জুড়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা অসীম চন্দ্র বনিককে লাঞ্চনার ঘটনায় প্রকাশ্যে ক্ষমা চেয়েছেন জুড়ী উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান এম এ মোঈদ ফারুক।

শনিবার (২২ জুন) রাতে জুড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ে এক সমঝোতা বৈঠক অনুষ্টিত হয়। ওই বৈঠকে সম্প্রতি উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান কর্তৃক সংগঠিত কিছু অপ্রীতিকর ঘটনার জন্য দুঃখ প্রকাশ করেন।

সূত্রে জানা যায়, সাম্প্রতিক সময়ে বিভিন্ন ঘটনাকে কেন্দ্র করে জুড়ী উপজেলার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবনতি হওয়া এবং জুড়িতে শান্তিশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে ওই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।

বৈঠকের জন্য জুড়িতে আসেন মৌলভীবাজারের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মামুনুর রশীদ। উপজেলা পরিষদের সাথে সংশ্লিষ্টদের নিয়ে তিনি এক বৈঠকে মিলিত হন।

বৈঠকে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন মৌলভীবাজার জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রাশেদুল ইসলাম, উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এম এ মোঈদ ফারুক, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা অসীম চন্দ্র বনিক, জুড়ী থানার অফিসার ইনচার্জ মো. জাহাঙ্গীর হোসেন সরদার, ইউপি চেয়ারম্যান সালেহ উদ্দিন আহমদ, শ্রীকান্ত দাশ, মাছুম রেজা, পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়ন নেতৃবৃন্দ ও ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

সভায় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার সাথে অসদাচরণ ও পরিবহন শ্রমিকদের গালিগালাজের বিষয়ে উপজেলা চেয়ারম্যান এম এ মোঈদ ফারুক ক্ষমা প্রার্থনা করেন। সেই সাথে ফুটপাতের দোকানপাট ভাঙচুর করার বিষয়ে পরিবহন শ্রমিকদের পক্ষে সিএনজি সমিতির সভাপতি মতিউর রহমান চুনু ক্ষমা প্রার্থনা করেন।

অপরদিকে বাস চাপায় ফল বিক্রেতার মৃত্যুর ঘটনায় উপজেলা চেয়ারম্যান এম এ মোঈদ ফারুক জায়ফরনগর ইউনিয়নবাসীকে দায়ী করে বক্তব্য দেয়া ও গালাগালি করার বিষয়টি স্থানীয় সংসদ সদস্য, পরিবেশ, বন ও জলবায়ূ পরিবর্তনমন্ত্রী মো. শাহাব উদ্দিন সমাধান করার আশ্বাস দিয়েছেন বলে ইউপি চেয়ারম্যান মাছুম রেজা জানান।

জানা যায়, মঙ্গলবার (১৮ জুন) রাত ৮টায় উপজেলা শহরের ভবানীগঞ্জ বাজারে বাস চাপায় ইব্রাহিম আলী (৬০) নামে এক ফল বিক্রেতার মৃত্যু হয়। পরদিন বুধবার পরিবহণ শ্রমিকরা ফুটপাতের কিছু দোকান ভাঙচুর করে।

এ ঘটনায় শুক্রবার (২১ জুন) সকালে উপজেলা প্রশাসনের এক জরুরী সভায় ফুটপাতের সকল দোকান স্থানান্তর ও অবৈধ গাড়ী পার্কিং সরানোর সিদ্ধান্ত হয়।

উপজেলা চেয়ারম্যানের মালিকানাধীন জুড়ী নিউ মার্কেটের সামনে সিএন্ডবির জায়গায় বেশ কিছু অবৈধ দোকান রয়েছে, যা থেকে মাসে লাখ টাকা ভাড়া আদায় করেন এবং উপজেলা উন্নয়ন তহবিল (এডিপি ও রাজস্ব) ২০১৮-১৯ অর্থ বছরের কাজ উপজেলা চেয়ারম্যান তাঁর পছন্দের ঠিকাদারদের মধ্যে বন্টন করতে না পেরে উপজেলা চেয়ারম্যান জুড়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার উপর ক্ষিপ্ত হন।

এদিকে, শুক্রবার (২১ জুন) রাত প্রায় ১০টায় বাসার বাসার সামনে দাঁড়িয়ে থাকা জুড়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে গালাগালি ও লাঞ্চিত করেন এবং দেখে নেয়ার হুমকি দেন উপজেলা চেয়ারম্যান মোঈন ফারুক। জুড়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা অসীম চন্দ্র বনিক তাঁর উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের কাছে বিষয়টি জানান।

এছাড়াও উপজেলা চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে ভবানীগঞ্জ বাজারে এক প্রতিবাদ সভায় পরিবহন শ্রমিক ও জায়ফরনগর ইউনিয়নবাসীকে গালাগালি করার অভিযোগ ছিল। এ ঘটনায় শুক্রবার বিকেলে পরিবহণ শ্রমিকরা প্রতিবাদ মিছিল করার প্রস্তুতি নিচ্ছিল। থমথমে এই পরিস্থিতিতে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় সকাল থেকে জুড়ী উপজেলা শহরের বিভিন্ন স্থানে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়। এদিকে উপজেলা চেয়ারম্যান কর্তৃক গালাগালির প্রতিবাদে জায়ফরনগর ইউনিয়নবাসী মানববন্ধনের প্রস্তুতি নিলে স্থানীয় সংসদ সদস্যের হস্তক্ষেপে তা বাতিল করা হয়।

সার্বিক বিষয়ে বৈঠকের সত্যতা নিশ্চিত করে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা অসীম চন্দ্র বনিক বলেন, ‘সাম্প্রতিক সময়ে জুড়ি উপজেলার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বিস্তর আলোচনার এক পর্যায়ে উপজেলা চেয়ারম্যান কৃতকর্মের জন্য দুঃখ প্রকাশ করেছেন এবং ‘স্যরি’ বলেছেন।’

অন্য এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘আমরা সবাই মিলে জুড়িকে শান্তিপ্রিয় জনপদে রূপান্তর করতে চাই, সেজন্য সকলের সহযোগীতা একান্ত কাম্য।’