসলাম, আব্দুল আহাদ, ইফজাল আহমদ, কয়সর আহমদ, সরিফুল হক মঞ্জুর, সহ-সাধারণ সম্পাদক পদপ্রার্থী আব্দুর নূর হারুন, কার্যকরী সদস্য পদপ্রার্থী খলকুর রহমান ও জামাল হোসেন প্রমুখ।

বক্তারা তাদের বক্তব্যে মান্নান-মাহবুব পরিষদকে নির্বাচিত করার জন্য বিয়ানীবাজারবাসীর প্রতি আকুল আবেদন জানান। এ সময় তারা বলেন সমিতির হারানো গৌরব এবং ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনতে এই পরিষদকে বিজয়ী করার গুরুত্ব অনেক। বক্তারা দাবি করেন সমিতিতে বিভিন্ন ধরনের অনিয়ম চলছে দীর্ঘদিন থেকে সেই অনিয়মের বেড়াজাল থেকে সমিতিকে বের করে আনতে মান্নান-মাহবুব পরিষদকে জয়যুক্ত করতে হবে।

এদিকে নির্বাচনের ভোট কেন্দ্র ওজন পার্ক এলাকায় না দেওয়াকে ষড়যন্ত্র আখ্যায়িত করে নির্বাচন কমিশনকে আরো বেশি নিরপেক্ষভাবে কাজ করার অনুরোধ জানান বক্তারা। তারা বলেন এই এলাকায় সবচেয়ে বেশি ভোটার এবং এখানে অনেক বয়স্ক ভোটার রয়েছেন তারা সহ সকলের সুবিধার কথা বিবেচনা করে ভোটকেন্দ্রের সিদ্ধান্তটি পুনর্বিবেচনার দাবি জানান বক্তারা।

সমর্থকদের উল্লাস ও মোহর মোহর করতালির মাধ্যমে একে একে পরিচয় করিয়ে দেয়া হয় মান্নান- মাহবুব পরিষদের সকল প্রার্থীদের সভাপতি পদে মো. আব্দুল মান্নান, সাধারণ সম্পাদক পদে নাজমুল হক মাহবুব, সহ সভাপতি পদে ফয়জুর মিয়া, সহ সাধারণ সম্পাদক পদে আব্দুন নুর হারুন, কোষাধ্যক্ষ পদে আব্দুল হান্নান দুখু, সাংগঠনিক সম্পাদক পদে আবু তৈয়ব মো. তালহা, সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক সম্পাদক পদে অনিক রাজ, দপ্তর সম্পাদক পদে আব্দুল হামিদ, প্রচার সম্পাদক পদে আব্দুল হাকিম, ক্রীড়া সম্পাদক পদে কিবরিয়া আহমেদ শাহিদ, সমাজকল্যাণ সম্পাদক পদে আক্তারুজ্জামান শাহীন মালিক, মহিলা বিষয়ক সম্পাদিকা পদে নাজমা আহমেদ, কার্যকরী সদস্য পদে মো. খলকুর রহমান, জামাল হোসেন, মো. রাজ্জাক মুন্না, নুর উদ্দিন, ফখরুল হক, হোসেন আহমদ ও মো. আবু তাহের এবারের নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।

পরিচিতি সভায় মান্নান-মাহবুব পরিষদের বিপুল সংখ্যক সমর্থক ও শুভানুধ্যায়ী উপস্থিত ছিলেন।

ওজন পাকের মমোস পার্টি হলে মিসবাহ – অপু পরিষদের প্যানেল পরিচিতি সভা অনুষ্ঠিত হয় রাত আটটায়। সভার সভাপতিত্ব করেন প্যানেলের আহবায়ক মোস্তফা কামাল, সভা সঞ্চালনা দায়িত্বে ছিলেন প্যানেলের সদস্য সচিব আমিনুল হোসেন। হলভর্তি সমর্থক আর শুভানুধ্যায়ীদের করতালি আর স্লোগানের মধ্য দিয়ে এক এক করে পরিচয় করে দেওয়া হয় মিসবাহ-অপু পরিষদের ১৯ প্রার্থীকে।

