একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘনিয়ে আসার অক্টোবর মাসে ১৫-২০ তারিখে নির্বাচনকালীন সরকার গঠন করা হচ্ছে। এ নিবাচনকালীন সরকারে ১৫-১৮ জনকে মন্ত্রিসভা সদস্য করা রাখা হবে। ইতিমধ্যে এ বিষয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে প্রয়োজনীয় সার্বিক প্রস্তুতি শুরু করেছে। এর আগে নির্বাচনকালী সরকার চূড়ান্ত করতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বঙ্গভবনে গিয়ে প্রেসিডেন্ট আবদুল হামিদের সঙ্গে বৈঠক করে সদস্যদের তালিকা চুড়ান্ত করেন। তবে সেটি প্রধানমনন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশন শেষে নতুন সরকারের তারিখ ঘোষণা দিবেন বলে জনা গেছে।

নির্বাচনকালীন সরকারের মন্ত্রিসভায় কারা থাকছেন তা নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে জল্পনা-কল্পনা চলছে। অক্টোবরের চতুর্থ সপ্তাহে সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার ইঙ্গিত দিয়েছেন কমিশন। তফসিল ঘোষণার পর থেকে নির্বাচনকালীন সরকার শুধু নিয়মিত কাজ চালিয়ে যাবে। যদিও এ নিয়ে বর্তমান সংবিধানে তেমন স্পষ্টভাবে কিছু উল্লেখ নেই।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে নির্বাচনকালীন সরকারে যাদের থাকার সম্ভবনা রয়েছে তারা হলেন, আওয়ামী লীগের শিল্প মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী আমির হোসেন আমু, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, বানিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ, কৃষিমন্ত্রী বেগম মতিয়া চৌধুরী, শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ, আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হক। কোনো কারণে আবুল মাল আবদুল মুহিতকে না রাখা হলে সে ক্ষেত্রে পরিকল্পনা মন্ত্রী আহম মুস্তফা কামাল (লোটাস কামাল) থাকতে পারেন অর্থমন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব।

আওয়ামী লীগের বাইরে জাপার চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ, এরশাদের প্রতিনিধি জি এম কাদের, মহাসচিব রুহুল আমিন হাওলাদার, বিরোধী দলীয় নেতা রওশন এরশাদের প্রতিনিধি পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় মন্ত্রী আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, শ্রম প্রতিমন্ত্রী মজিবুল হক চুন্নু, বিরোধীদলীয় হুইপ সেলিম উদ্দিনের নাম আলোচনায় রয়েছে। এমপি না হওয়ায় বর্তমান সংবিধান অনুসারে জাতীয় পাটির জিএম কাদেরকে এ ছোট নির্বাচনকালী সরকারে নেয়া সম্ভব নাও হতে না। সে কারণে জিএম কাদেরকে প্রধানমন্ত্রীর ১০ভাগ টেকনোক্রেট কোটার মধ্যে নেয়ার দাবি করেছেন জাতীয় পার্টি।

এদিকে, বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি ও সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় মন্ত্রী রাশেদ খান মেনন। জাসদ (ইনু) তথ্য মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী হাসানুল হক ইনু এবং জাসদ (আম্বিয়া) মইনউদ্দিন খান বাদলের নাম থাকতে পারে বলে বলে পর্দার আড়ালে আলোচনা হচ্ছে।

জানা গেছে, বর্তমান সংসদের মেয়াদ শেষ হওয়ার আগের ৯০ দিন অর্থাৎ আগামী বছরের ৩১ অক্টোবর থেকে ২০১৯ সালের ২৮ জানুয়ারির মধ্যে নির্বাচন করার সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা রয়েছে। সর্বশেষ ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। একই বছরের ২৯ জানুয়ারি নির্বাচিত সদস্যরা সংসদের প্রথম অধিবেশনে বসেছিলেন। এদিন থেকেই সংসদের ৫ বছরের মেয়াদ শুরু হয়েছে। যা শেষ হবে ২০১৯ সালের ২৮ জানুয়ারি। কিন্তু সংবিধানের ১২৩(৩) অনুচ্ছেদে বলা আছে, ‘সংসদ সদস্যদের সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হইবে (ক) মেয়াদ অবসানের কারণে সংসদ ভাঙিয়া যাইবার ক্ষেত্রে ভাঙিয়া যাইবার পূর্ববর্তী নব্বই দিনের মধ্যে সে কারণে ২০১৯ সালের ২৮ জানুয়ারির আগের ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন শেষ করিতে হইবে’। ভোট গ্রহণের পর ঘোষিত ফলের গেজেট প্রকাশসহ কিছু কাজ থাকে। এ ছাড়া কিছু কেন্দ্রে ভোট স্থগিত হলে সেগুলোও মেয়াদের মধ্যেই শেষ করতে হয়। এ জন্য নির্ধারিত ৯০ দিন শেষ হওয়ার আগেই ভোটের সময় নির্ধারণ করা হয়ে থাকে। সে ক্ষেত্রে ডিসেম্বরের শেষ দিকের যে কোনো দিন ভোটের সম্ভাবনাই বেশি।

