ক্রিকেট বিশ্বকাপের বাকি আর মাত্র ৩দিন। বিশ্বকাপে বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের সাফল্যের আমেজ অনেকটা সামাজিক যোগাযোগ ও সংবাদ মাধ্যমগুলোতেই সীমিত থেকে যাচ্ছে। চোখে পড়ছে না দেশবাসীর তেমন কোনো উদযাপন। ফুটবল বিশ্বকাপে ভিনদেশি পতাকা উড়ানো নিয়ে উন্মাদনা কাজ করে ঠিকই, কিন্তু ক্রিকেট বিশ্বকাপে নিজের দেশের পতাকা উড়ানো নিয়ে এমন নির্লিপ্ত থাকা কেন? বিশ্বকাপ ক্রিকেটে বাংলাদেশ দলকে নিয়ে উচ্ছ্বসিত মানুষ যেন খুঁজে পাওয়াই এখন দুষ্কর! রাস্তা-ঘাট, দোকানপাট কিংবা বাড়ির ছাদে উড়ছে না দেশের পতাকা। অথচ এক বছর আগে রাশিয়ায় অনুষ্ঠিত বিশ্বকাপ ফুটবল নিয়ে আমাদের উন্মাদনার কমতি ছিল না। দেশের প্রায় সর্বত্র ছেয়ে গিয়েছিল সমর্থিত দলের পতাকায়। মেসি-নেইমারদের নিয়ে চলেছিল তুমুল আলোচনা-সমালোচনা। ভিনদেশী পতাকা উড়িয়ে, জার্সি গায়ে চড়িয়ে, তাদের খেলোয়াড়দের নিয়ে উচ্ছ্বসিত হতে কার্পণ্য না করলেও ক্রিকেটের বিশ্ব আসরে দেশের সমর্থনে আমাদের এ অনাগ্রহ-নীরবতা উদ্বেগের কারণ না হয়ে পারে না।

‘ফুটবল বিশ্বকাপে খেলবে বাংলাদেশ’ নিকট ভবিষ্যতে খেলবে এমন আশাও করা যায় না— এ নিয়ে আমাদের আক্ষেপ থাকতেই পারে। তাই হয়তো ঘটা করে সবাই নিজেদের পছন্দের দলের পতাকা বেছে নিই। কিন্তু বাংলাদেশ ক্রিকেট দল যখন বিশ্বকাপ ক্রিকেটের চূড়ান্ত পর্বে তখন বাংলাদেশের পতাকা প্রতিটি বাড়ির ছাদে শোভা পাওয়া স্বাভাবিক হলেও তা দেখা যাচ্ছে না কোথাও। অথচ বেশিদিন আগের কথা নয়। ২০১৪ সালের ব্রাজি্লে অনুষ্ঠিতব্য ফুটবল বিশ্বকাপে বাংলাদেশের নড়াইলের এক কৃষক নিজের জমি বিক্রি করে দুই মাইল দীর্ঘ পতাকা বানিয়েছিলেন প্রিয় ফুটবল দলের জন্য। তার সে পতাকা দেখতে নড়াইলে ছুটে গিয়েছিলেন জার্মান দূতাবাসের কর্মকর্তারা। শুধু এ কৃষক একা নন, বিশ্বকাপ ফুটবলের আসর শুরু হলে বাংলাদেশ পরিণত হয় পতাকার শহরে। কিশোর থেকে বৃদ্ধ, রিকশা থেকে ট্রাক, দোকান থেকে বাড়ির ছাদ— সব জায়গায় টানানো হয় পছন্দের দলের পতাকা। বাঁশে বিদেশী পতাকা লাগিয়ে বিক্রি করেন অনেক ফেরিওয়ালা। আর ক্রিকেট বিশ্বকাপে বাংলাদেশের প্রতিনিধি থাকা সত্ত্বেও সে উত্তেজনার লেশমাত্র অনুভব করা যাচ্ছে না। যা সত্যিই দুঃখজনক।

বিশ্বকাপ ক্রিকেট নিয়ে মাতামাতি না করার কারণ হিসেবে অনেকেই বলেন, এটি বৈশ্বিক খেলা নয়। গুটিকয়েক দেশই কেবল ক্রিকেট খেলে। বিশ্বের বেশির ভাগ দেশ ক্রিকেট খেলে না, এটি তাদের অনুত্সাহ বা অযোগ্যতা হতে পারে। কিন্তু দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় ক্রিকেটই সবচেয়ে জনপ্রিয় খেলা। যুক্তরাষ্ট্র, চীনসহ প্রভাবশালী অনেক দেশ ক্রিকেটের প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠছে। বিশ্বকাপ ক্রিকেট এখন আর শুধু খেলা নয়, গোটা বিশ্বকে এক স্থানে টেনে আনার শক্তিশালী মাধ্যম। ক্রিকেটের সৌজন্যে বিশ্বে বাংলাদেশের পরিচিতি প্রসারিত হয়েছে। আমাদের সাকিব আল হাসান তিন ঘরানার ক্রিকেটেই সেরা অলরাউন্ডার হওয়ার কৃতিত্ব দেখিয়েছেন। টেস্ট খেলুড়ে ১০টি দলের মধ্যে রয়েছে বাংলাদেশ। সম্প্রতি আয়ারল্যান্ডে ত্রিদেশীয় সিরিজে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার গৌরব অর্জন করেছে আমাদের দামাল ছেলেরা। তাছাড়াও এক দিবসীয় ক্রিকেটেও টাইগারদের আছে বড় কিছু অর্জন। কাজেই ক্রিকেট নিয়ে গর্ব করার মতো যথেষ্ট অনুষঙ্গই আমাদের রয়েছে।

‘বিশ্বকাপ ক্রিকেট’ নাম উচ্চারণের সঙ্গে সঙ্গে ক্রিকেটপ্রেমীদের সারা শরীর আনন্দ ও উত্তেজনায় রোমাঞ্চিত হয়ে ওঠে। সে রোমাঞ্চের প্রকাশ ঘটাতে আমরা দেশের পতাকা অন্তত উড়াতে পারি। পতাকা টানানোর কিছু বিধি-নিষেধ থাকলেও ফুটবলের মতো ক্রিকেটের বিশ্বকাপ মৌসুমে তা নিশ্চয় শিথিল হয়ে যাবে। তাই চলুন, ক্রিকেটের সর্ববৃহত্ মঞ্চে লাল-সবুজের পতাকাবাহীদের সমর্থন জানাতে দেশের সেই পতাকাকেই সু-উচ্চে তুলে ধরি। ক্রিকেটারদের উত্সাহ প্রদান আর দেশপ্রেমের প্রকাশ একই সূত্রে গাঁথা। আমাদের গৌরব আর আত্মত্যাগের বাহক যে নিশান, টাইগারদের সমর্থনে তা উড়ুক প্রত্যাশার মতোই উঁচুতে; প্রত্যেক বাড়িতে, সবখানে।

বিশ্ব ক্রিকেটে এগিয়ে যাক আমার সোনার বাংলা…. শুভকামনা জাতীয় ক্রিকেট দলের প্রতি…।

লেখক- সহ সভাপতি, অ্যারাইভেলস স্পোর্টিং ক্লাব।