জ্যামাইকা বাংলাদেশ ফ্রেন্ডস সোসাইটির উদ্যোগে আয়োজিত ‘কভিড-১৯ ভার্চুয়াল কমিউনিটি এসিসটেন্স অনুষ্ঠান’-এ বক্তারা ফ্রেন্ডস সোসাইটির কর্মকান্ডের প্রশংসা করে বলেছেন, প্রাণঘাতি করোনাভাইরাসেরর এই মহামারীতে সংগঠনিটি যেভাবে মানবাতার সেবায় এগিয়ে এসেছে এবং বিভিন্ন কর্মসূচী অব্যাহত রেখেছে তা কমিউনিটির সামাজিক সংগঠনগুলোর জন্য দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে। ফ্রেন্ডস সোসাইটির কর্মকর্তা ও সদস্যগণ ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করারও দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। বক্তারা বলেন, যেকোন বিপদ-আপদে কমিউনিটির সেবায় সম্মিলিতভাবে কাজ করতে হবে, একজন আরেকজনের পাশে দাঁড়াতে হবে। তারা আগামী দিনেও ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার উপর গুরুত্বারোপ করেন এবং আগামী ২৩ জুন অনুষ্ঠিতব্য প্রাইমারী নির্বাচন ভোটারদের ভোট প্রদান ও সেনসাস-২০২০ কর্মসূচীতে সকলের নাম অন্তর্ভূক্ত করার আহাবান জানান। খবর ইউএনএ’র।

এবি টিভির সহযোগিতায় রোববার রাত ১০টায় অনুষ্ঠিত এই ভার্চুয়াল আলোচনায় অংশ নেন ডাক্তার, আইনজীবি, সাংবাদিক, ব্যবসায়ী, রিয়েল এস্টেট বিশেষজ্ঞ সহ বিভিন্ন পর্যায়ের কমিউনিটির বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ। এক ঘন্টার অনুষ্ঠানটি এবি টিভি সরাসরি সম্প্রচার করে। এছাড়াও ফেসবুক লাইভে অনুষ্ঠানটি সম্প্রচার করা হয়।

ফ্রেন্ডস সোসাইটির প্রতিষ্ঠাতা ও বর্তমান সভাপতি মোহাম্মদ ফখরুল ইসলাম দেলোয়ারের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত অতিথি হিসেবে আলোচনায় অংশ নেন, মুক্তিযোদ্ধা ও পেনসিলভেনিয়া অঙ্গরজ্যের ড্রিক্সেল ইউনিভার্সিটি কলেজ অব মেডিসিন-এর অধ্যাপক ডা. জিয়াউদ্দিন আহমেদ, সাপ্তাহিক পরিচয় সম্পাদক নাজমুল আহসান, সাপ্তাহিক বাংলাদেশ সম্পাদক ও ফ্রেন্ডস সোসাইটির উপদেষ্টা ডা. ওয়াজেদ এ খান, জ্যামাইকা মুসলিম সেন্টার (জেএমসি) পরিচালনা কমিটির সেক্রেটারী ও ফ্রেন্ডস সোসাইটির উপদেষ্টা মনজুর আহমেদ চৌধুরী, বিশিষ্ট রিয়েল এস্টেট ব্যবসায়ী জান ফাহিম এবং বিশিষ্ট ইন্স্যুরেন্স ব্যবসায়ী ও ফ্রেন্ডস সোসাইটির উপদেষ্টা শাহ নেওয়াজ।

অনুষ্ঠানের শুরুতে স্বাগত বক্তব্য রাখেন ফ্রেন্ডস সোসাইটির সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ মোস্তফা আল আমিন (রাসেল)। এছাড়াও আলোচনার ফাকে ফ্রেন্ডস সোসাইটির প্রধান উপদেষ্টা এবিএম ওসমান গনি, উপদেষ্টা ডা. মাসুদুল হাসান ও এবিএম সালাহউদ্দিন আহমেদ সহ কয়েকজন কর্মকর্তার ভিডিও শুভেচ্ছা বার্তা সম্প্রচার করা হয়। অনুষ্ঠানের সার্বিক তত্ত্বধানে ছিলেন ফ্রেন্ডস সোসাইটির কার্যকরী সদস্য ও এবি টিভি’র সিইও রিজু মোহাম্মদ।

