উত্তর আমেরিকা প্রবাসী বাংলাদেশী ব্যবসায়ীদের সাথে বাংলাদেশের ব্যবসায়ীদের মধ্যকার সৌহার্দ্য-সম্প্রীতি জোরদার করার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের অর্থনীতিকে আরো শক্তিশালী করার প্রত্যয়ে এবারো অনুষ্ঠিত হলো উত্তর আমেরিকায় ব্যবসায়ীদের মুলধারার সংগঠন আমেরিকা বাংলাদেশ বিজনেস অ্যালায়েন্স (এবিবিএ)-এর ১১তম বার্ষিক সামিট। গত ২৫ সেপ্টেম্বর বুধবার রাতে নিউইয়র্কের লাগোর্ডিয়া ম্যারিয়ট হোটেলের বলরুমে আয়োজিত সামিটে প্রধান অতিথি ছিলেন বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন এবং বিশেষ অতিথি ছিলেন বন ও পরিবেশ মন্ত্রী শাহাবুদ্দীন। এতে কি নোট স্পীকার ছিলেন রূপালী ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান ড. আহমেদ আল কবীর।

যুক্তরাষ্ট্রের মূলধারা রাজনীতিবিদ, এবি মিডিয়া গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও এবিবিএ’র প্রেসিডেন্ট ফখরুল ইসলাম দেলোয়ারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এই সামিটে স্বাগত বক্তব্য রাখেন এবিবিএ’র বিজনেজ সামিট-এর কো কনভেনর বিলাল চৌধুলী অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন এফবিসিআই সিনিয়ার সহ সভাপতি মো. মুন্তাকিম আশরাফ, সিলেট জেলা পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান শামিম আহমেদ, কনভেনর বিশিষ্ট ফার্মাসিটিক্যাল ব্যবসায়ী জহিরুল ইসলাম, বিশিষ্ট ইম্পোর্টার হক গ্রুপের চেয়ারম্যান একেএম ফজলুল হক, মেম্বার সেক্রেটারী যুক্তরাষ্ট্রস্থ বিয়ানীবাজার সমিতির সভাপতি ও এবি মিডিয়া গ্রুপের অন্যতম পরিচালক মস্তফা কামাল, ভাইস চেয়ার বিশিষ্ট ব্যবসায়ী শাহ নেওয়াজ, এবিবিএ’র সেক্রেটারী সিপিএ ইয়াকুব এ খান, মূলধারার রাজনীতিক মোর্শেদ আলম, বিশিষ্ট রাজনীতিক এম এ সালাম, ফোবানার সাবেক কনভেনর এমাদ চৌধুরী, আগামী প্রাইমারী নির্বাচনে কংগ্রেসওস্যান প্রার্থী বদরুন নাহার খান মিতা, কুইন্স বরো প্রেসিডেন্ট প্রার্থী এলিজাবেথ ক্রাউলী, কমিউনিটি অ্যাক্টিভিষ্ট নাসির আলী খান পল, রেজাউল করীম চৌধুরী প্রমুখ।

বিজনেস সম্মেলনের মূল পর্বের আগে এবিবিএ’র আয়োজনে ‘বিজনেস মাইন্ড সেট’ শীর্ষক বিজনেস ডেভোলেপমেন্ট সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়। এই সেমিনারে প্যানেল আলোচক ছিলেন কমিউনিটি অ্যাক্টিভিষ্ট মোহাম্মদ এন. মজুমদার ও চেজ ব্যাংকের ম্যানেজার জুবের চৌধুরী। এছাড়াও বক্তব্য রাখেন বিশিষ্ট রিয়েলেটর মোহাম্মদ জন ফাহিম, চেজ ব্যাংকের এসিস্টেন্ট ভাইস প্রেসিডেন্ট মাস্টার সোহেল ও ড. আপটার গাঞ্জু।

অনুষ্ঠানের শুরুতে পবিত্র কোরআন থেকে তেলাওয়াত করেন ইমাম কাজী কাইয়্যুম এবং বাইবেল থেকে পাঠ করেন ডা. টমাস দুলু রায়। এরপর বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় সংগীত পরিবশেন করা হয়।

 

