ফাইনাল ; হ্যাঁ চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ফাইনাল অথচ সর্বশেষ প্রায় দেড় যুগের চ্যাম্পিয়নরা (মেসি-রোনালদো) নেই। তাতে কি ফাইনাল তো ফাইনালই। কেউ আসুক কিংবা না আসুক দর্শক গ্যালারি ভরে উঠুক কিংবা খালি থাকুক আজ ফাইনাল।

এবারের ফাইনালের সবচাইতে বড় চমক বলা যায় পিএসজির ঠিক পঞ্চাশ বছর পূর্তিতে ক্লাবটি তাদের বহু সাধনার চ্যাম্পিয়ন্স লিগ শিরোপার চাইতে ৯০ মিনিট দূরত্বে অবস্থান করতেছে এক‌টি পারফেক্ট স্কোয়াড নিয়ে। অপরদিকে বায়ার্ন মিউনিখ তাদের ষষ্ঠ শিরোপার জন্য যেভাবে প্রতিপক্ষের বাঁধাগুলো মাড়িয়ে এসেছে তাতে পিএসজিকে কী আবারো সেই শূন্য থেকে আগামী বছর আবারো শুরু করতে হবে সেটি বলে দেবে এই ৯০ মিনিটই।

হ্যাঁ ম্যাচ পর্যালোচনা কিংবা বিভিন্ন দলের ব্যালেন্স চেক করলে দুটি সেরা দলই উঠেছে। এবারের ফাইনালে যদিও তাদের ফ্যান বেইজ অন্যদের মতো জমিদারি নয়।

এবারের ফাইনালকে যদি এক কথায় বিশ্লেষণ করা সম্ভব হয় তাহ‌লে উত্তরটি সম্ভবত এভাবে বলা যায় যে -শিল্প বনাম যন্ত্রের লড়াই।
শিল্পের আঁতুড়ঘর খ্যাত ফ্রান্সের ক্লাব পিএসজিতে যে তারকার হাট বসিয়েছেন আরব ধনকুবের, সেখানে ল্যাটিন ফুটবলারদের আধিক্য আরো গতি দিয়েছে ফুটবল সৌন্দর্যের পসরা সাজানোর ক্ষেত্রে।

মেসি-রোনালদো পরবর্তী চ্যাম্পিয়ন বাটন যে দুজনের হাতে উঠার সম্ভাবনা সবচাইতে বেশী সেই দুজন নেইমার আর এমবাপ্পে খেলেন পিএসজিতে। মধ্যমাঠের ডি মারিয়া-মার্ক ভেরাট্টি-ডেনিয়েল কিংবা প্রতিরোধ প্রান্তের শেষ যোদ্ধা থিয়াগো সিলভা-মারকুইস সামলাচ্ছেন ডিফেন্স। ইকিয়ার্দিরা আছে ফরোয়ার্ড লাইনে।

এক কথায় একমাত্র বড় ম্যাচে ক্লাবের ঐতিহ্যের ঘাটতি ছাড়া সবই আছে। প্লেয়াররা আবার বড় ম্যাচের। এই যে এমবাপ্পে শুধু ফ্রান্স আর পিএসজিতে বলেই কি আন্ডাররেটেড তা না হলে বিশ্বকাপ থেকে শুরু করে এই বয়সে সব জেতার পরেও ব্রাজিল-আর্জেন্টিনা আর রিয়াল মাদ্রিদ-বার্সেলোনার না হওয়াতে মেগাস্টার হতে পারতেছেন না। এই চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জয় করা হয়ে গেলে এমবাপের আর বাকি থাকবে কি?