আলোচনায় অংশ নিয়ে ডা. জিয়াউদ্দিন আহমেদ বলেন, করোনাভাইরাস একটি অজ্ঞাত এবং মারাত্বক ভাইরাস। দ্বিতীয় দফায় এই ভাইরাসের প্রাদূর্ভাব হলে তা আরো ভয়াবহ হতে পারে। তবে আশার আলো নিউইয়র্কে এই ভাইরাস নিয়ন্ত্রিত হয়েছে। যেহেতু এই ভারাইরাসের ঔষুধ এখনো আবিষ্কৃত হয়নি, তাই আমাদেরকে সামাজিক দূরত্ব মেনে চলতে হবে। মাস্ক-গেøাভস এর পাশাপাশি হ্যান্ড সেনিটাইজার না পেলে সাবান ব্যবহার করতে হবে। সাবানে ভাইরাস শুধু দূর নয়, মরেও যায়। তিনি বলেন, কভিড-১৯ ছাড়াও অন্যান্য রোগীদের চিকিৎসা করতে হবে। করোনাভাইরাস মুক্ত হতে আইস্যুলেন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। অক্সিজেন অ্যাভেইলেবল থাকতে হবে। সমগ্র বাংলাদেশে আইসুলেশনের ব্যবস্থা থাকা দরকার। এতে সেবার মান সহজতর হবে এবং সেবা বৃদ্ধি পাবে। তিনি করোনাভাইরাস মোকাবেলায় আমেরিকার অভিজ্ঞতা বাংলাদেশ কাজে লাগাতে পারে বলে মন্তব্য করেন।

নাজমুল আহসান বলেন, কমিউনিটির কোন সংগঠনের সকল কর্মকর্তা ও সদস্য স্বতস্ফুর্তভাবে যদি কভিড-১৯ এ মানবতার সেবায় কাজ করে, তাহলে সেই সংগঠন হলো জ্যামাইকা বাংলাদেশ ফ্রেন্ডস সোসাইটি। এর পাশাপাশি বাংলাদেশ সোসাইটি ও জ্যামাইকা মুসলিম সেন্টার (জেএমসি)-এর নাম বলতে হয়। জেএমসি কভিড-১৯ এ মানুষের সেবায় দৃষ্টান্তমূলক সার্ভিস দিয়েছে। তিনি বাংলাদেশ সোসাইটির সভাপতি কামাল আহমেদ সহ করোনায় মৃত্যুবরণকারী সকলের প্রতি গভীর শোক প্রকাশ এবং সংশ্লিস্ট পরিবারের প্রতি সমবেদনা প্রকাশ করে বলেন, করোনাকালে কমিউনিটি যেভাবে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে তা প্রশংসার দাবী রাখে। তিনি খাদ্য বা ত্রাণ বিতরণ সাহায্য প্রক্রিয়ায় সমন্বয় না থাকার সমালোচনা করে বলেন, এই সমন্বয় না থাকায় কেউ কেউ একাধিকবার খাদ্য পেয়েছে, আবার কেউ কেউ খাদ্য পাননি। ভবিষ্যতে এমন হলে আর সিটি প্রশাসনের নজর পড়লে কমিউনিটি সিটির সাহায্য পেতে সমস্যা ও দূর্নাম দেখা দেবে। তিনি জানান, আগামী জুলাই মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে লকডাউন দ্বিতীয় ধাপে যেতে পারে। তবে সোস্যাল ডিসটেন্স মানা গুরুত্বপূর্ণ। তিনি বলেন, স্বাস্থ্য নিরাপত্তার জন্যই পত্রিকাগুলো বন্ধ রাখা হয়। আগামী সপ্তাহ থেকে ধাপে ধাপে নিউইয়র্কের বাংলা মিডিয়াগুলো প্রিন্ট হবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন। তিনি নিউইয়র্কের প্রাইমারী নির্বাচন ও সেন্সাসে অংশ নেয়ার উপর গুরুত্বারোপ করে বলেন, এতে বাংলাদেশীরা যত বেশী অংশ নেবেন মূলধারায় কমিউনিটির গুরুত্ব তত বৃদ্ধি পাবে।

