সুনামগঞ্জের হাওরে ফসল রক্ষা বাঁধ নির্মাণে দুর্নীতির অভিযোগে দায়ের হওয়া মামলার আসামি ঠিকাদার খায়রুল হুদা চপলকে গ্রেপ্তার করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। মঙ্গলবার (১৫ আগস্ট) রাত পৌনে ১২টার দিকে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।

চপল সুনামগঞ্জ যুবলীগের আহ্বায়ক ও সুনামগঞ্জ চেম্বার্স অফ কমার্সের সভাপতি ।

দুদকের জনসংযোগ কর্মকর্তা প্রণব কুমার ভট্টাচার্য জানান, বিদেশ (সিঙ্গাপুর) যাওয়ার চেষ্টাকালে রাত পৌনে ১২টার দিকে বিমানবন্দরের আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের (এপিবিএন) সাহায্যে খায়রুল হুদা চপলকে গ্রেপ্তার করা হয়। এপিবিএন পুলিশই তাকে গ্রেপ্তার করে। পরে দুদকে সোপর্দ করে।

সুনামগঞ্জের হাওরের হাজার কোটি টাকার ফসলহানির ঘটনায় পাউবোর কর্মকর্তা, ফসল রক্ষা বাঁধের কাজের ঠিকাদার ও প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির (পিআইসি) ৬১ জনের বিরুদ্ধে গত ২ জুলাই সুনামগঞ্জ সদর থানায় দুদকের সহকারী পরিচালক ফারুক আহমদ বাদী হয়ে একটি মামলা দায়ের করেন।

মামলার পাউবোর কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ক্ষমতার অপব্যবহার, দুর্নীতি, ঠিকাদারদের সঙ্গে অবৈধ যোগসাজশের অভিযোগ আনা হয়েছে। আর ঠিকাদারদের বিরুদ্ধে ঠিক সময়ে কাজ শেষ না করে কৃষকদের ক্ষতিসাধনের অভিযোগ আনা হয়েছে। খায়রুল হুদা চপল ছিলেন বাঁধ নির্মান কাজের প্রধানতম ঠিকাদার।

মামলা দায়েরে দিনই পাউবোর সাবেক নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আফছার উদ্দীন এবং মেসার্স ইব্রাহিম ট্রেডার্সের স্বত্বাধিকারী মো. বাচ্চু মিয়াকে গ্রেপ্তার করা হয়।

সুনামগঞ্জে গত এপ্রিলে পাহাড়ি ঢল ও অতিবৃষ্টিতে ফসল রক্ষা বাঁধ ভেঙে ১৫৪টি হাওরের বোরো ফসল তলিয়ে যায়।

জেলা প্রশাসনে হিসাব অনুযায়ী, সুনামগঞ্জে এবার ১৫৪টি হাওরে ২ লাখ ২৩ হাজার ৮২ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের আবাদ হয়েছিল। এর মধ্যে পাহাড়ি ঢলে বাঁধ ভেঙে ১ লাখ ৬৬ হাজার ৬১২ হেক্টর জমির ধান তলিয়ে গেছে। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে জেলার ৩ লাখ ২৫ হাজার ৯৯০ কৃষক পরিবার। তবে স্থানীয় কৃষকরা জানিয়েছেন, হাওরের ৯০ শতাংশ ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

হাওরে ফসলহানির পর ফসল রক্ষা বাঁধ নির্মাণে ব্যাপক অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে। এরপর দুদক গত ১৩ এপ্রিল হাওরের ফসলহানি ও বাঁধ নির্মাণে অনিয়মের তদন্তে দুদকের পরিচালক বেলাল হোসেনকে প্রধান করে তিন সদস্যের একটি অনুসন্ধান কমিটি গঠন করে।

এরপর ১৫ এপ্রিল পাউবোর সুনামগঞ্জ কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আফছার উদ্দিনকে সুনামগঞ্জ থেকে প্রত্যাহার করা হয়। ফসলহানির ঘটনায় ৩০ মে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয় আরেকটি তদন্ত কমিটি গঠন করে। ২ মে পাউবোর অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী (উত্তর-পূর্বাঞ্চল) মো. আবদুল হাই, তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী নুরুল ইসলাম ও সুনামগঞ্জ কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী আফছার উদ্দিনকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। মামলায় এই তিন প্রকৌশলীকেও আসামি করা হয়েছে।