নতুন ভবনের ছাড়পত্র পাওয়া নিয়ে ঠিকাদারের পক্ষ নিলেন সাবেক ইউনিয়ন চেয়ারম্যান গৌছ উদ্দিন। স্থানীয়দের সাথে নিয়ে সরকারি একটি বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকসহ সহকারিদের শিক্ষকদের হেনস্তা, অবরোধ ও প্যারা শিক্ষককে লাঞ্ছিত করার অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনাটি ঘটেছে রোববার দুপুরে বিয়ানীবাজার উপজেলার লাউতা ইউনিয়নের পশ্চিম বাগ প্রচণ্ড খা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে।

এ ঘটনার অভিযুক্ত লাউতা ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান গৌছ উদ্দিন বলেন, প্রকৃত ঘটনা আড়াল করে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করা হচ্ছে এবং আমার বিরুদ্ধে একটি মহল অপপ্রচার শুরু করেছে।

জানা যায়, ঠিকাদার বিয়ানীবাজার পৌরশহরের নিদনপুর এলাকার শামীম আহমদ পশ্চিম বাগ প্রচন্ড খা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের একটি দ্বিতল ভবন নির্মাণ করেন। সরকারি এ ভবনের নির্মাণ কাজ শেষ করে তিনি গত কিছু দিন থেকে বিদ্যালয়ের পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি ও প্রধান শিক্ষকের ছাড়পত্র (প্রত্যয়নপত্র) পেতে যোগাযোগ করেন। বিদ্যালয়ের সভাপতি সাবেক ইউপি সদস্য আব্দুল লতিফ ছাড়পত্রে সাক্ষর করলেও বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সন্ধ্যা চক্রবর্তী ছাড়পত্রে স্বাক্ষর করতে অনিহা প্রকাশ করেন। এ নিয়ে উভয়ের মধ্যে বাগবিতণ্ডা ঘটে। রোববার লাউতা ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান গৌছ উদ্দিন ঠিকাদার শামীম আহমদের পক্ষ নিয়ে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষককে ছাড়পত্র (প্রত্যয়নপত্র) দেয়ার অনুরোধ করেন। সাবেক চেয়ারম্যানের অনুরোধও ফিরিয়ে দেন প্রধান শিক্ষক। এ সময় স্থানীয় গ্রামবাসী বিদ্যালয় মিলনায়তনে অবস্থান নিয়ে ঠিকাদারকে ছাড়পত্র দেয়ার জন্য হৈচৈ করেন। এর এক পর্যায়ে প্রধান শিক্ষিক অভিযোগ করেন বাগবিতণ্ডার পর তাকে ও শিক্ষকদের সাথে গালাগালি করেছে সাবেক চেয়ারম্যান গৌছ উদ্দিনসহ স্থানীয় কয়েকজন যুবক। এসব ঘটনায় প্রতিবাদ করলে বিদ্যালয়ের প্যারা শিক্ষক জুয়েল আহমদকে লাঞ্ছিত করেন গৌছ উদ্দিনের সাথে থাকা লোকজন।

এ বিষয়ে উপজেলা শিক্ষা অফিসসহ সরকারি প্রাথমিক শিক্ষকদের মধ্যে ক্ষোভ দেখা দেয়। শিক্ষক সমিতির দায়িত্বশীলরা বিষয়টির সুষ্ঠু সমাধান এবং জড়িতদের শাস্তি দাবি করেন। এ বিষয়টির সুষ্ঠু সমাধান না হওয়া পর্যন্ত দায়িত্বরত শিক্ষকরা পশ্চিম বাগ প্রচন্ড খা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পাঠদান থেকে বিরত থাকবেন বলে সিদ্ধান্ত নেন বিয়ানীবাজার উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির দায়িত্বশীলরা।