ডা. ওয়াজেদ এ খান বলেন, কমন ইউনিটি থেকে কমিউনিটি এসেছে। এক স্বার্থ, এক লক্ষ্য, এক উদ্দেশ্য নিয়ে যারা কাজ করে তাদেরকেই কমিউনিটি বলা হয়। প্রবাসের এই কমিউনিটি বড় হলে, তা হবে বাংলাদেশী-আমেরিকান কমিউনিটি। করোনাভাইরাসে দেশ ও প্রবাসে স্বজন-প্রিয়জনদের হারানোর কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, সম্মিতিভাবে সকল অস্থিরতা, দু:সময় কাটিয়ে উঠতে হবে। করোনাভাইরাস থেকে মুক্ত থাকতে সামাজিক দূরত্ব মেনে চলতে হবে, মাস্ক-হ্যান্ড গেøাভস ব্যবহার করতে হবে। জীবন বাঁচানোর জন্য জীবিকারও প্রয়োজন রয়েছে। তিনি চলতি ইউএস সেনসাসস-২০২০ এ নাম তালিকাভুক্ত করা এবং ২৩ জুনের প্রাইমারী নির্বাচনে ভোট দেয়ার ওপর গুরুত্বারোপ করেন। তিনি জানান, আগমী সপ্তাহ থেকে কোন কোন পত্রিকা প্রিন্ট ভার্সন হিসেবে বাজারে আসবে এবং পর্যায়ক্রমে অন্যান্য বাংলা মিডিয়াগুলোও বাজারে আসবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন। মিডিয়াগুলোর প্রকাশনা অব্যাহত রাখতে তিনি অতীতের মতো পৃষ্ঠপোষকদের সার্বিক সহযোগিতা কামনা করেন।

জান ফাহিম বলেন, যারা বাসা-বাড়ীর ভাড়া দিতে পারছেন না বা মর্টগেজ পরিশোধ করতে পারছেন না তাদেরকে অবশ্যই এগুলো পরিশোধ করতে হবে। এগুলো মাফ নেই, তবে পরিশোধের জন্য সময় পাওয়া যাবে। তিনি জানান, বাড়ির মর্টগেজ পরিশোধে ব্যাংক নানান সুবিধা দিচ্ছে। উদ্ভুত পরিস্থিতিতে যারা ভাড়া পরিশোধ করতে পারছেন না, তাদের ল্যান্ডলডের সাথে ভাড়াটিয়াদের চুক্তিতে যাওয়া উচিৎ বলে তিনি মন্তব্য করেন। মর্টগেজ বা বাড়ী ভাড়া মাফ হওয়ার কোন সুযোগ নেই। ল্যান্ডলর্ডদের জন্য গভর্নর নতুন আইন করতে যাচ্ছেন। আমাদের মনে রাখতে হবে মর্টগেজ মওকুফ করা হয়নি। এসব বিষয়ে ব্যাংকগুলোতে খোঁজ নিয়ে বিস্তারিত জানার জন্য তিনি সংশ্লিস্টদের প্রতি আহ্বান জানান। তিনি বলেন, এই করোনার সময়েও অনেকেই বাড়ী ক্রয় করেছেন। তিনি ফ্রেন্ডস সোসাইটির সার্বিক সাফল্য কামনা করেন।

