‘গত এক মাস ধরি বাড়িঘরো পানি। গাউর (গ্রাম) মাইনসে (মানুষ) অখনো কোনো রিলিফ পাইছে না। চেয়ারম্যান-মেম্বারে খালি মুখ চিনি রিলিফ দেইন।’ এভাবেই নিজের ক্ষোভের কথা জানালেন  মৌলভীবাজারের জুড়ী উপজেলার ভাটি শাহপুর গ্রামের বাসিন্দা পাখি মিয়া (৫৫)। ওই গ্রামে ১০০ পরিবারের বসবাস। বেশিরভাগ মানুষ মৎস্যজীবি। কিন্তু পানিবন্দী এসব মানুষের সঠিকভাবে ত্রাণ জুটছে না। উপজেলার জায়ফরনগর ইউনিয়নের হাকালুকি হাওরপাড়ের বিভিন্ন এলাকার দুর্গত মানুষ সীমাহীন দুর্ভোগে পড়েছেন।

নিবন্দী অবস্থায় দিন কাটাচ্ছেন তারা। অথচ অনেকে এখনো কোনো সরকারি ত্রাণ পায়নি। এলাকায় দেখা দিয়েছে বিশুদ্ধ পানির সংকট। এরই মধ্যে বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থার কর্মীরা গিয়ে ঋণের কিস্তি আদায়ে লোকজনকে চাপ দিচ্ছেন।

সরেজমিনে দেখা গেছে, উপজেলার পূর্ব বেলাগাঁও, সোনাপুর, শাহপুর, ভাটি শাহপুর ও নিশ্চিন্তপুর গ্রামের অধিকাংশ বাড়িঘরে পানি। ভুয়াই-শাহগঞ্জ বাজার রাস্তায় ৪-৫ ফুট পানি। নৌকায় করে লোকজন চলাচল করছে। শাহগঞ্জ বাজারে পানি ওঠায় দোকানপাট বন্ধ। কেউ কেউ দূরের উঁচু এলাকা থেকে কলসে পানি ভরে নৌকায় করে বাড়ি নিয়ে যাচ্ছেন।
ভাটি শাহপুর গ্রামে ১০০ পরিবারের বাস। অধিকাংশ মানুষ মৎস্যজীবি। গ্রামের বাসিন্দা পাখি মিয়া (৫৫) জানালেন, গত এক মাস ধরি বাড়িঘরো পানি। গাউর (গ্রাম) মাইনষে (মানুষ) অখনো কোনো রিলিফ পাইছে না। প্রতিবেশি ইরা মিয়া (৬০) জানান, হাওরে বাতাসে ঢেউ ওঠায় সকালে জাল নিয়ে গিয়ে মাছ না ধরে বাড়ি ফিরে এসেছেন। মাছ ধরলে তা বিক্রি করে চাল-ডাল কিনে আনতেন।

ঘরে হাঁটুপানি থাকায় খাটের ওপর টিনের চুলা বসিয়ে ভাত রান্না করছিলেন গ্রামের আঙ্গুরুন নেছা (৬০)। তিনি জানান, আর কতোদিন যে ইলা কষ্টত থাকতে অইবো, আল্লায় (আল্লাহ) জানোইন।

শাহপুর প্রাথমিক বিদ্যালয় আশ্রয় কেন্দ্রে ৫টি পরিবারের দেখা মেলে। দক্ষিণ শাহপুর গ্রামের নাজমা বেগম (৩৫), শাহেনা বেগম (৪৫) ও দিলারা বেগম (৪০) জানান, গত ২০ দিন ধরে তারা সেখানে আছেন। এখন পর্যন্ত সরকারিভাবে প্রত্যেকে ১৫ কেজি করে চাল ও ২০ কেজি করে আটা পেয়েছেন। চাল শেষ। এখন আটা দিয়ে রুটি বানিয়ে খাচ্ছেন।

পূর্ব বেলাগাঁওয়ের জামাল হোসেন, মালেক মিয়া ও নাসির মিয়া জানান, একটি বেসরকারি সংস্থা থেকে তারা বিভিন্ন কাজে কিছু টাকা ঋণ নেন। সংস্থার কর্মীদের চাপে হাঁস-মোরগ বেচে সাপ্তাহিক কিস্তির টাকা পরিশোধ করেছেন।

ত্রাণ না পাওযার অভিযোগ সম্পর্কে জানতে চাইলে জায়ফরনগর ইউপি চেয়ারম্যান মাছুম রেজা দাবি করেন, তারা স্থানীয় ওয়ার্ডের ইউপি সদস্যদের মাধ্যমে দুর্গত মানুষের তালিকা তৈরি করে ত্রাণ পৌঁছে দিচ্ছেন। এছাড়া নিজেও সরেজমিনে তা তদারকি করছেন। এরপরও ভাটি শাহপুরের বিষয়টি খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার মিন্টু চৌধুরী জানান, ঋণের কিস্তি আদায়ের বিষয়টি নিয়ে তিনি বেসরকারি সংস্থার কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলবেন।

উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা মহিউদ্দিন আহমদ জানান, তিনি গতকাল জায়ফরনগরের কয়েকটি আশ্রয় কেন্দ্রে গিয়েছেন। দুর্গত এলাকায় পানি বিশুদ্ধকরণ বি পৌঁছানোর ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।