‘আগে নাক মুখ দিয়ে রক্ত ঝরতো, এখন চোখ দিয়ে রক্ত ঝরে। সকালে ঘুম থেকে ওঠে চোখ মেলতে পারিনা, চোখের ভিতর রক্ত জমাট থাকে। চোখে অসহ্য জ্বালাপোড়া করে। বিভিন্ন জায়গায় ডাক্তার দেখালেও ডাক্তাররা আমার রোগের কারন জানাতে পারেননি। অসুস্থ হওয়ার পর থেকে আমার পড়াশুনাও বন্ধ’।

এভাবেই আক্ষেপ করে চোখ দিয়ে রক্ত ঝরার মত বিরল রোগে আক্রান্ত ১৫ বছরের কিশোর পাবেল আহমদ কষ্টের কথা জানায়।

পাবেল মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলার কর্মধা ইউনিয়নের বাবনিয়া গ্রামের আব্দুস শহিদের ছেলে। ২ ভাই ও ৪ বোনের মধ্যে সে ছোট। সে একই এলাকার বাবনিয়া হাসিমপুর নিজামিয়া মাদ্রাসার ৮ম শ্রেণির ছাত্র।

সরেজমিনে পাবেলের গ্রামের বাড়িতে গেলে তিনি বলেন, আমি আমার অজানা এই রোগ নিয়ে আতঙ্কে থাকি সব সময়। রক্ত হঠাৎ ঝরে তাই ভয়ে বাইরে বের হতে পারিনা। আমার পড়াশুনাও বন্ধ রয়েছে। আমি আবারো স্বাভাবিক জীবন কাটাতে চাই।

তার মা তৈয়বুন বেগম জানান, প্রায় তিন বছর আগে থেকে তার (পাবেলের) নাক দিয়ে রক্তক্ষরণ হতো। এ অবস্থায় কুলাউড়ায় ডাঃ দেবাশীষ বসুর চিকিৎসা নেন। ডাক্তারের দেয়া ঔষধ ব্যবহার করায় রক্তক্ষরণ বন্ধ থাকে। হঠাৎ করে ৮ মাস আগে নাক-মুখ দিয়ে রক্তক্ষরণ শুরু হয়।

তৈয়বুন বেগম জানান, রক্তক্ষরণ বন্ধ না হওয়ায় পরে সিলেটে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাওয়া হলে সিটিস্কেনসহ বেশ কয়েকটি মেডিকেল টেস্ট করানোর পর ডাঃ নুরুল হুদা নাইম জানান পাবেলের নাকের ভিতরে মাংসপেশি বেড়েছে এবং নাকের হাড় বাকা। পরবর্তীতে ৫ মাস আগে সিলেটে একটি বেসরকারি হাসপাতালে ডাঃ হাফিজুর রহমানের তত্বাবধানে নাকের ভিতর দুটি অস্ত্রপাচার করানো হয় তার।অপারেশনের পরও রক্তক্ষরণ বন্ধ হয়নি।

কিছুদিন পর পর নাক মুখ দিয়ে রক্ত ঝরতো। চলতি বছরের জানুয়ারি মাসের দিকে নাক, মুখ দিয়ে রক্তক্ষরণের সাথে নতুন করে চোখ দিয়ে রক্তক্ষরণ শুরু হয়। ডাক্তারের ওউষুধে কোন কাজ হচ্ছিলনা। সাত আটদিন পরপর চোখ নাক ও মুখ দিয়ে রক্ত ঝরতে থাকে। এই মাসের ৫ তারিখ ঢাকায় ডাঃ প্রাণগোপাল দত্তের কাছে পাবেলকে নিয়ে যাই। তিনিও তার মেডিকেল টেস্ট করান। টেস্টে কোন সমস্যা ধরা পড়েনি।

তিনি আরো বলেন, বর্তমানে তার চোখে জ্বালাপোড়া করে। চোখ লাল থাকে। সকালে ঘুম থেকে ওঠার পর চোখের ভিতর রক্ত জমাট হয়ে থাকে। তাকে নিয়ে আমরা খুব দুঃশ্চিন্তায় আছি।