এ নির্বাচনে বিভিন্ন পদে মিসবাহ-অপু পরিষদ থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন সভাপতি পদে মিসবাহ আহমদ, সাধারণ সম্পাদক পদে রেজাউল আলম অপু, সহ সভাপতি পদে আবুল ফজল লিটন, সহ সাধারণ সম্পাদক পদে হোসেন আহমদ, কোষাধ্যক্ষ পদে পারভেজ ইসলাম, সাংগঠনিক সম্পাদক পদে মাহমুদুল কবির রুবেল, সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক সম্পাদক পদে মো. আব্দুল আলীম, দপ্তর সম্পাদক পদে শামসুল আলম শিপলু, প্রচার সম্পাদক পদে মো. আজহার হুসেন রিফাত, ক্রীড়া সম্পাদক পদে হাসান খান, সমাজকল্যাণ সম্পাদক পদে মো. কমর উদ্দিন, মহিলা বিষয়ক সম্পাদিকা পদে হাফছা ফেরদৌস হোসেন, কার্যকরী সদস্য পদে সাজু আহমদ, সুহেল আহমদ, আবু রাসেল, ফয়ছল আলম, মো. সরোয়ার আহমদ মো. মেহেদী হাসান শিমুল ও ইকবাল হোসেন।

এসময় সব প্রার্থীরা এক এক করে তাদের পরিচয় তুলে ধরেন এবং তারা ও তাদের পরিষদকে নির্বাচিত করার জন্য ভোটারদের প্রতি আহ্বান জানান।

পরিচিতি সভায় সংক্ষিপ্ত আলোচনায় অংশ নেন মিসবাহ – অপু পরিষদের সমর্থকও শুভানুধ্যায়ীরা অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন বীর মুক্তিযোদ্ধা জয়াদ আলী, বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল জলিল, মইনুল ইসলাম, জিয়াউল হোসেন, আবুল হোসেন, শামস উদ্দিন, ফজলে রাব্বি সেবুল, শামীম আহমদ, মোহাম্মদ আলীম, কমর উদ্দিন, ছফর উদ্দিন, হেলিম উদ্দিন, ছরওয়ার হোসেন, ছামাদ উদ্দিন, রিজু মোহাম্মদ প্রমুখ।

এ সময় বক্তারা বলেন মিসবাহ – অপু পরিষদ অভিজ্ঞ, তারুণ্যনির্ভর ও প্রতিশ্রুতিশীল একটি পরিষদ তাদের নির্বাচিত করে বিয়ানীবাজার সমিতিকে আরো গতিশীল করতে ভোটারদের প্রতি আহ্বান জানান তারা। বক্তারা বলেন এই পরিষদ ই একমাত্র পরিষদ এবারের নির্বাচনে বিয়ানীবাজার উপজেলার পৌরসভাসহ ১০ ইউনিয়নের প্রতিনিধি নিয়ে গঠিত হয়েছে। এতেই বোঝা যায় তারা ঐক্য এবং সার্বজনীনতা বিশ্বাসী। ১০ অক্টোবরের নির্বাচনে সার্বজনীন বিয়ানীবাজার সমিতির গড়ার লক্ষ্যে এই পরিষদকে নির্বাচিত করতে হবে। বক্তারা বলেন ইতিমধ্যে বিভিন্ন ধরনের ষড়যন্ত্র ও অপপ্রচার চালাচ্ছে একটি স্বার্থান্বেষী মহল তবে বিয়ানীবাজারবাসী অনেক সচেতন যতই তারা ঘোলা পানিতে মাছ শিকারের চেষ্টা করুক তারা কখনো সফল হবে না। বক্তারা বলেন সচেতন বিয়ানীবাজারবাসী তারুণ্যনির্ভর এবং অভিজ্ঞ মিসবাহ – অপু পরিষদকেই বেছে নেবে।

বক্তারা মিসবাহ – অপু পরিষদের সকল সমর্থক এবং শুভানুধ্যায়ীদের উদ্দেশ্য করে বক্তারা বলেন আমরা সৌহার্দ্য আর সম্প্রীতিতে বিশ্বাসী তাই সবাইকে সতর্কতা এবং ধৈর্যের সাথে ১০ অক্টোবরের নির্বাচনের দিন পর্যন্ত কাজ করতে হবে।

উল্লেখ্য আগামী ১০ অক্টোবর বহুল প্রতীক্ষিত এই নির্বাচনের ভোটগ্রহণ নিউইয়র্কের জয়া হলে অনুষ্ঠিত হবে। সকাল ৯টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত চলবে ভোট গ্রহণ।

বিয়ানীবাজারে এনসিডি মডেল কর্নার স্থাপনের সফলতা, সেবা নিচ্ছেন ৬ সহস্রাধিক কার্ডধারী রোগী