প্রতিবেশগত গুরুত্বপূর্ণ এলাকা হিসেবে বাংলাদেশেও দুটি রামসার এলাকা রয়েছে। একটি সুন্দরবন। অপরটি টাঙ্গুয়ার হাওর। ২০০০ সালে সুনামগঞ্জের টাঙ্গুয়ার হাওরকে রামসার সাইটের অন্তর্ভুক্ত করা হয়। এরপর থেকেই হাকালুকি হাওরকে রামসার সাইটের অন্তুর্ভুক্ত করার দাবি উঠে। মৎস্য অভয়াশ্রম, পাখির অভয়াশ্রম, উদ্ভিদ ও জলাভূমির আধার হাকালুকি হাওর রামসার সাইটের অন্তর্ভুক্ত হলে প্রাণ-প্রকৃতির সংরক্ষণ হবে বলে মতামত দেন সংশ্লিষ্টরা।

এবার এশিয়ার বৃহত্তম মৌলভীবাজার এবং সিলেটের কিছু অংশ নিয়ে অবস্থিত হাকালুকি হাওরকে রামসার সাইট হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করার লক্ষ্যে উদ্যোগ গ্রহণ করেছে সরকার। আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে সংশ্লিষ্টদের হাকালুকি হাওরের যাবতীয় তথ্য মন্ত্রণালয়ে পাঠানোর নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

এ বিষয়ে করণীয় নিয়ে মৌলভীবাজারের একটি তারকা হোটেলে পরিবেশ অধিদফতরের মহাপরিচালক ড. একেএম রফিক আহাম্মদের সভাপতিত্বে শুক্রবার দুপুরে একটি কর্মশালার আয়োজন করা হয়। কর্মশালায় উপস্থিত থাকা মৌলভীবাজারের জেলা প্রশাসক নাজিয়া শিরীন বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

এ সময় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের সচিব আবদুল্লাহ আল মোহসীর চৌধুরী এবং বিশেষ অতিথি ছিলেন একই মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব ড. এসএম মনজুরুল হান্নান খান।

অংশগ্রহণকারী সূত্রে জানা গেছে, আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে হাকালুকি হাওরের নির্ধারিত তথ্যাদি রামসার সচিবালয়ের চাহিদা অনুসারে নির্ধারিত ছকে পূরণ করে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ে পাঠানোর নির্দেশ দেয়া হয়। এরপর হাওরকে রামসার সাইট ঘোষণার জন্য প্রস্তাব পাঠানো হবে।

কর্মশালায় উপস্থিত ছিলেন, মৌলভীবাজারের জেলা প্রশাসক নাজিয়া শিরীন এবং হাকালুকি হাওর সংলগ্ন সব উপজেলার উপজেলা নির্বাহী অফিসার, মৎস্য অফিসার, কৃষি অফিসার ও উপজেলা প্রকৌশলীবৃন্দ।

মৌলভীবাজারের জ্যৈষ্ঠ মৎস কর্মকর্তা সুলতান মাহমুদ জানান, পরিবেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ জলাশয় সংরক্ষণের উদ্দেশ্যে ১৯৭১ সালে ইরানের রামসারে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের অংশগ্রহণে একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। যা রামসার কনভেনশন নামে বিশ্বব্যাপী পরিচিত। বর্তমানে এ চুক্তির অধীনে বিশ্বের ১৬৮টি দেশ গুরুত্বপূর্ণ জলাশয় সংরক্ষণ ও টেকসই ব্যবস্থাপনা নিয়ে কাজ করছে। বিভিন্ন দেশের জলজ প্রতিবেশের গুরুত্বের উপর নির্ভর করে একেকটি জলাশয় রামসার এলাকা হিসেবে স্বীকৃতি পেয়ে থাকে। বর্তমানে পৃথিবী ব্যাপী দুই হাজার দুইশর বেশি রামসার এলাকা রয়েছে। যার মোট আয়তন ২০৮ মিলিয়ন হেক্টরেরও বেশি। বিভিন্ন দেশের অভ্যন্তরীণ প্রতিবেশগত গুরুত্বপূর্ণ এলাকা ছাড়াও আন্তঃদেশীয় জলাশয় যেমন দুই বা ততোধিক দেশের মধ্য দিয়ে বয়ে চলা নদ-নদী ইত্যাদিও রামসার এলাকার তালিকাভুক্ত। বাংলাদেশেও দুইটি রামসার এলাকা রয়েছে, একটি সুন্দরবন, অপরটি টাঙ্গুয়ার হাওর।

হাকালুকির জন্য নির্দিষ্ট ফরমে আমরা আবেদন করার পর রামসার কর্তৃপক্ষ তা যাচাই বাচাই করে দেখবে। এরপর যোগ্যতা অনুসারে তারা ঘোষণা দেবে।

মৌলভীবাজারের জেলা প্রশাসক নাজিয়া শিরীন জানান, হাকালুকিকে রামসার সাইট ঘোষণা করলে নির্দিষ্টনীতিমালা মেনে আন্তর্জাতিকভাবে এর পরিবেশ প্রকৃতি রক্ষায় ব্যবস্থা নেবে যা হাকালুকির জন্য এবং আমাদের অনেক উপকারী হবে।

তথ্যসূত্র- জাগোনিউজ২৪।