বিদায় নিচ্ছে ২০২০ সাল। পুরো বছরটি শেষ হচ্ছে করোনাভাইরাস মহামারির মধ্যে। দুর্যোগকালীন এই সময়টিতে বিয়ানীবাজারে বেড়েছে সামাজিক ও পারিবারিক সহিংসতা। ঘটেছে খুনোখুনির মতো ঘটনা। প্রবাসী অধ্যুষিত এই জনপদে খুন করা যেন মামুলি ব্যাপার হয়ে উঠেছিল শেষ হতে যাওয়া এ বছরে। বেশির ভাগ হত্যাকাণ্ডের আসামিদের গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এদের মধ্যে আবার কেউ কেউ রয়েছেন জামিনে। অন্যদিকে, তুচ্ছ ঘটনার জেরে একের পর এক হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় বিয়ানীবাজারবাসীর মধ্যে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা বেড়েছে।

থানা পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, ২০২০ সালে বিয়ানীবাজার উপজেলায় ৬টি আলোচিত হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। এসবের মধ্যে দুইটি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড ছাড়াও বিচ্ছিন্নভাবে হত্যার ঘটনাও আছে।

বিয়ানীবাজারের আলোচিত ৬টি হত্যাকাণ্ডের চিত্র-

ব্যবসায়ী কামাল হোসেন হত্যাকাণ্ড: ২০১৯ সালে ১০ আগস্ট বিয়ানীবাজার উপজেলার চারখাই বাজারের ব্যবসায়ী কামাল হোসেনকে কৌশলে অপহরণ করে গুম করে তারই দোকান কর্মচারী আমির উদ্দিন। এই কাজে আমির উদ্দিনকে সহযোগিতা করে হেলাল আহমদ, আলী আকবর, আলীম উদ্দিন, আব্দুস শহিদ ও জুবের আহমদ। তারা ব্যবসায়ী কামাল হোসেনের আলীনগর ইউনিয়নের খলাগ্রামে নিজের কেনা নতুন বাড়িতে নিয়া ইলেকট্রনিকের তার দিয়ে হাত-পা বেঁধে হত্যা করে। এরপর মরদেহ প্লাস্টিকের ড্রামে ঢুকিয়ে পুতে ফেলে। এ ঘটনায় ২০২০ সালের ২৩ জানুয়ারি কামাল হোসেনের ভাই জালাল উদ্দিন বাদি হয়ে আমির উদ্দিনসহ ১০জনের নামোল্লেখ করে থানায় মামলা দায়ের করেন। পরে গত ৬ জুলাই ব্যবসায়ী কামাল হোসেনের কর্মচারি আমির উদ্দিনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। এরপরই তার নিখোঁজ রহস্য বেরিয়ে আসে। গ্রেপ্তারের পরদিন ৭ জুলাই ঘাতক আমির উদ্দিনের দেয়া তথ্যে পুলিশ লাশের কংকাল উদ্ধার করে।নিহত ব্যবসায়ী কামাল আহমদের মরদেহ ডিএনটি পরিক্ষার রিপোর্ট এখনো অপেক্ষমাণ। এ ঘটনায় ঘাতক আমির উদ্দিন, তাঁর সহযোগি হেলাল আহমদ ও আব্দুস শহিদসহ ৪জনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তারা বর্তমানে কারাগারে রয়েছে। তবে মামলার অন্য ৬ আসামী এখনো পলাতক রয়েছে। পুলিশের তদন্তে এটি একটি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড হিসেবে উঠে এসেছে।

চাচাতো ভাইয়ের হাতে তরুণ হত্যা: গত ১ মে জমি সংক্রান্ত বিরোধের জের ধরে আপন চাচাতো ভাইয়ের জিআই পাইপের আঘাতে আহত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থান মারা যান উপজেলার মোল্লাপুর ইউনিয়নের লামা নিদনপুর এলাকার আব্দুল কাইয়ুম (২০)। এ ঘটনায় নিহতের পরিবারের পক্ষ থেকে হত্যা মামলা দায়ের করা হয়। এ মামলাটি বর্তমানে আদালতে বিচারাধীন এবং ময়নাতদন্ত (ভিসেরা) রিপোর্টের অপেক্ষায় রয়েছে। তবে মামলার ৪ আসামীর মধ্যে ৩জন বর্তমানে কারাগারে।

