প্রিয় পাঠক, আসসালামু আলাইকুম। আশা করি পবিত্র ঈদুল আযহা পরবর্তী সময়ে সুস্থ আছেন। আপনি নিশ্চয়ই অবহিত আছেন যে, ডেঙ্গু জ্বর ঢাকাসহ সারাদেশের বিভিন্ন জায়গায় মারাত্মক আকার ধারণ করেছে। ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে মৃত মানুষের সংখ্যা নির্দিষ্ট করে বলা না গেলেও বর্তমানে হাসপাতালগুলোতে চিকিৎসাধিন ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা দেখলে বুঝতে বাকি থাকে না যে রোগটি মহামারি আকার ধারণ করছে। তবে একটু সচেতন হলেই ডেঙ্গু রোগ এড়িয়ে চলা সম্ভব। মূলতঃ বর্ষায় (এপ্রিল-অক্টোবর) ডেঙ্গু জ্বরের প্রকোপ বাড়ে। ডেঙ্গু জ্বরের বাহক এডিস মশা সাধারণতঃ দিনের বেলায় কামড়ায়। মনে রাখতে হবে যে এডিস মশা শুধুমাত্র আবদ্ধ বা পচা পানিতে নয় বরং পরিষ্কার পানিতেও বংশবৃদ্ধি করতে পারে। এডিস মশার বংশবৃদ্ধি ধ্বংসের মাধ্যমে এই রোগ প্রতিরোধ করা যায়। এক্ষেত্রে সচেতনতা খুবই জরুরী।

প্রতিকারের চেয়ে প্রতিরোধই শ্রেয়। আর এই প্রতিরোধে করণীয় হচ্ছে—

প্রথমতঃ আপনার বাড়ির আশপাশ পরিষ্কার রাখুন। যেমন, আপনার ঘর এবং আশপাশের যে কোন জায়গায়, ফুলের টব, প্লাস্টিকের পাত্র, পরিত্যক্ত টায়ার, প্লাস্টিকের ড্রাম, মাটির পাত্র, বালতি, টিনের কৌটা, ডাবের খোসা (নারিকেলের মালv), কাঁচের পাত্র, কন্টেইনার, ভাঙ্গা পানি খাওয়ার গ্লাস, গাছের গোড়া, ড্রিংসের বোতল, ফ্রিজ,এয়ারকুলারের নিচে জমে থাকা বা জমিয়ে রাখা পানি তিন দিনের মধ্যে পরিবর্তন করুন অথবা অপসারণ করুন।

দ্বিতীয়তঃ ব্যবহৃত পাত্রের গায়ে লেগে থাকা মশার ডিম অপসারণে পাথর ঘষে ঘষে পরিষ্কার করুন।

তৃতীয়তঃ অব্যবহৃত পানির পাত্র ধ্বংস অথবা উল্টে রাখতে হবে যাতে পানি না জমে।

চতুর্থতঃ সম্ভব হলে জানালায় মশা প্রতিরোধক নেট লাগানো যেতে পারে।

পঞ্চমতঃ দিনে বা রাতে ঘুমানোর সময় অবশ্যই মশারি ব্যবহার করুন।

সম্মানিত পাঠক, আল্লাহ না করুন, যদি কেউ ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত হন তবে প্রথমে যে কাজটি করতে হবে তা হল, ভয় পাওয়া যাবে না অর্থাৎ আতঙ্কিত হবেন না। এটা কোন মরণ ব্যাধি নয় বরং উপযুক্ত চিকিৎসায় রোগী সুস্থ হয়ে ওঠেন। ২০১৬ সালের এক গবেষণায় স্যান্ড্রা ম্যায়ার নামের একজন রোগতত্ত্ববিদ জানান, ‘কোন মহামারীতে মৃত্যুর এবং দ্রুত মৃত্যুর অন্তত ৫০ শতাংশই ঘটে প্যানিক এ্যাটাক এর কারণে।‘ প্যানিক অ্যাটাক হল ‘আর বাঁচার সম্ভাবনা নেই’ ধরনের আতঙ্ক।

রোগী যখন মনে করতে থাকেন যে তার আর বাঁচার সম্ভাবনা নেই তখনই মস্তিষ্কে সেরোটোনিন নামের নিউরোট্রান্সমিশন ক্ষমতার কেমিক্যালটির লেভেল একেবারে নিচে নেমে যায় এবং ভয়ার্ত ব্যক্তির মৃত্যুর সম্ভাবনা বহুগুণে বেড়ে যায়। চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় যাকে প্যানিক ডিজঅর্ডার’ বলা হয়। (৫ আগস্ট ২০১৯, হেলাল মহিউদ্দিন, প্রথম আলো)

ডেঙ্গুর প্রতিকারে যা করণীয় তা হলো-
প্রথমতঃ জ্বর হলে দেরি না করে নিকটস্থ হাসপাতালে চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করুন ও ডেঙ্গু জ্বরের পরীক্ষা করুন।

দ্বিতীয়তঃ কোন অবস্থাতেই ভয় পাওয়া যাবে না অথবা আতঙ্কিত হওয়া যাবে না। কারণ সুচিকিৎসায় ডেঙ্গু জ্বর ভালো হয়।

তৃতীয়তঃ প্যারাসিটামল ব্যতীত অন্য কোন ব্যথানাশক ঔষধ খাওয়া থেকে বিরত থাকুন। রোগীকে বেশি বেশি তরল খাবার খাওয়ান। যেমন, ডাবের পানি, ফলের রস ইত্যাদি।

সর্বশেষঃ জ্বর ভালো হওয়ার পরও ডেঙ্গুজনিত জটিলতা দেখা দিতে পারে। তাই সতর্ক থাকুন ও চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে চলুন। মহান সৃষ্টিকর্তা আমাদের সবাইকে আসমানী-জমিনী সব ধরনের বালা-মুসিবত থেকে রক্ষা করুন, আমিন।

লেখক : প্রভাষক, আছিরগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজ।

 



“বিয়ানীবাজার উপজেলার প্রথম ২৪ ঘন্টার টেলিভিশন ABtv’ র অফিসিয়াল ইউটিউব চ্যানেল, সাবস্ক্রাইব করে দেখতে থাকুন প্রতিদিনকার বিয়ানীবাজারের ঘটনাপ্রবাহ”নিচের লিঙ্কটি ক্লিকের মাধ্যমে সহজেই সাবস্ক্রাইব করতে পারবেন ABtv
Subscribe: http://bit.ly/2OOvJad