পশ্চিম বাগ প্রচন্ড খা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সন্ধ্যা চক্রবর্তী বলেন, বিদ্যালয়ের প্রাচীরের একটি অংশ নির্মাণ কাজ অসম্পূর্ণ রয়েছে। বিষয়টি আমি উর্ধ্বতন দায়িত্বশীলদের অবহিত করি। আমার উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ এভাবে প্রত্যয়ন না দেয়ার পরামর্শ দেন। তিনি বলেন, আমি ছাড়পত্রের স্বাক্ষর করতে রাজি না হওয়ায় আমাদের গালাগালি ও বিভিন্ন ধরনের হুমকি দেন সাবেক চেয়ারম্যান গৌছ উদ্দিন। তার লোকজন আমার প্যারা শিক্ষককেও মারধর করেন।

সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান গৌছ উদ্দিন বলেন, ব্যক্তি আক্রোশের কারণে প্রধান শিক্ষক সন্ধ্যা চক্রবর্তী ঠিকাদার শামীম আহমদকে ভবন নির্মাণ সম্পূর্ণ হলেও ছাড়পত্র দেননি। এ বিষয়টি জেনে আমি নিজে গিয়ে অনুরোধ করি। কিন্তু তিনি ছাড়পত্র না দেয়ায় আমি উপজেলা শিক্ষা অফিসের কর্মকর্তার সাথে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করি। লাউড স্পিকারে কর্মকর্তার সাথে আমার কথা প্রধান শিক্ষকও শোনেন। কর্মকর্তা (এটিও আশরাফুল ইসলাম) বিষয়টি বিবেচনা করার জন্য প্রধান শিক্ষক বলেন। এরপরও তিনি ছাড়পত্র না দেয়ায় স্থানীয় মানুষ বিক্ষোব্ধ হয়ে পড়েন। তখন পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে উঠলে আমি সেখান থেকে চলে আসি।

এ ঘটনার বিষয়ে ঠিকাদার শামীম আহমদ কোন কথা বলতে রাজি হননি।

সাবেক চেয়ারম্যান গৌছ উদ্দিন আরো বলেন, বিদ্যালয়ের দ্বিতল ভবনের কাজ শুরু করার সময় প্রধান শিক্ষক সন্ধ্যা চক্রবর্তী আমাকে বৈদ্যুতিক কাজটি তার স্বামী কল্লোল ভট্টাচার্যকে দেয়ার জন্য অনুরোধ করেন। আমি তাকে এ বিষয়ে নিরোৎসাহিত করেছি। এজন্য মনোক্ষুন্ন হন প্রধান শিক্ষক।

ঠিকাদার শামীম বলেন, দ্বিতল ভবন নির্মাণের জন্য বহণকারি ট্রাক বিদ্যালয় প্রাঙ্গনে প্রবেশ করার জন্য প্রাচীরের একটি অংশ ভাঙ্গা হয়। স্থানীয় এলাকাবাসীর অনুমিত নিয়ে প্রাচীর ভেঙ্গেছেন বলে তিনি জানান। এ প্রাচীর তিনি মেরামত করে দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন স্থানীয়দের।

গৌছ উদ্দিন বলেন, বিষয়টি ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার চেষ্টা করা হচ্ছে। তুচ্ছ এ ঘটনাটি সাম্প্রদায়িক ফায়দা তুলতে একটি মহল চক্রান্ত করছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পায়ে ধরার কথা বলার ভিডিও যেটি প্রচার হয়েছে সেটি প্যারা শিক্ষক যে বেয়াদবি করেছে তার জন্য তার পিতা তাকে ক্ষমা চাওয়ার জন্য বলেছেন। সেটি ভিন্নখাতে নেয়ারও চক্রান্ত চলছে। তিনি শিক্ষক সমাজকে মিথ্যা কথায় বিভ্রান্ত না হওয়ার আহবান জানিয়ে বলেন, প্রকৃত ঘটনা কি ছিল, কি কথা বার্তা হয়েছে আপনার নিজ উদ্যোগে তদন্ত করে জানতে পারেন।