এবার দেখে নেই জার্মান যন্ত্রের অবস্থা। একসময় বিশ্বকাপের আসরে পিছিয়ে পড়ার পর তারা নজর দেয় ক্লাব ফুটবলে। অলিখিতভাবে জাতীয় দলের স্কোয়াড তৈরি হতো জার্মান লিগ থেকে এবং নজর দেয় একাডেমিগুলোতে। ফলাফল বিশ্বকাপ মঞ্চের মতো ক্লাব ফুটবলেও ভয়ংকর এক নাম হয়ে উঠে বায়ার্ন মিউনিখ আর ডর্টমুন্ড।

রিয়াল মাদ্রিদ-বার্সাকে মাড়িয়ে দেওয়ার পরে কিছুদিনের বিরতির পরে আবারো স্বরুপে জার্মান ইঞ্জিন। এবার যেভাবে বার্সেলোনাকে ঘোল খাইয়েছে ; যদি না বায়ার্ন এর জন্য সেটি হয় এ আসরের সেরা ম্যাচ কিংবা পূর্ন হয়ে যায় গোলের কৌটা তাহলে পিএসজি হাসবে ; না হলে আবারো জার্মান যন্ত্রের রোবোটিক হাতে উঠে যাবে ট্রফি।

নুয়্যার-আলভা-ডেভিস থেকে টলিসো-আলকেন্ত্রা-গানব্রি-ইভান-লেভেনডস্কি সবাই অভ্যস্ত হাই প্রেসিং ফুটবলে। টমাস মুলার থেকে কুতিনহো কনফিডেন্ট এর কোন ঘাটতি নেই। সমস্যা একটিই, আর সেটি হলো হাই প্রেসিং করতে গিয়ে ডিফেন্স উম্মুক্ত হয়ে যায়;
আর সেই উম্মুক্ত ডিফেন্সে এমবাপের উইথ দ্যা বল ভয়ংকর সুন্দর দৌড়ের সাথে ডি মারিয়ার পাস কিংবা নেইমারের ড্রিবলিং কি সামলাতে পারবে বায়ার্ন ডিফেন্স এবং এখানেই হয়তো নির্ধারিত হয়ে যাবে ফলাফল।

একই সূত্র প্রযোজ্য পিএসজির ক্ষেত্রে। লিগ ওয়ানেড় ফরোয়ার্ডদের সামলানো আর জার্মান তুফান সামলানো রাত-দিনের মতোই তফাৎ। আর গোল মুখে ভেসে আসা ক্রসে জার্মানদের চাইতে ভালো এ জগতেই যে কেউ নেই। উভয় দলই যদি তাদের স্বাভাবিক খেলা খেলে তাহলে একটি হাই স্কোরিং ম্যাচ হবার সকল প্রকার বারুধই মজুদ আছে দুটি স্কোয়াডেই। ফুটবলের ল্যাটিন সৌন্দর্যের পসরা নিয়ে যেমন হাজির শিল্প চর্চার তীর্থস্থান ফ্রান্স তেমনি নিরাবেগ আর পেশাদারিত্বের তকমা নিয়ে হাজির জার্মান ইঞ্জিন।

এখন দেখার বিষয় প্রতিটি টুর্নামেন্টে যেমন একটি সেরা ম্যাচ থাকে সেটি কি বায়ার্ন মিউনিখ খেলে দিয়েছে বার্সেলোনার সাথে নাকি ফাইনালে জন্য রেখে দিয়েছে এক্সট্রিম হাই প্রেস। অন্যদিকে পিএসজি তো ফাইনালে উঠেই যে আনন্দ উল্লাস করেছে সেটাই কি তাদের শেষ উল্লাস নাকি, এটি ছিলো আসল উল্লাসের রিয়ার্সেল।

বায়ার্ন মিউনিখ কি তাদের গোলের কৌটা শেষ করে ফেলেছে!! নাকি নেইমার তাহার গোলগুলো জমিয়ে রেখেছে!! এমন অসংখ্য পাজল মিলানোর ৯০ মিনিটে চোখ রাখুন টেলিভিশনের পর্দায়। নতুন চ্যাম্পিয়ন নাকি শিরোপার ছক্কা-শিল্প নাকি যন্ত্র। অপেক্ষার-স্নায়ু চাপের অবসান হচ্ছে আজ।

লেখক: সাংবাদিক ও কানাডা প্রবাসী।

পেঁয়াজ-আলু-টমেটো-কাঁচা মরিচের দাম ঊর্ধ্বমুখী