রাশিয়া বিশ্বকাপের পথে ব্রাজিলের যাত্রা এতটাই নির্বিঘ্নে কাটছে যে, নেতৃত্বে অভিজ্ঞ করতে গত ১৬ মাসে ১২ জনকে অধিনায়ক বানিয়েছেন কোচ টিটে। একই পথে আর্জেন্টিনা এত বেশি হোঁচট খেয়েছে যে, গত দুই বছরে কোচই বদল হয়েছে তিনবার। অথচ তিন বছর আগে ব্রাজিলের মাটিতে হওয়া বিশ্বকাপে আর্জেন্টিনা হয়েছিল রানার্সআপ, ব্রাজিল চতুর্থঙ্ঘ সময়ের ব্যবধানে ব্রাজিল এখন রাশিয়া বিশ্বকাপের টিকিট নিশ্চিত করে ফেললেও আর্জেন্টিনা আছে ঘোরতর বিপদে। বাছাইপর্বে বাকি থাকা দুটি ম্যাচের ওপরই নির্ভর করছে লিওনেল মেসিদের বিশ্বকাপ খেলা না-খেলা। ‘অঘ্নিপরীক্ষায়’ পরিণত হওয়া দুই ম্যাচের মধ্যে বড় চ্যালেঞ্জ আবার পয়েন্ট টেবিলে এগিয়ে থাকা পেরুর বিপক্ষে, যে ম্যাচটি বুয়েন্স আয়ার্সে গড়াতে চাচ্ছে বাংলাদেশ সময় আগামীকাল ভোর সাড়ে ৫টায়। সনি টেন থ্রি এ খেলাটি সম্প্রচার করবে।

লাতিন আমেরিকা অঞ্চলের বাছাইয়ে আর্জেন্টিনার অবস্থান এখন পাঁচে। বিশ্বকাপে জায়গা করতে হলে থাকতে হবে প্রথম চারের মধ্যে। পঞ্চম স্থান ধরে রাখলেও সুযোগ থাকবে, সে ক্ষেত্রে পেরোতে হবে প্লে-অফ পর্ব। দক্ষিণ আমেরিকা থেকে সেরা চারের তৃতীয় ও চতুর্থ স্থান দখলের জন্য লড়াইয়ে আছে ছয়টি দল। বর্তমানে তিন নম্বরে থাকা কলম্বিয়া আর আট নম্বরে থাকা ইকুয়েডরের মধ্যে পয়েন্ট ব্যবধান মাত্র ৬। শেষ সপ্তাহের শেষ দুই ম্যাচে তাই ওলটপালট হতে পারে অনেক কিছুই। মেসিদের ভাগ্য অবশ্য এখন পর্যন্ত নিজেদের হাতেই। আগামীকাল পেরু এবং পাঁচ দিন পর ইকুয়েডরকে হারাতে পারলেই ৩০ পয়েন্ট নিয়ে তৃতীয় স্থানে জায়গা হয়ে যাবে। কারণ ব্রাজিল এবং উরুগুয়ে ছাড়া তখন আর কোনো দলেরই ৩০ পয়েন্টে পৌঁছানো সম্ভব নয়। তবে আশাবাদের পাশাপাশি সংশয় আছে। ২০১৫ সালের অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া বাছাইপর্বে ১৬ ম্যাচের যাত্রা খুব একটা সুখকর হয়নি। জয় মাত্র ৬টি, ১৬ ম্যাচে গোল মোটে ১৬টি। অথচ এই আর্জেন্টিনাই ইউরোপের ক্লাব ফুটবলে স্ট্রাইকার সরবরাহ করে সবচেয়ে বেশি। এক মেসি ছাড়া সার্জিও অ্যাগুয়েরো, গঞ্জালো হিগুয়েইন, পাবলো দিবালা, মাওরো ইকার্ডিদের কেউই প্রত্যাশা পূরণ করতে পারেননি।

পরিস্থিতি কঠিন হয়ে গেছে সর্বশেষ দুই ম্যাচ পয়েন্ট খোয়ানোর কারণে। দ্বিতীয় স্থানের দল উরুগুয়ের সঙ্গে গোলশূন্য ড্রয়ের পর তলানিতে থাকা ভেনিজুয়েলার সঙ্গেও ড্র হয় ১-১। শেষের ম্যাচটি ছিল আবার নিজেদেরই মাঠে। আগামীকাল তৃতীয় স্থানের দল পেরুর বিপক্ষে আবারও স্বদেশি মাঠে মেসিরা। ম্যাচটি হবে লা বোমবোনেরা গ্রাউন্ডে। বোকা জুনিয়র্সের এই মাঠটির তিন পাশের গ্যালারি বেশ খাড়া। এই মাঠে খেলতে অস্বীকৃতি জানিয়ে ফিফাকে চিঠি দিয়েছিল পেরু। তবে ভেন্যু স্থানান্তরের আবেদনে সাড়া দেয়নি ফিফা। মজার বিষয় হচ্ছে, এই লা বোমবোনেরা মাঠেই সাফল্যের স্ট্মৃতি আছে পেরুর, আর আর্জেন্টিনার আছে হতাশার গল্প। ১৯৬৯ সালে এই মাঠে আর্জেন্টিনার সঙ্গে ড্র করে পরের বছরের বিশ্বকাপ নিশ্চিত করেছিল পেরু। বাদ পড়ে গিয়েছিল আর্জেন্টিনা। মেসি-ম্যারাডোনার আর্জেন্টিনা বিশ্বকাপে দর্শক হয়ে পড়েছিল সর্বশেষ ১৯৭০ বিশ্বকাপে। ৬৯’র পুনরাবৃত্তি ৪৭ বছর পর আবারও হবে কি-না, তা এখন সময়ের গর্ভে। তবে পেরু কোচ রিকার্ডো গ্যারেসার মতে আর্জেন্টিনাকে হারানোর লক্ষ্যেই নামছে তার দল, ‘আমরা সম্পূর্ণ প্রস্তুত। আমরা এমন দল, যারা যে কোনো দলকে হারাতে পারি।’ পরিহাসের ব্যাপার, পেরুর কোচই একজন আর্জেন্টাইন। ম্যারাডোনার সতীর্থ হিসেবে আর্জেন্টিনা দলে ২০ ম্যাচ খেলা গ্যারেসার অধীনেই পেরু তাদের সর্বশেষ তিন ম্যাচে হারিয়েছে উরুগুয়ে, বলিভিয়া আর ইকুয়েডরকে। আর্জেন্টিনার শঙ্কার জায়গা হতে পারে প্রতিপক্ষে স্বদেশি কোচ থাকার এই প্রসঙ্গটিও; ২০১৫’র কোপা ফাইনালে তারা হেরেছিল একজন আর্জেন্টাইন কোচের অধীনে থাকা চিলির কাছে। মজার বিষয়, সেই আর্জেন্টাইন কোচ জর্জ সাম্পাওলিই এখন মেসিদের ডাগআউটে।

সাম্পাওলির আর্জেন্টিনা কি পারবে শেষ বাধাটা পেরিয়ে যেতে? আর্জেন্টিনার ১৯৭৮ বিশ্বকাপ জয়ের অন্যতম তারকা মারিও কেম্পেস কিন্তু সমস্যাতেই সমাধান দেখছেন, ‘আমাদের ফুটবলাররা ক্লাবের হয়ে দুর্দান্ত খেলেন। কিন্তু আর্জেন্টিনার জার্সি গায়ে চড়ালেই তারা ফুটবল ভুলে যান। তারা নিজেদের খেলাটা খেলতে পারলেই জয় পাওয়া কঠিন নয়।’