গোলাপগঞ্জে ২০ কোটি টাকা হাতিয়ে লাপাত্তা ছাত্র শিবির কর্মী আহবাব । তার বাড়ি গোলাপগঞ্জ উপজেলার গোলাপগঞ্জ সদর ইউনিয়নের ছত্রিশ গ্রামে। রিয়াজ উদ্দিনের বড় ছেলে ছাত্র শিবিরের রাজনীতিতে যুক্ত বলে এলাকাবাসী জানান।  তবে গোলাপগঞ্জ উপজেলা ছাত্র শিবির সভাপতি আহবাব তাদের কর্মী নয় বলে দাবি করেন।

এলাকাবাসী ও বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, আহবাব নতুন নতুন ফাঁদ পেতে উপজেলার বিভিন্ন পেশার লোকদের কাছ থেকে মাসিক ২০ হাজার টাকা লভ্যাংশ প্রধানের লোভ দেখিয়ে প্রতারনার মাধ্যমে আনুমানিক ২০ কোটি টাকা হাতিয়ে শনিবার রাত থেকে লাপাত্তা হয়ে গেছে।

প্রতারনার শিকার অনেকেই লোভে পড়ে ১ লক্ষ থেকে ১০ লক্ষ টাকা বিনোয়োগ করে কথিত ব্যবসায় অংশীদার হয়েছিলেন । কারো সাথে লেয়ার মুরগীর খাদ্য কেনাবেচার কথিত ব্যবসার নামে করেছে প্রতারনা। কাউকে সিলেটের ইবনে সিনা হাসপাতালের শেয়ার বিক্রীর ভূয়া চুক্তিপত্র দিয়ে করেছে প্রতারনা। তাদের একজন রানাপিং ছত্রিশ গ্রামের ময়না মিয়া ইবনেসিনা হাসপাতালের দুটি শেয়ার ক্রয়ের চুক্তি পত্র নিয়ে ২ লক্ষ টাকা খুইয়েছেন। ঐ চুক্তিপত্রের কপি এ প্রতিবেদকের কাছে সংরক্ষিত রয়েছে। ভুক্তভোগী কয়েকজন জানান ইবনে সিনা হাসপাতালের চেয়ারম্যান হাবিবুর রহমান আহবাবকে চেনেনা বলে তাদের জানিয়েছেন।

প্রতারনার বিষয়টি লোকমুখে ছড়িয়ে পড়লে উপজেলা জুড়ে তোলাপাড় সৃষ্টি হয়। প্রায় ২০ কোটি টাকা নিয়ে প্রতারক আহবাব লাপাত্তার খবরটি গত কালকের টক অব দ্যা টাউন ছিলো।

অনুসন্ধানে জানা গেছে , আহবাবের আর্থিক অবস্থা ভাল না থাকায় বিভিন্ন বাড়ীতে প্রাইভেট টিউশনি পড়িয়ে রোজগার করত। গত কয়েক বছর থেকে তার চলা ফেরায় পরির্বতন আসে। একে একে ৪টি সিএনজি অটোরিক্সা, ১টি পিকআপভ্যান সহ দামী মটরসাইকেল ক্রয় করে। অন্য একটি সূত্রে জানা যায়, আহবাব ছাত্রশিবিরের রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত ছিল।

এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে গোলাপগঞ্জ উপজেলা ছাত্রশিবিরের সভাপতি মুহিবুল্লাহ হোসনেগীর সাংবাদিকদের জানান, দলীয় নেতাকর্মীর টাকা হাতিয়ে নেওয়ার কথা স্বীকার করলেও প্রতারক আহবাবকে নিজ দলের দায়ীত্বশীল কেউ নয় বলে জানান। তবে শিবিরের কর্মীদের সাথে তার উঠাবসা ছিলো বলে দাবী করেন মুহিবুল্লাহ।

তবে অনুসন্ধানে পাওয়া যায়, ২০১৬ সালের একটি ছবিতে দেখা গেছে তৎকালীন সময়ে শিবিরের মাসিক ম্যাগাজিন কিশোর কন্ঠ পাঠক ফোরামের একটি অনুষ্ঠানে আহবাবের সাথে এক সারিতে আছেন গোলাপগঞ্জ উপজেলা ছাত্রশিবিরের সভাপতি মুহিবুল্লাহ হোসনেগীর ও প্রতারক আহবাব। ঐ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কিশোরকন্ঠ পাঠক ফোরামের সিলেট জেলা পূর্ব শাখার প্রধান পৃষ্টপোষক ও গোলাপগঞ্জ উপজেলা শিবিরের সাধারন সম্পাদক হাবিবুল্লাহ দস্তগীর সহ আরো অনেকে।