সামিটে কী নোট স্পীকার ড. আহমেদ আল কবীর তার বক্তব্যে বাংলাদেশের উন্নয়ন ও অগ্রগতি এবং দেশের অর্থনীতিতে প্রবাসীদের ভূমিকার কথা তুলে ধরে বলেন, দেশে বিনিয়োগের সকল সুযোগ রয়েছে। সরকারের দীর্ঘ মেয়াদী পরিকল্পনার জন্যই বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। বিদেশি বিনিয়োগ (এফডিআই)-কে আইন দ্বারা সুরক্ষা প্রদান করা হয়েছে। বিনা বাধায় লাভ এবং আসলসহ পুঁজি প্রত্যাবাসন সুবিধা রয়েছে। নতুন শিল্প কারখানা এবং সরকারি ও বেসরকারি খাতে বিনিয়োগের জন্য দেশের বিভিন্ন স্থানে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। এসব অঞ্চলের চাহিদা মোতাবেক প্রবাসীরা যার যার সুবিধাজনক ব্যবসায় বিনিয়োগ করতে পারেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশ বর্তমানে বিশ্বে দ্বিতীয় তৈরী পোষাক রপ্তানীকারক, সবজি ও মিঠা পানির মৎস উৎপাদনকারী দেশ হিসেবে তৃতীয় শীর্ষ আর চাল উৎপাদনকারী দেশ হিসেবে চতুর্থ শীর্ষ। ফলে বাংলাদেশ এখন শাক-সবজী, মাছ আর খাধ্যে স্বয়ং সম্পূর্ন। উন্নয়নের এই ধারা অব্যাহত থাকলে শীগরই বাংলাদেশ শীর্ষ রপ্তানীকারকের কাতারে উঠে আসবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. মোমেন বলেন বাংলাদেশে বিনিয়োগের সম্ভাবনা রয়েছে। এই সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে হবে। এজন্য দেশের ও প্রবাসের বাংলাদেশী ব্যবসায়ীদের অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে হবে। তিনি বলেন, প্রবাসীরা দেশে বিনিয়োগ করতে চাইলে সরকার সার্বিক সহযোগিতা দেবেন।

ড. মোমেন বলেন, রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধানে প্রত্যেক প্রবাসীকে যার যার অবস্থান থেকে ভয়েস রেইজ করতে হবে। তিনি আরো বলেন, আজ যদি ইউএস কংগ্রেস বা সিনেটে বাংলাদেশী-আমেরিকান নির্বাচিত থাকতেন তাহলে রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধান অনেক সহজ হতো। তিনি মূলধারার রাজনীতিতে প্রবাসী বাংলাদেশীদের অধিকতর সক্রিয় হওয়ার আহ্বান জানান।

বন ও পরিবেশ মন্ত্রী শাহাবুদ্দীন তার বক্তব্যে প্রবাসীদের ঐক্যবদ্ধ থেকে সরকারের উন্নয়ন অগ্রগতির ধারা অব্যাহত রাখবেন এমনটাই প্রত্যাশা করে বলেন, শেখ হাসিনার সরকার ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত করতে মেগা প্রকল্প হাতে নিয়েছেন। তিনি প্রবাসীদের দেশে বিনিয়োগের আহ্বান জানান।

অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জাতিসংঘে সফররত বাংলাদেশের ব্যবসায়ী প্রতিনিধি দলের সদস্য ব্যবসায়ীরা ছাড়াও সাবেক এমপি সাবিনা আকতার তুহিন, বেসিস-এর প্রেসিডেন্ট সাইদ আলমাস, বিকেএসপি ওভারসিস এসোসিয়েশন-এর সাবেক প্রেসিডেন্ট জেড আর খান কাকন এব যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী বাংলাদেশী ব্যবসায়ীরা সহ প্রবাসের বিভিন্ন শ্রেনী ও পেশার বিপুল সংখ্যক বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন। সমগ্র অনুষ্ঠান উপস্থাপনায় ছিলেন এবিবিএ’র জয়েন্স কনভেনর এএফ মিসবাহউজ্জামান ও নিউজ প্রেজেন্টার শামসুন্নান নিম্মি।

অনলাইন স্টোর শপএনহল-এর উদ্বোধন: এদিকে অনুষ্ঠানের শেষ পর্যায়ে পররাষ্ট মন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন ও পরিবেশ বিষয়ক মন্ত্রী শাহাব উদ্দিন ফিতা কেটে যুক্তরাষ্ট্র ভিত্তিক অনলাইন স্টোর শপএনহল-এর বাংলাদেশের কার্যক্রম উদ্বোধন করে। ফলে বাংলাদেশ থেকে লোকাল ব্যাংক কার্ড ব্যবহার করে যেকোনো আন্তর্জাতিক ই কমার্স সাইট, যেমন আমাজন, ইবে, সেফোরা, ওয়ালমার্ট থেকে পণ্য কেনাকাটা এবং আন্তর্জাতিক শিপিং সুবিধায় বাংলাদেশে পণ্য ডেলিভারি পাওয়ার সুবিধা পাওয়া যাবে। এসময় অন্যান্য অতিথিদের সাথে শপএনহল-এর প্রতিষ্ঠাতা মুহাম্মদ এ কাদের ভূইয়া।