অভিযোগের বিষয়ে প্রধান শিক্ষক সন্ধ্যা চক্রবর্তী বলেন, ঘটনাটি ভিন্ন খাতে প্রবাভিত করতে বানোয়াট ও মিথ্যা গল্প করছেন ঠিকাদার ও সাবেক চেয়ারম্যান গৌছ উদ্দিনসহ তার সহযোগীরা। ঠিকাদারের সাথে ভবন নির্মাণের কোন বিষয়ে আমার কোন সময় আলাপ হয়নি। আমার স্বামী কিংবা কাউকে কাজ দেয়ার কোন অনুরোধ কখনো আমি তার কাছে করিনী, এসব ভিত্তিহীন।

বিদ্যালয় পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি সাবেক ইউপি সদস্য আব্দুল লতিফ বলেন, ‘আমার ছেলে জুয়েল ওই স্কুলে শিক্ষকতা (প্যারা শিক্ষক) করে। সে আমাতে ফোন করে স্কুলে হট্টগোল হচ্ছে। আমি গিয়ে দেখি সাবেক চেয়ারম্যান আমার ভাতিজা গৌছ চলে যাচ্ছে। তাকে ফিরিয়ে আবার বিদ্যালয়ের কক্ষে নিয়ে আসি। সেখানে আমার ছেলে জুয়েল চেয়ারম্যানে একটি কথার উপরে টেবিলে থাপ্পড় মারলে আমি তাকে শাসন করি। এবং তার বড় ভাই গৌছ উদ্দিন চেয়ারম্যানের কাছে মাফ চাইতে বলি। আমি জুয়েলকে বলেছি সে অন্যায় করেছে, পায়ে ধরতে বলি। তিনি বলেন, আমি স্কুলে গিয়ে বিষয়টি মীমাংসা করেছি। শিক্ষকরা দুঃখ পেলে সেটিও শেস করে দেবো। এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, আমি থাকতে স্কুলের কোন শিক্ষকের নিরাপত্তার অভাব হবে না। এ ঘটনাটি তাৎক্ষনিকভাবে মীমাংসা করার পর প্রধান শিক্ষক প্রত্যয়ন পত্রের স্বাক্ষর করেছেন।

শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক খালেদ সাইফুদ্দিন জাফরী বলেন, আমাদের শিক্ষকরা নিরাপত্তাহীনতায় ভোগছেন। বিদ্যালয়ের সাবেক একজন জনপ্রতিনিধি ঠিকাদারের পক্ষ নিয়ে শিক্ষকদের হুমকি দেবেন, গালাগালি করবেন এ বিষয়টি খুবই দুঃখজনক। আমরা বিষয়টি উপজেলা শিক্ষা অফিসকে জানিয়েছি এবং শিক্ষকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত বিদ্যালয়ে না যাওয়ার জন্য আমরা সমিতির সিদ্ধান্ত দায়িত্বশীলদের অবহিত করেছি।

বিয়ানীবাজার উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা রোমান মিয়া বলেন, নতুন ভবন নির্মাণের ছাড়পত্র নিয়ে ঠিকাদারের পক্ষ নেন সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান গৌছ উদ্দিন। তিনি আমাদের শিক্ষকদের অবরোধ করে গালাগালি করেন এবং একজন প্যারা শিক্ষককে লাঞ্ছিত করেন। এ ঘটনাটি আইনি প্রক্রিয়া গ্রহণ করতে শিক্ষকরা আমার বরাবর লিখিত দরখাস্ত দিয়েছেন। তিনি বলেন, উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির দায়িত্বশীলরা নিরাপত্তার কারণে পশ্চিম বাগ প্রচন্ড খা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দায়িত্বরত শিক্ষকদের পাঠদান থেকে বিরত থাকার বিষয়টি আমাকে অবহিত করেছেন।

‌বিয়ানীবাজারে টিকাদারের পক্ষ নিয়ে শিক্ষিকাকে হেনস্তার অভিযোগ সাবেক চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে !


‌আমার বিরুদ্ধে মি-থ্যা প্রো-পা-গা-ন্ডা ছড়ানো হচ্ছে- শিক্ষিকার অভিযোগের জবাবে সাবেক চেয়ারম্যান গৌছ