কথিত নীচু জাতের ছেলে হওয়াতে একটি ছেলের সাথে নিজেদের ছেলেদের ক্লাস করাকে মানতে পারছে না কিছু অভিভাবক। স্কুল কর্তৃপক্ষকে চাপ দিয়ে বাধ্য করেছিলেন সে যেন স্কুলে না যায়। এই ঘটনার পর থেকে দিনরাত কান্না করতে থাকে শিশুটি। শিশুর কান্না দেখে পরে প্রশাসনের কাছে যেতে বাধ্য হন দরিদ্র পিতা। সামাজিক প্রতিবাদ এবং প্রশাসনের উদ্যোগে অবশেষে তাকে আবারো স্কুলে ক্লাস করার সুযোগ দেওয়া হয়। ঘটনাটি মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলায়।

উপজেলার অগ্রদূত চাইল্ড কেয়ার হোমস্ নামে একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ১৩ জানুয়ারি ছেলে বিরাট বাসপরকে ভর্তি করান পৌর শহরের পরিনগর এলাকার মনা বাসপর। ছেলেকে উন্নতমানের পড়ালেখার জন্য বই ও স্কুল ড্রেস কিনে দেওয়াসহ সকল রকমের প্রস্তুতি নেন দরিদ্র বাবা। কিন্তু হরিজন সম্প্রদায় বলে ছেলেকে ক্লাসে ফিরতে নিষেধাজ্ঞা জারি করেন স্কুল কর্তৃপক্ষ।

বিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েও অভিভাবকদের বাধার কারণে বিদ্যালয়ে যেতে পারছিল না হরিজন সম্প্রদায়ের এই শিশু শিক্ষার্থী। পরে এই ঘটনায় প্রতিকার চেয়ে গত বৃহস্পতিবার শিশুটির অভিভাবক কুলাউড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর একটি লিখিত আবেদন দেন। ঘটনাটি জানাজানি হলে প্রতিবাদ ওঠে চারদিকে । সবার প্রতিবাদ ও উপজেলা নির্বাহীর কর্মকর্তার উদ্যোগে রবিবার থেকে বিরাট বাসপরকে স্কুলে নিয়েছে কর্তৃপক্ষ।

কেন এমন করা হয়েছিল জানতে চাইলে স্কুল কর্তৃপক্ষ জানান, প্রতিষ্ঠানের ছাত্র-ছাত্রীদের বেতনের টাকায় এই স্কুল পরিচালিত হচ্ছে। সরকারি কোন সুযোগ-সুবিধা পাচ্ছেননা তারা। শুধুমাত্র বছরের শুরুতে বই পাচ্ছেন। প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের কিছু অভিভাবক হরিজন সম্প্রদায়ের ছেলে বলে মৌখিক আপত্তি জানালে ওই ছাত্রকে ক্লাসে ফিরতে নিষেধ করা হয়। কারণ হিসেবে তাঁরা জানায়, অভিভাবকরা বলেছেন ওই ছেলে ক্লাসে থাকলে নাকি তাঁদের বাচ্চাদের সমস্যা হবে।

শিক্ষার্থীর পিতা মনা বাসপর বলেন, বিষয়টি নিয়ে স্কুল কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বললে তারা জানায় আমরা হরিজন সম্প্রদায় বলে এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছিল। এই ঘটনা আমার ছোট্ট শিশুর মনে আঘাত দিয়েছে বলে আমার বিশ্বাস। সে বুঝতে পেরেছে সমাজে আমাদেরকে আলাদা করে দেখা হয়। একজন মানবিক ইউএনও স্যার ছিলেন বলে আমার ছেলে আজ পড়তে পারছে ।

স্কুলের প্রধান শিক্ষক নিখিল বর্ধন বলেন, হরিজন সম্প্রদায়ের ছেলে হলেও আমরা তাকে ভর্তি করেছি। কিন্তু অজ্ঞাত কারণে ওই ছেলে ক্লাসে ফিরতে বারণ করেছিলেন কিছু অভিভাবক। প্রতিষ্ঠানের স্বার্থ আমাদের প্রথমে চিন্তা করতে হবে। আমি চাই শহরের অন্যান্য স্কুলেও যেন এই সম্প্রদায়ের ছেলে-মেয়েদের ভর্তির সুযোগ দেয়া হয়। নতুন স্কুল হিসেবে আমাদের বিরুদ্ধে একটি মহল নানা ষড়যন্ত্র চালাচ্ছে।

কুলাউড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) এ টি এম ফরহাদ চৌধুরী বলেন, শিক্ষা সবার মৌলিক অধিকার, এটা থেকে কাউকে বঞ্চিত করা যাবে না। সে যেই সম্প্রদায়ের হউক। লিখিত অভিযোগ পাওয়ার পর স্কুল কর্তৃপক্ষকে আমার কার্যালয়ে ডেকে এনে ওই স্কুল ছাত্রকে ক্লাসে ফিরিয়ে নিতে কঠোর নির্দেশনা দিয়েছি। সে ক্লাস করছে। আগামী মঙ্গলবার স্কুল কর্তৃপক্ষ ও অভিভাবকদের নিয়ে এ বিষয়ে একটি সচেতনতামূলক সভার উদ্যোগ নিয়েছি।