এদিকে সোমবার দুপুর ১২টায় প্রতারক হাবিবের বাড়ীতে প্রতারনার শিকার অনেকেই ভীড় জমিয়েছেন জানা যায়। আহবাবকে বাড়ীতে না পেয়ে প্রতারনার শিকার বিক্ষুব্দ জনতা রবিবার বিকালে আক্রমন করে ঘরের ফ্রিজ, টিভি, খাট, ৪টি সিএনজি অটোরিক্সা,একটি পিকআপ ভ্যান, শ্যালো মেশিন এমনকি বাড়ীর প্রধান গেইট যে যা পেরেছেন নিয়ে গেছেন ।

সিলেট শহরের তালতলায় বসবাসকারী প্রতরনার শিকার একজন জানান, আহবাবের সাথে আমার এক আত্মীয়ের মাধ্যমে পরিচয় । এরপর কয়েকজন বন্ধুমিলে প্রায় ১০ লক্ষ টাকা আহবাবরে কথিত পোল্টি ফার্মের ব্যবসায় বিনোয়াগ করেছিলাম। আহবাব লাপাত্তার খবর শুনে তার বাড়ীতে এসেছি। অভিযোগের বিষয়ে বক্তব্য জানতে আহবাবের ব্যবহৃত মোবাইলে যোগাযোগ করার চেষ্টা করে থাকে পাওয়া যায়নি ।বাড়ীতে থাকা আহবাবের মা নাছিমা বেগম জানান , “ শনিবার রাত থেকে ছেলের খোজ জানিনা। রবিবার থেকে লোকজন আহবাবকে না পেয়ে বাড়ীর সবকিছু লুটে নিয়েছে। আমি এসব বিষয়ে কিছুই জানিনা,আমার ছেলে দোষী হলে তার শাস্তিহোক।”

স্থানীয় বাজারের ব্যবসায়ী আব্দুল কুদ্দুস টিপু জানান চলতি বছরের ২৯ মার্চ ফার্মের মুরগীর খাবারের ব্যবসার কথা বলে চতুর আহবাব তার কাছ থেকে ৬ লাখ ৬০ হাজার টাকা নিয়েছে এক টাকাও ফেরৎ দেয়নি। নাম প্রকাশ না করার শর্তে সরকার দলীয় একজন সমর্থক জানান, তার ভাইয়ের কাছ থেকে ১২ লক্ষ টাকা প্রতারনার মাধ্যমে নিয়ে ছিলো আহবাব। এরমধ্যে ৮লাখ টাকা উদ্ধার করতে সক্ষম হয়েছি।।জকিগঞ্জ উপজেলার কামালপুর গ্রামের বদরুল হকের ছেলে সোহেল আহমদ জানান, তিনি ১০ লাখ টাকা বিনোয়োগ করেছিলেন আহবাবের কথায়। তাকেও মুরগীর ফার্মের ব্যবসার কথা বলে টাকা আনে এর প্রেক্ষিতে এক্সিম ব্যাংকের একটি চেকও দেয় । ভুটি টিকর ছত্রিশ গ্রামের মুহিব আলী মাস্টারের নাতি পিন্টুর ৫লক্ষ টাকা, ছত্রিশ গ্রামের জালাল মিস্ত্রী ৭০হাজার টাকা, গোলাপগঞ্জ ইউনিয়নের চকরিয়াগ্রামের কামরুল ইসলামের ৭লক্ষটাকা, বিয়ানীবাজার উপজেলার চন্দগ্রাম গ্রামের ব্যবসায়ীআবু বকরের ৫লক্ষ ৬০ হাজার টাকা, একই উপজেলার খাদিম উলি গ্রামের রুনু মিয়ার ২লক্ষ টাকা , হুমায়ুন নামে এক আইনজীবি ও তার ৩ বন্ধুর প্রায় ৪০ লক্ষ টাকা এরকম কয়েকশ লোকের প্রায় ২০ কোটি টাকা নিয়ে পালিয়েছে প্রতারক আহবাব।

এ ব্যাপারে গোলাপগঞ্জ মডেল থানার ওসি (তদন্ত) মীর মোহাম্মদ আবু নাসের জানান,
এ বিষয়ে থানায় কেউ লিখিত অভিযোগ করেনি। লিখিত অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।