সংবিধান অনুযায়ী, একটি সরকার থেকে নির্বাচনের মাধ্যমে আরেকটি সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর হবে। নির্বাচনের সময় আগের নির্বাচিত সরকারই দায়িত্বে থাকবে। আর নির্বাচন অনুষ্ঠানে কমিশনকে সব ধরনের সহায়তা দেবে সরকার। নির্বাচনকালীন মন্ত্রিসভার বিষয়টি পুরোপুরি প্রধানমন্ত্রীর এখতিয়ারে। চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত তিনিই নেবেন। সংবিধান অনুযায়ী সরকারের প্রধান থাকবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ নেতারা এই প্রসঙ্গে কথা বললেও বিএনপি নেতারা স্পষ্ট করে কোন কথা বলতে চান না। বিএনপি নেতাদের বক্তব্য হলো-তারা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অধীনে নির্বাচনে যাবেন না। নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকার গঠন করতে হবে। আর সেই সরকারই সিদ্ধান্ত নিবে কারা নির্বাচনকালীন মন্ত্রিসভায় থাকবেন। বর্তমান সংবিধান আলোকে নির্বাচনকালীন সরকারে বিএনপির থাকার কোনও সুযোগ নেই। কারণ বর্তমান সংসদে দলটির কোনও প্রতিনিধি নেই। নির্বাচনকালীন সরকারে সুশীল সমাজের প্রতিনিধি থাকার কোনও সুযোগ নেই। যদিও আগামী নির্বাচনকালীন সরকারের মন্ত্রিসভায় বিএনপিকে আমন্ত্রণ জানানোর কোন সম্ভাবনা নেই বলে জানিয়েছেন সরকারের নীতিনির্ধারকরা। তবে বিএনপি বা ২০ দলীয় জোটের শরিক কোন প্রভাবশালী নেতা যদি আগ্রহ প্রকাশ করেন সেক্ষেত্রে সরকারের ভিন্ন চিন্তা থাকতে পারে বলে জানা গেছে। এজন্য কেউ কেউ গোপনে সরকারের সাথে যোগাযোগ রাখছেন বলেও গুজবের ডালপালা ছড়াচ্ছে।

সংবিধানে বলা আছে, নির্বাচনকালীন সরকার নয় নির্বাচন পরিচালনা করবে নির্বাচন কমিশন। আর নির্বাচনের সময় বর্তমান সরকারই দায়িত্বে থাকবে। সরকার ভোটের জন্য কর্মকর্তা নিয়োগসহ কমিশন যা চাইবে তা করতে বাধ্য থাকবে। সরকার যেভাবে রয়েছে সেভাবেই চলবে। তাদের অতিরিক্ত দায়িত্ব থাকবে ইসিকে সহযোগিতা করা। নির্বাচন কোনো সরকারের অধীনে অনুষ্ঠানের কথা সংবিধানে নেই। জাতীয় নির্বাচনের সময় সরকারের ধরন পরিবর্তন হবে এমন বিধানও নেই। সংবিধানে আছে ইসির অধীনে নির্বাচন হবে।

গত সপ্তাহে অর্থমন্ত্রী আবদুল মাল আবদুল মুহিত মিডিয়াকে জানান, ২৭ ডিসেম্বর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন হবে। আর ২০ দিনের মধ্যে নির্বাচনকালীন সরকার গঠন করা হবে। ওই সরকারে নিজের থাকার সম্ভাবনার কথাও স্পষ্ট করেছেন তিনি।