সিলেটের স্থায়ী বাসিন্দা না হয়েও বাসিন্দা সেজে (ভুয়া নাগরিক) অবৈধভাবে হরহামেশাই সরকারি চাকরি নিচ্ছেন। এ কারণে সরকারি চাকরি থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন স্থানীয় মেধাবীরা। অথচ প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির ৭ নম্বর অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, প্রার্থী যে উপজেলার স্থায়ী নাগরিক তার প্রার্থিতা সেই উপজেলায় নির্ধারিত হবে।

সম্প্রতি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষার ফলাফল বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, উত্তীর্ণদের বেশিরভাগই সিলেটের ভুয়া নাগরিক। ভুয়া ঠিকানা দিয়ে যারা চাকরিতে ঢুকতে চাচ্ছেন তাদের বিরুদ্ধে তদন্ত করে শাস্তির দাবি জানিয়ে আন্দোলন করছেন ‘সচেতন সিলেটবাসী’।

জানা গেছে, কিছুদিন অস্থায়ীভাবে বসবাসের সুযোগে স্থানীয় ব্যক্তিদের সহযোগিতায় সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন পরিষদ থেকে ভুয়া নাগরিকত্ব সনদ নিয়ে সরকারি চাকরি নিচ্ছেন। এখন এটা যেন সিলেটে একটি নিয়মেই পরিণত হয়েছে। বর্তমানে এর ভয়াবহতা ব্যাপকহারে বেড়েছে। প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগে উপজেলা কোটাও যেন তাদের দখলে। ফলে স্থানীয় চাকরি প্রার্থীরা চাকরি থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।

এ নিয়ে যেমন চাকরিপ্রার্থীরা হতাশ, তেমনি অভিভাবকরাও দুশ্চিন্তায় রয়েছেন। গত কয়েক বছরে স্থানীয় বাসিন্দা সেজে ভুয়া নাগরিক সনদপত্র নিয়ে সহস্রাধিক প্রার্থী চাকরি নিয়েছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে।

গত ২৪ মে সহকারী শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। ১৫ সেপ্টেম্বর লিখিত পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশিত হয়। লিখিত পরীক্ষায় সিলেটের ১২৯৭ জন উত্তীর্ণ হন। স্থানীয় প্রার্থীদের অভিযোগ, উত্তীর্ণদের মধ্যে এক-চতুর্থাংশই বহিরাগত। সিলেট সদর ও দক্ষিণ সুরমায় অর্ধেকের বেশি বহিরাগত। সিলেটের বিভিন্ন উপজেলায় আত্মীয়স্বজন বা বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরির সুবাধে অনেকে স্থায়ী বাসিন্দা হিসেবে সহকারী শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় অংশ নেন।

লিখিত পরীক্ষায় পাস করেই বিভিন্ন উপজেলার ইউনিয়ন পরিষদ থেকে নাগরিকত্ব সনদ সংগ্রহ করে অথবা জাল সনদ তৈরি করে জমা দেন। এই নাগরিকত্ব সনদেই তারা শিক্ষক হন। যে কারণে স্থানীয় প্রার্থীরা চাকরি থেকে বঞ্চিত হন। পরে তারা দু-তিন বছর পর বদলি হয়ে নিজেদের এলাকায় চলে যান। এতে শিক্ষক সংকট দেখা দেয়। সিলেটের অধিকাংশ বিদ্যালয়েই এমনটাই ঘটছে।

১২-২৬ অক্টোবর লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়া প্রার্থীরা মৌখিক পরীক্ষায় অংশ নেবেন। মৌখিক পরীক্ষার আগে প্রত্যেক প্রার্থীর কাছ থেকে অনলাইন জন্মনিবন্ধন কার্ড সংগ্রহ করে তা যাচাই-বাছাই করে বহিরাগতদের বাদ দিয়ে সঠিক প্রার্থীকে সহকারী শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দেয়ার অনুরোধ জানান আন্দোলনকারীরা।

গত ২৯ সেপ্টেম্বর সিলেট-২ আসনের সংসদ সদস্য, সিলেট বিভাগীয় কমিশনার, জেলা প্রশাসক, জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা, বিশ্বনাথ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবরে স্মারকলিপি দিয়েছেন বিশ্বনাথের আন্দোলনকারীরা।

২০১৮ সালের ২৬ জুন অনুষ্ঠিত (২০১৪ সালের স্থগিতকৃত) ‘সহকারী শিক্ষক’ নিয়োগ পরীক্ষায়ও এমনটা ঘটেছিল। সিলেট বিভাগের বিভাগীয় কমিশনার, জেলা প্রশাসক, জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা বরাবরে অভিযোগপত্র দেয়ার প্রেক্ষিতে সহকারী শিক্ষক হিসেবে নিয়োগপত্র পাওয়া ১১ জনের নাগরিকত্ব সনদ জাল বলে প্রমাণ পায় কর্তৃপক্ষ।

বিশ্বনাথ উপজেলার আন্দোলনকারী প্রণঞ্জয় বৈদ্য অপু বলেন, প্রতি বছরের মতো এবারও বহিরাগতদের দাপটে স্থানীয় প্রার্থীরা নিজের অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। এবার ভুয়া নাগরিক সনদপত্র রোধে আমাদের আন্দোলন চলছে।

ওসমানীনগর উপজেলার আন্দোলনকারী আব্দুল হাদী বলেন, বহিরাগতদের দাপটে স্থানীয়দের অনেকেই বঞ্চিত হচ্ছেন। বহিরাগত লোকজন ভুয়া নাগরিক সনদপত্রের মাধ্যমে চাকরিতে প্রবেশ করে কর্মস্থলে যোগদান করেই কিছুদিন পর নিজ এলাকায় চলে যান।

এ বিষয়ে সিলেট জেলা শিক্ষক নিয়োগ কমিটির সদস্য সচিব ও সিলেট জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মো. বায়েজিদ খান বলেন, কাগজপত্র জমাদানকালে ইতোমধ্যে ভুয়া নাগরিক সনদে আবেদনকারী তিনজনকে বাতিল করা হয়েছে। বাকিদের কাগজপত্রও যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে।

এ ব্যাপারে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরের সিলেট বিভাগীয় উপ-পরিচালক সাফায়েত আলম বলেন, বিষয়টি নিয়ে অবগত হয়েছি। বিষয়টি খতিয়ে দেখছে শিক্ষক নিয়োগ কমিটি।