সিলেট আওয়ামী লীগকে ঢেলে সাজানো হচ্ছে। আগামী মাস থেকে এ প্রক্রিয়া শুরু হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে গত বৃহস্পতিবার সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দলীয় প্রার্থী বদর উদ্দিন আহমদ কামরানের সাক্ষাতের পর এই আভাস পাওয়া গেছে।

সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি বদর উদ্দিন আহমদ কামরান সমকালকে জানিয়েছেন, নির্বাচনের পর তিনি গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাৎ

করেছেন। ওই সময়ে তার সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর সিটি নির্বাচন সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে বিশদ আলোচনা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী তার প্রতি ইতিবাচক মনোভাব দেখিয়েছেন।

আওয়ামী লীগের কয়েকজন কেন্দ্রীয় নেতা বলেছেন, এই সাক্ষাতের সময় দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আবদুর রহমান, দুই সাংগঠনিক সম্পাদক এ কে এম এনামুল হক শামীম ও খালিদ মাহমুদ চৌধুরীসহ কয়েকজন কেন্দ্রীয় নেতা উপস্থিত ছিলেন। তাদের কয়েকজন সমকালকে জানিয়েছেন, সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দলীয় প্রার্থীর পরাজয়ের জন্য অনেক কিছুর সঙ্গে দলের অভ্যন্তরীণ সংকটও কিছুটা দায়ী। এ নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা হয়েছে।

ওই সাক্ষাতের সময় বলা হয়েছে, সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ওয়ার্ড কাউন্সিলর পদে দলের একজন কেন্দ্রীয় নেতার আত্মীয় যে ভোট পেয়েছেন, তার দশ ভাগের একভাগ ভোটও পাননি মেয়র পদে দলীয় প্রার্থী। এটা একেবারেই অপ্রত্যাশিত। এর মধ্য দিয়ে গৃহদাহের চিত্র অনেকটাই স্পষ্ট হয়েছে। এ প্রসঙ্গে কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট মিসবাহ উদ্দিন সিরাজের নাম উল্লেখ করে বলা হয়েছে, নির্বাচনে তার ভূমিকাও ছিল কিছুটা প্রশ্নবিদ্ধ।

মিসবাহ উদ্দিন সিরাজ ময়মনসিংহ বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক। তিনি এই বিভাগের জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের সাংগঠনিক কর্মকাণ্ডে এখন পর্যন্ত ইতিবাচক ভূমিকা রাখতে পারেননি বলে ওই সাক্ষাতের সময় বলা হয়েছে। মিসবাহ উদ্দিন সিরাজ এর আগে সিলেট বিভাগের সাংগঠনিক সম্পাদক ছিলেন। ওই সময়েও তিনি সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করতে পারেননি বলে বৈঠকে উল্লেখ করা হয়।

মিসবাহ উদ্দিন সিরাজ সমকালকে জানিয়েছেন, সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বিজয়ের জন্য তারা সর্বস্তরের নেতাকর্মীদের নিয়ে প্রাণপণ চেষ্টা করেছেন। কিন্তু দুর্ভাগ্য, প্রত্যাশিত জয় পাওয়া যায়নি। আর পরাজয়ের পর যা হওয়ার তাই হয়েছে। পরাজয়ের জন্য অভ্যন্তরীণ বিবাদের কথা বলা হচ্ছে। কিন্তু সিলেটে গৃহদাহ নেই। তিনি জানান, তার মা অসুস্থ। তিনি সেই অসুস্থ মাকে দেখার জন্য প্রধানমন্ত্রীর অনুমতি নিয়ে লন্ডন গেছেন। আবার নির্বাচনের আগেই ফিরে এসেছেন। অথচ এ নিয়েও প্রশ্ন তোলা হয়েছে।

এদিকে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সিলেটের সাবেক মেয়র বদর উদ্দিন আহমদ কামরানের বৈঠকের পর সিলেট মহানগর ও জেলা আওয়ামী লীগে এক ধরনের ভীতি পেয়ে বসেছে। নেতারা বলছেন, শোকের মাস আগস্টের পর সেপ্টেম্বর থেকেই সিলেট মহানগর ও জেলা আওয়ামী লীগকে ঢেলে সাজানোর প্রক্রিয়া শুরু হবে। সেই ক্ষেত্রে একজন কেন্দ্রীয় নেতার পাশাপাশি সিলেটের তিন নেতার বিরুদ্ধে সাংগঠনিকভাবে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ারও চিন্তাভাবনা চলছে। এই চার নেতার বিরুদ্ধে সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দলীয় প্রার্থীর বিরোধিতা করার অভিযোগ রয়েছে।

আওয়ামী লীগের সিলেট বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন সমকালকে জানিয়েছেন, সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দলীয় প্রার্থীর পরাজয়ের বিষয় নিয়ে এখন পর্যন্ত কোনো মূল্যায়ন বৈঠক হয়নি। তবে সাংগঠনিক দুর্বলতার কারণে ওই নির্বাচনে আওয়ামী লীগ প্রত্যাশিত জয় পায়নি বলে প্রাথমিকভাবে মনে করা হচ্ছে। এ অবস্থায় সিলেট মহানগর ও জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক দুর্বলতা নিরসনে দ্রুতই কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণের চিন্তাভাবনা করা হচ্ছে। সেপ্টেম্বর থেকে এ প্রক্রিয়া শুরুর সম্ভাবনা রয়েছে।

২০১১ সালের ২২ নভেম্বর সম্মেলনের মাধ্যমে গঠিত হয় সিলেট মহানগর ও জেলা আওয়ামী লীগ। সেই থেকে মহানগর সভাপতি হিসেবে বদর উদ্দিন আহমদ কামরান, সাধারণ সম্পাদক হিসেবে আসাদ উদ্দীন আহমদ, জেলার ভারপ্রাপ্ত সভাপতি হিসেবে অ্যাডভোকেট লুৎফর রহমান ও সাধারণ সম্পাদক হিসেবে শফিকুর রহমান চৌধুরী দায়িত্ব পালন করে আসছেন।

সূত্র: সমকাল