বিয়ানীবাজার উপজেলার প্রাচীন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান জলঢুপ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা সাত মরণোত্তরসহ প্রাক্তন আরও ৭জন শিক্ষককে সম্মাননা প্রদান করা হয়েছে। শনিবার দিনভর নানা আয়োজনে প্রাক্তন শিক্ষকদের ব্যতিক্রমধর্মী সম্মাননা প্রদান করেছে বিদ্যালয়ের ‘৮২-৮৭’ ব্যাচের শিক্ষার্থীদের হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ।

এদিন এই আয়োজনকে ঘিরে প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের মিলনমেলায় রঙিন হয়ে উঠে বিদ্যালয় ক্যাম্পাস। সোনালী দিনের স্মৃতিচারণ করে কাটিয়েছেন দীর্ঘ সময়। সন্তানদের সাথে নিয়ে তারা ফিরে গেছেন স্কুল জীবনে। সময় করে প্রাক্তন শিক্ষকদের সাথে সন্তানদের পরিচয় করিয়ে দিয়ে পেয়েছেন আত্মতৃপ্তি। এ যেন প্রাক্তন শিক্ষক-শিক্ষার্থীর অন্যরকম মেলবন্ধনে।

প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা (মরণোত্তর) জলঢুপ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রাক্তন প্রধান শিক্ষক মো. আজির উদ্দিন, প্রাক্তন প্রধান শিক্ষক মো. আকমল আলী, প্রাক্তন সহকারী শিক্ষক মো. হারিছ আলী, নৃপেন্দ্র কুমার দাস, রঙ্গ বিহারী দাস, মো. রইছ আলী ও মাওলানা মো. ছরকুম আলী সম্মাননা প্রদান করেন। প্রয়াত শিক্ষকদের সন্তান ও পরিবারের সদস্যরা এ সম্মাননা গ্রহণ করেন। এছাড়া মঞ্চ থেকে স্মারক সম্মাননা, স্মার্ট ফোন, উত্তরীয় গ্রহণ করেন প্রাক্তন সহকারী শিক্ষক (বর্তমান প্রধান শিক্ষক, সিলেট পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়) মো. কবির খান, অদ্বৈত্য কান্ত দাস (অব:), মাওলানা মো. মাহমুদুর রহমান (অব:), বিধান চন্দ্র দাস (অব:), শ্যামা কান্ত দাস (অব:) ও (বর্তমান প্রধান শিক্ষক, ঘুঙ্গাদিয়া-বড়দেশ বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়) মো. সাহাব উদ্দিন।

ব্যতিক্রমী এ অনুষ্ঠানে স্কুলের অবসরপ্রাপ্ত অফিস সহকারী সজল ও সুনীল দাসকেও সম্মান প্রদান করা হয়।

জলঢুপ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জালাল উদ্দিনের সভাপতিত্বে এবং প্রাক্তন শিক্ষার্থী জায়দা কবির জলী ও আব্দুল কুদ্দুছের সঞ্চালনায় সম্মাননা প্রদান অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন সিলেট শিক্ষাবোর্ডের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক রফিক উদ্দিন, বিয়ানীবাজার সরকারি কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ অধ্যাপক দ্বারকেশ চন্দ্র নাথ, সাবেক প্রভাষক প্রেমানন্দ নাথ, দৈনিক সমকাল পত্রিকার (ভারপ্রাপ্ত) সম্পাদক মুস্তাফিজ শফি, উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মৌলুদুর রহমান, বিয়ানীবাজার মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক খালেদ আহমদ, শিক্ষানুরাগী আজিজুর রহমান।

বিয়ানীবাজার সরকারি কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ অধ্যাপক দ্বারকেশ চন্দ্র নাথ বলেন, প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা তাদের সন্তানদের সাথে নিয়ে এসে প্রাক্তন শিক্ষকদের সম্মান জানাচ্ছে। প্রযুক্তির সহযোগিতায় বিশে^র বিভিন্ন প্রান্ত থেকে নিজেদের মধ্যে যোগাযোগ রেখে এরকম একটি অনুষ্ঠানের মাধ্যমে সুনাগরিক গড়ার প্রধান কারিগরদের সম্মান জানাচ্ছে, তাদের খোঁজ খবর রাখছে। একজন শিক্ষকের কাছে এরচেয়ে বড় সম্মান আর কিছু হতে পারে না। তিনি এরকম চর্চা বিদ্যালয়ের অন্যান্য ব্যাচের শিক্ষার্থীদের মধ্যে শুরু হওয়ার আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, এর মাধ্যমে এ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও এখানকার অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীরা উপকৃত হবে।

সম্মাননা পাওয়া শিক্ষকরা সবাই আবেগ আপ্লুত ছিলেন। শিক্ষক জীবনে এ রকম শিক্ষার্থীদের পাঠদান দিতে পেরে জীবন সায়াহ্নে এসে তারা নিজেদের গর্বিত বলে জানান। অবসর প্রাপ্ত শিক্ষক বিধান চন্দ্র দাস বলেন, ভাবতে আপ্লুত হই আমাদের সন্তানরা (শিক্ষার্থীরা) মেধা ও মননে জাতীয় পর্যায়ে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। নিজ নিজ অঙ্গনে তারা সুপ্রতিষ্ঠিত। সারা দেশে এক নামে পরিচিত আমাদের সন্তানরা। নিজেদের কর্মব্যস্ত জীবনে আমাদের ব্যতিক্রম আয়োজনে সম্মাননা প্রদান করেছেন- এটাই শিক্ষক জীবনের সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি।

প্রাক্তন সহকারী শিক্ষক (বর্তমান প্রধান শিক্ষক, সিলেট পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়) মো. কবির খান বলেন, শিক্ষকরা কর্মজীবনে থাকলে যে সম্মান পান, অবসর জীবনে সেভাবে মূল্যায়িত হন না। তবে এর মধ্যে ব্যতিক্রম যে হয় না তার প্রমান জলঢুপ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের এ সম্মাননা প্রদান অনুষ্ঠান। প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে প্রাক্তন শিক্ষক হিসেবে সম্মান পাওয়ায় গৌরববোধ করছি।

প্রাক্তন শিক্ষার্থী দৈনিক সমকাল পত্রিকার ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মুস্তাফিজ শফি বলেন, আমরা হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপের মাধ্যমে প্রথমভারের মতো এ বিদ্যালয়ে প্রাক্তন শিক্ষার্থীর (৮২-৮৭ ব্যাচ) প্রাক্তন শিক্ষকদের সম্মানিত করতে পেরে আনন্দিত হয়েছি। আশা করবো বিদ্যালয়ের অন্যান্য ব্যাচের শিক্ষার্থীরা এরকম আয়োজনের মাধ্যমে এ প্রতিষ্ঠানকে সমৃদ্ধ করবেন। তিনি বলেন, ৮২-৮৭ ব্যাচের হোয়াটসগ্রুপের পক্ষ থেকে এ বিদ্যালয়ের মেধাবী ও দরিদ্র শিক্ষার্থীদের প্রতি বছর বৃত্তি প্রদান করা হবে।

সম্মাননা অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখে প্রাক্তন শিক্ষার্থী আজিজুর রহমান স্বপন, ম্যামল কান্ত দাস ও নজরুল ইসলাম, বিদ্যালয়ের সহকারি প্রধান শিক্ষক মুছব্বির আলী, জলঢুপ দ্বীননাথ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি জাবেদ আহমদ প্রমুখ।

মাদ্রাসা ছাত্রী সীমাকে বাঁচাতে বিয়ানীবাজারের দিনমজুর বাবার আকুতি