মনজুর আহমেদ চৌধুরী বলেন, সিলেট সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র বদরউদ্দিন কামরান ও বাংলাদেশ সোসাইটির সবাপতি কামাল আহমেদ সহ কভিড-১৯ এ মৃত্যুবরণকারীদের স্মরণ করেন এবং সবার বিদেহী আতœার মাগফেরাত কামনা করে বলেন, উদ্ভুত পরিস্থিতির কারনেই নিউইয়র্কের অন্যান্য মসজিদের মতো জেএমসি’র নিয়মিত কার্যক্রম বিশেষ করে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ ও জুম্মার নামাজ বন্ধ করে দেয়া হয়। ষ্টেট ও সিটির গাইড মেনেই আগামী দিনে জেএমসি খুলে দেয়া হবে। এখন ফাস্ট ফেজের অংশ হিসেবে নিউইয়র্কের লকডাউন আংশিক খুলে দেয়া হয়েছে। আমরা আশা করছি লকডাউন খোলার সেকেন্ড ফেজে মসজিদগুলোও খুলে দেয়া সম্ভব হবে।

শাহ নেওয়াজ বলেন, ইন্স্যুরেন্স পরিশোধের ব্যাপারে অনেকের মাঝেই নিয়ে দ্বিধা-দ্ব›দ্ব বিরাজ করছে। তিনি জানান, ইন্স্যুরেন্স মওকুফ করা হয়নি, করোনাভাইরাস পরিস্থিতিতে শুধুমাত্র কয়েক মাসের জন্য প্রিমিয়াম রিলিভ দেয়া হয়েছে। ফলে ভেঙ্গে ভেঙ্গে ইন্স্যুরেন্সের প্রিমিয়াম পরিশোধ করা যেতে পারে। ইন্স্যুরেন্স হচ্ছে কভারেজ, কেননা কোন ড্রাইভার কাজ না করলেও ব্যক্তিগত কাজে ব্যবহরের সময় দূর্ঘটনা ঘটতে পারে। ফলে ইন্স্যুরেন্স দিতে হবে। সোস্যাল ডিসটেন্স মেনে কাজ করতে বিশেষ করে টিএসসির তালিকাভুক্ত ড্রাইভারগণ কাজ করতে পারেন। তিনি ফ্রেন্ডস সোসাইটির কার্যক্রমের প্রশংসা করেন এবং আগামী দিনে আরো কার্যক্রম বৃদ্ধির আহ্বান জানান। তিনি জানান, আগামী ২৬ জুন শুক্রবার জ্যামাইকা মুসলিম সেন্টারের সামনে বেলা ১টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত করোনাভাইস ও এন্টি বডি টেষ্ট করার ব্যবস্থা করা হয়েছে। এতে ফ্রি টেষ্ট করা যাবে।

সৈয়দ মোস্তফা আল আমীন রাসেল বলেন, ফ্রেন্ডস সোসাইটির পক্ষ থকে ১০০০ এর উপরে পরিবারের মাঝে খাদ্র-সামগ্রী পৌছানো হয়েছে, প্রদান করা হয়েছে ঈদ উপহার। যে কারো সহযোগিতায় রাত-দিন সাড়া দেয়া হয়েছে। তিনি বলেন, ভার্চ্যুয়াল অলোচনা অনুষ্ঠানের আলোচকদের পরামর্শ মোতাবেক জেবিএসএফ’র পারবর্তী কর্মসূচী গ্রহণ করা হবে। পাশাপাশি সামাজিক অ্যাওয়ার্নেস তৈরীতে কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে।

আলোচনা শেষে মরহুম কামাল আহমেদের উপর নির্মিত ডকুমেন্টারী দেখানো হয়।

করোনায় ব্যাহত এইচএসসির প্রস্তুতি, ফল নিয়ে শংকায় পরীক্ষার্থীরা