অটোরিকশা চালক আব্দুর রউফ হত্যা মামলা: গত ৬ মে বিকালে উপজেলার মাথিউরা ইউনিয়নের নালবহর গ্রামে প্রতিবেশীর সাথে বিরোধে জেরে দু’পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে উভয়পক্ষের ৮/৯জন আঘাতপ্রাপ্ত হন এবং হাসপাতালে চিকিৎসা গ্রহণ করেন। আহতদের মধ্যে হাসপাতালে নেয়ার পথে সিএনজি অটোরিকশা চালক আব্দুর রউফ (৫৫) মৃত্যুবরণ করেন। পরদিন ৭ মে তার ছেলে আব্বাস আহমদ বাদী হয়ে থানায় মামলা দায়ের করে। সর্বশেষ এ ঘটনায় উভয়পক্ষই পাল্টাপাল্টি মামলা দায়ের করে এবং পৃথকভাবে উভয়পক্ষের ৩জন গ্রেপ্তার হন। তবে একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা দাবি করে মামলার তদন্ত শেষ পর্যায়ে বলে জানিয়েছেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা উপপরিদর্শক হারুনুর রশিদ।

চাচীর অনৈতিক সম্পর্ক দেখা ফেলায় শিশু খুন:  গত ৭ জুন আপন চাচী ও তার পরকীয়া প্রেমিকের হাতে নির্মমভাবে খুন হয় উপজেলার কুড়ারবাজার ইউনিয়নের উত্তর আকাখাজানা গ্রামে খছরু মিয়ার ৩ বছরের বয়সী ছেলে শিশু সাহেল আহমদ। চাচীর অনৈতিক সম্পর্ক দেখে ফেলার অপরাধে খুনের শিকার হয় শিশুটি। শিশুটিকে প্রথমে গাছের ডাল দিয়ে মাথায় আঘাত করে অজ্ঞান করা এবং পরে অজ্ঞান অবস্থায় বাথরুমের পানির ড্রামে চাপা দিয়ে রেখে শ্বাসরুদ্ধ করে হত্যা করা হয়। এ ঘটনায় শিশুটির বাবা বিয়ানীবাজার থানায় হত্যা মামলার দায়ের করেন। ঘাতক সুরমা বেগম ও নাহিদুল ইসলামসহ এই হত্যা মামলার তিনজন আসামীই এখন জেলহাজতে। পুলিশের তদন্তে এই হত্যা মামলাটি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড হিসেবে উঠে এসেছে।

অটোরিকশা চালক কয়েছ আহমদ হত্যা মামলা: গত ১৯ জুন বিয়ানীবাজারের শেওলা ইউনিয়নের ঢেউনগরে আপন ভাই-বোনেরা মিলে সিএনজি অটোরিকশা চালক কয়েছ আহমদ (৫০) হত্যা করেছেন- এমন অভিযোগে পরদিন ২০ জুন থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন নিহতের ছেলে সাইদুল ইসলাম। মামলায় ৯জনের নামোল্লেখ করা হয়। পুলিশ এ মামলার আসামীদের দুইজনকে গ্রেপ্তার করে কারাঘারে প্রেরণ করে। অন্য আসামীরা পুলিশের দেয়া তথ্য মতে পলাতক রয়েছেন। ময়নাতদন্ত রিপোর্ট পাওয়ার ভিত্তিতে পুলিশ এ মামলার চুড়ান্ত প্রতিবেদন আদালতে দাখিল করবে। এ মামলা তদন্ত করছেন উপপরিদর্শক জাফর আলম।

ছোট ভাইয়ের হাতে বড়ভাই খুন: গত ৮ অক্টোবর প্রবাসে যাবার জের ধরে উপজেলার মুড়িয়া ইউনিয়নের কোনাগ্রামে ছোট ভাইয়ের দায়ের কোপে ঘটনাস্থলে নিহত হয়েছিলেন বড়ভাই কামরুল হোসেন (২৪)। নিহত যুবক ও ঘাতক দুজনেই মৃত চান্দ আলীর পুত্র। পরে এ ঘটনায় মৃত চান্দ আলীর অপর ছেলে থানায় হত্যা মামলা দায়ের করলে ওইদিন সন্ধ্যায় পার্শ্ববর্তী বড়লেখা উপজেলার শাহবাজপুরে এক আত্মীয়ের বাড়ি থেকে ঘাতক ছোটভাই তানভির হোসেন (১৭) কে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। এই হত্যা মামলার একমাত্র আসামী বর্তমানে ঘাতক তানভির জেলহাজতের কিশোর শোধনাগারে রয়েছে। নিহত কামরুল ইসলামের ময়নাতদন্তের রিপোর্ট এখনো অপেক্ষমান।

বিয়ানীবাজার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হিল্লোল রায় জানান, বছরজুড়ে সংগঠিত ৬টি হত্যাকাণ্ডের মধ্যে দুটি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড আর বাকি ৪টি বিচ্ছিন্ন ঘটনা। তবে এই হত্যাকাণ্ডগুলোর বেশিরভাগেরই রহস্য উদঘাটন ও আসামি গ্রেপ্তার করতে পুলিশ সক্ষম হয়েছে।

ইউপি নির্বাচন নিয়ে 'এবি টিভি'র বিশেষ আয়োজন ‘ভোটের হাওয়া’।। ৮ম পর্বে দুবাগ ইউনিয়ন