সিলেটে গৃহস্থালি পর্যায়ের প্রি-পেইড মিটারের আওতায় আসছেন গ্যাসের গ্রাহকরা। সিলেটের ৩লাখ আবাসিক গ্যাস গ্রাহকের মধ্যে প্রথম পর্যায়ে ৫০ হাজার গ্রাহক আসবেন প্রি-পেইড মিটারের আওতায়। এতে কমবে গ্যাসের অপচয়, দিতে হবে না বাড়তি বিল।

গ্যাসের প্রি-পেইড মিটারের জন্য জালালাবাদ গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন সিস্টেম লিমিটেডের (জেজিটিডিএসএল) পক্ষ থেকে প্রায় ১২০ কোটি টাকার একটি প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। এর মধ্যে কাজ শুরুর জন্য দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে।

আগামী মার্চের মধ্যে এই প্রকল্পের কাজ শুরু করার আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন সংশ্লিষ্টরা।

সিলেটে আবাসিক পর্যায়ে গ্রাহকদের প্রি-পেইড মিটারের আওতায় নিয়ে আসার এটিই প্রথম উদ্যোগ। প্রাথমিক অবস্থায় সিলেটের ৫০ হাজার গ্রাহককে প্রি-পেইড মিটারের আওতায় নিয়ে আসা হবে।

সংশ্লিষ্টরা জানান, অপ্রয়োজনে গ্যাসের চুলা জ্বালিয়ে রাখার কারণে গ্যাসের অপচয় হয়। তা ছাড়া বারবার গ্যাসের দাম বাড়ার কারণে গ্রাহকরা দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন। এই দুই কারণে মূলত গ্রাহক ও প্রতিষ্ঠান দুই পক্ষই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। এ অবস্থায় গৃহস্থালি পর্যায়ে গ্যাসের অপচয় রোধ এবং গ্যাসের কার্যকর ব্যবহারের লক্ষ্যে সিলেটে প্রি-পেইড গ্যাস মিটার স্থাপনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।

জেজিটিডিএসএল-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী শোয়েব আহমদ মতিন বলেন, ‘আমরা দরপত্র আহ্বান করেছি। দরপত্র প্রক্রিয়া শেষ হলে আগামী মার্চের মধ্যে প্রকল্পের মাঠপর্যায়ের কাজ শুরু করতে পারব বলে আশা করছি।’

তিনি আরও জানান, এই প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে ক্রেতাদের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি পাবে। অনেককে ম্যাচের কাঠি বাঁচাতে অপ্রয়োজনে গ্যাসের চুলা জ্বালিয়ে রাখেন। প্রি-পেইড মিটার যুক্ত হলে তারা এ কাজ থেকে বিরত থাকবেন। আবার অনেক গ্রাহক আছেন সারা মাস গ্যাস ব্যবহার না করলেও মাস শেষে নির্ধারিত বিল পরিশোধ করতে হয়। তাদের এখন থেকে আর গ্যাস না জ্বালালে বিল দিতে হবে না। যতটুক গ্যাস ব্যবহার করবেন কেবল ততটুকুর বিল দিতে হবে।

জেজিটিডিএসএল সূত্রে জানা গেছে, ২০১৯ সালে এ ব্যাপারে একটি উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবনা (ডিপিপি) মন্ত্রণালয়ে জমা দেয় জালালাবাদ গ্যাস কর্তৃপক্ষ। প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয় ১১৮ কোটি ৫৫ লাখ টাকা। যাচাই-বাছাই শেষে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে প্রকল্পটি অনুমোদন দেয় মন্ত্রণালয়।

জেজিটিডিএসএল-এর কর্মকর্তারা জানান, এই প্রকল্প ২০২২ সালের ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে বাস্তবায়ন করতে হবে। এটি বাস্তবায়ন হলে প্রতিটি আবাসিক গ্রাহকের মাসিক গড় গ্যাস ব্যবহার ৬৬ ঘনমিটার থেকে ৪০ ঘনমিটারে নেমে আসবে। ফলে গ্রাহকপ্রতি গ্যাস সাশ্রয় হবে গড়ে ২৬ ঘনমিটার। গ্যাস বিতরণ লাইনের লিকেজজনিত অপচয়ও রোধ হবে।

বর্তমানে জালালাবাদ গ্যাসের প্রায় ৩ লাখ আবাসিক গ্রাহক রয়েছেন। প্রথম অবস্থায় ৫০ হাজার গ্রাহকের মধ্যে প্রি-পেইড মিটারের আওতায় নিয়ে আসা হবে। পর্যায়ক্রমে বাকিদেরও মিটারের আওতায় নিয়ে আসা হবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

এ প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে গ্যাসের কার্যকর সরবরাহ ও ব্যবহারের মাধ্যমে গ্যাসের অপচয় রোধ করা যাবে বলে মনে করেন জালালাবাদ গ্যাসের কর্মকর্তারা। সাশ্রয়কৃত গ্যাস নতুন শিল্পকারখানায় ব্যবহার করা সম্ভব হবে বলেও মনে করেন তারা।

এই প্রকল্প বাস্তায়নে গ্রাহকদের সহযোগিতা চেয়ে সম্প্রতি সিলেটের স্থানীয় পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে জালালাবাদ গ্যাস।

এতে বলা হয়, মূল্যবান জাতীয় সম্পদ প্রাকৃতিক গ্যাসের অপচয়রোধ, সাশ্রয়ী, দক্ষ ও টেকসই ব্যবহার নিশ্চিতকরণের লক্ষ্যে সিলেট সিটি করপোরেশন ও তৎসংলগ্ন এলাকায় সংযোগকৃত আবাসিক গ্রাহকদের প্রি-পেইড গ্যাস মিটার স্থাপনের জন্য একটি প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। এই প্রকল্পের আওতায় প্রাথমিকভাবে ৫০ হাজার প্রি-পেইড গ্যাস মিটার স্থাপন করা হবে।

প্রি-পেইড মিটার স্থাপনের লক্ষ্যে শিগগিরই মাঠপর্যায়ে জরিপ কাজ শুরু করা হবে। আগামী মার্চ ২০২২ (সম্ভাব্য) থেকে পর্যায়ক্রমে প্রি-পেইড মিটার গ্রাহক আঙিনায় স্থাপন করা হবে।

প্রকল্পের কাজের জন্য জালালাবাদ গ্যাসের পরিচয়পত্রসহ কর্মীরা গ্রাহকদের বাসাবাড়িতে যাবেন। তাদের সহযোগিতা করতে বিজ্ঞপ্তিতে আহ্বান জানানো হয়েছে।

সংশ্লিষ্টরা জানান, প্রকল্পের আওতায় তথ্যকেন্দ্র, হারানো তথ্য পুনরুদ্ধার কেন্দ্র ও অনলাইন সিস্টেমের প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি এবং সফটওয়্যার স্থাপন করা হবে।

প্রকল্প পরিচালক লিটন চন্দ্র নন্দী বলেন, ‘প্রথমে নগরের ৫০ হাজার গ্রাহকদের এ সেবার আওতায় নিয়ে আসা হবে। পরবর্তী সময়ে পুরো সিলেট নগরই প্রি-পেইড মিটারের আওতায় চলে আসবে। দুই চুলার গ্যাসের জন্য এখন প্রতি মাসে গ্রাহক খরচ করছে ৯৭৫ টাকা। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে ছোট পরিবারের একজন গ্রাহক এক হাজার টাকায় তিন মাস গ্যাস ব্যবহার করতে পারবেন।’