কেবলমাত্র ঘুম ভেঙেছে শিশু মেহেদী হাসানের। মাটি কাটা শ্রমিক মা বস্তির ঘুপচি ঘরের এক কোণে বসে রুটি তৈরি করছেন। আর ভ্যানচালক বাবা তখন গাড়ি সাফসুতরো করতে ব্যস্ত। রুটি তৈরি হলেই খেয়ে বের হবেন দুজন।

এমন সময় একটা বিকট শব্দ হয়। শব্দ শুনে ঘর থেকে দৌড়ে বেরিয়ে আসে মেহেদী হাসান (৫)। কুয়াশার অন্ধকারে তার গন্তব্য ঠাওর করতে পারেন না বাবা-মা। কিছুক্ষণ পর ফিরে না আসায় তাকে খুঁজতে বের হন বাবা মঞ্জু মিয়া, মা মনতারা বেগম ও খালা মনবালা।

ঘর থেকে একটু সামনে এসেই খালা খুঁজে পান মেহেদীকে। মাটিতে পড়ে আছে ছোট শরীর। শরীর থেকে রক্ত ঝরছে।

প্রথমে তারা বুঝতে পারেননি। পরে অনতিদূরের আগুন এবং ফায়ার সার্ভিস ও পুলিশের তৎপরতা দেখে ঘটনা বুঝতে পারেন।

সাথেসাথেই তারা মেহেদীকে নিয়ে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের দিকে রওয়ানা দেন। কিন্তু ভোরের সড়কে গাড়ি তেমন নেই। ফলে সড়কেই দেরি হয়ে যায়। হাসপাতালে আসার পর চিকিৎসকরা মেহেদীকে মৃত ঘোষণা করেন।

ছেলেকে হারিয়ে পাগলপ্রায় অবস্থা মা মনতারা বেগমের। চিৎকার করে কাঁদছেন। বিলাপ করে বলছেন- চোখের পলকেই হারিয়ে গেলে ছেলেটা। তাকে স্বান্ত্বনা দিচ্ছেন স্বজনরা।

কথা হয় মেহেদীর খালা মনবালার সাথে। তিনি বলেন, ভোরে আমাদের ঘরের পাশে একটা এক্সিডেন্ট ঘটে। দুই গাড়ির এক্সিডেন্টের পর আগুন লেগে যায়। এই শব্দ শুনেই মেহেদি ঘরের বাইরে গিয়েছিলো। এসময় গাড়ির বিস্ফোরিত সিলিন্ডারের একটি টুকরো এসে মেহেদীর উপর পড়ে।

খালা জানান, তার নিজের দুই মেয়ে। আর মেহেদীরা দুই বোন এক ভাই। চার বোনের পর একমাত্র ভাই হওয়ায় সবার আদরের ছিলো মেহেদী। তাদের মূল বাড়ি সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজারে। গোলাপগঞ্জের হেতিমগঞ্জে একটি কলোনিতে বামা-মায়ের সাথে থাকতো সে।

গোলাপগঞ্জ থানা পুলিশ জানায়, বুধবার ভোর সাড়ে ৫টার দিকে সিলেট-জকিগঞ্জ সড়কের গোলাপগঞ্জে ট্রাক-মাইক্রোবাসের সংঘর্ষের পর দুটি গাড়িতেই আগুন লেগে যায়। এতে মাইক্রোবাসটি পুরো ভস্মীভূত হয়ে পড়ে। আগুনে পুড়ে মাইকোবাসের চালকসহ তিন যাত্রী নিহত হন। আর সিলিন্ডারের টুকরো পড়ে নিহত হয় পাশের বস্তির এক শিশু। এতে আরও ৪ যাত্রী দগ্ধ হয়েছেন।

মেহেদি ছাড়া নিহত অন্যরা হলেন- বিয়ানীবাজার উপজেলার চারখাই ইউনিয়নের বারইগ্রামের মৃত কুনু মিয়ার ছেলে রাজন আহমদ (২৭), একই গ্রামের আব্দুল জলিলের ছেলে ও মাইকোবাস চালক সুনাম আহমদ (২৬), নিহত অপর একজনের পরিচয় জানা যায়নি।

গোলাপগঞ্জের হেতিমগঞ্জ পশ্চিম বাজার এলাকার মোল্লাগ্রাম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় সংলগ্ন স্থানে এ দুর্ঘটনা ঘটে।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, বুধবার ভোর সাড়ে ৫টার দিকে মোল্লাগ্রাম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় সংলগ্ন স্থানে ট্রাকের পেছনে নোহা মাইক্রোবাসটি ধাক্কা দেয়। এতে মাইক্রোবাস ও ট্রাকের ভিতরের গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরিত হয়ে আগুন ধরে যায়।

এ ঘটনায় তাৎক্ষণিক এলাকাবাসী ৯৯৯ এ কল দিয়ে গোলাপগঞ্জ ফায়ার সার্ভিসকে ডেকে আনেন। তারা এসে নিহতদের উদ্ধার করেন এবং গুরুতর আহত অবস্থায় ৪ জনকে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেক হাসপাতালে প্রেরণ করেন।

সিলেট জেলা পুলিশের গোলাপগঞ্জ সার্কেলের এএসপি রাশেদুল হক চৌধুরী বলেন, দুর্ঘটনায় মাইক্রোবাসের ভেতরের চালক-যাত্রীসহ ৩ জন মারা যান। আর সিলিন্ডারের টুকরো ছিটকে পড়ে পাশের বস্তির এক শিশু মারা গেছে। ঘটনাস্থল থেকে একশো ফুট দুরে সিলিন্ডারের টুকরো ছিটকে গিয়ে ওই শিশুটিকে আঘাত করে। নিহতদের লাশ ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে রাখা হয়েছে এবং আহতদের একই হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

বিয়ানীবাজারে বাড়ছে এজেন্ট ব্যাংক, গ্রামীণ জনপদে মিলছে ব্যাংকিং সেবা