গোলাপগঞ্জ প্রতিনিধি। ১০ ফেব্রুয়ারি ২০১৭।

গোলাপগঞ্জ পৌরশহরে জুম্মার নামাজের পর তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে গ্রামবাসী ও পরিবহন শ্রমিকদের মধ্যে রক্ষক্ষয়ী সংঘর্ষে পুলিশসহ প্রায় অর্ধশতাধিক আহত হয়েছেন। শট গানের গুলিতে পরিবহন শ্রমিকরা আহত হওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। সংঘর্ষ থামাতে পুলিশ ১০ রাউন্ড শট গানের গুলি ও ১০ রাউন্ড টিআরশেল নিক্ষেপ করে উভয় পক্ষকে ছত্রভঙ্গ করে দেয়।

গোলাপগঞ্জ মডেল থানার এস আই শংকর চন্দ্র দাস, টিকরবাড়ী গ্রামের লোকমান আহমদ খান সহ ৮ জন সিএনজি অটোরিক্সা চালক, পথচারি, ব্যবসায়ী প্রায় অর্ধ শাতধিক লোকজন আহত হয়েছেন। সন্ধ্যা পৌণে ৭টায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এক প্লাটুন অতিরিক্ত দাঙ্গা পুলিশ গোলাপগঞ্জ পৌরশহরে মোতায়েন করা হয়েছে।

প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা গেছে, পৌরশহরের চৌমুহনী মসজিদ মার্কেট সংলগ্ন বিলাস বিতানের সামনে সিএনজি অটোরিক্সা পার্ক করে রাখাকে কেন্দ্র করে গাড়ী চালক ও বিতানের কর্মচারীর মধ্যে কথা কাটাকাটির জের ধরে সিএনজি অটোরিক্সা শ্রমিক ও স্থানীয় টিকরবাড়ী এলাকাবাসী বিরোধে জড়িয়ে পড়ে।

এ সময় দুই পক্ষ ইট-পাথর নিক্ষেপ করে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া চালায়। এসময় ২৫টি সিএনজি অটোরিক্সা ভাংচুরসহ স্থানীয় একটি ডেন্টাল ক্লিনিকের কাঁচের গ্লাস ভাংচুর করা হয়। দুই ঘন্টা ব্যাপী সৃষ্ট সংঘর্ষে সিলেট জকিগঞ্জ সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে প্রায় ৪ কিলোমিটারব্যাপী দীর্ঘ যানজট তৈরী হয়।

[image link=”http://138.197.71.33/wp-content/uploads/2017/02/Golap-1.png” img=”http://138.197.71.33/wp-content/uploads/2017/02/Golap-1.png” caption=” সংঘর্ষে অটোরিক্সা ভাংচুর করে গোলাপগঞ্জ বিয়ানীবাজার সড়কে এভাবে ফেলে রাখা হয় “]

খবর পেয়ে গোলাপগঞ্জ মডেল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মীর নাসেরের নেতৃত্বে একদল পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করে ব্যর্থ হন। পরে বিকাল ৩টায় ঘটনাস্থলে সিলেট শহর থেকে অর্ধশতাধিক দাঙ্গা পুলিশ আসে। তখনও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে না আসায় সাড়ে ৩টায় সিলেট রেঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ড. মোহাম্মদ আক্তারুজ্জ্বামান বসুনিয়া ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোহাম্মদ আলতাফ হোসেন ঘটনাস্থলে আসেন।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার বিকাল ৫টায় এ প্রতিবেদককে টিয়ার শেল ও রাবার বুলেট নিক্ষেপের সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। সড়কে যান চলাচল স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে।

এদিকে গোলাপগঞ্জ সিএনজি অটোরিক্সা চালক সমিতির সভাপতি মাখন মিয়া ব্যবসায়ীর পক্ষ নিয়ে স্থানীয় কাউন্সিলরকে (রুহিন আহমদ খান) এই ঘটনায় উস্কানী দিয়ে অবৈধ অস্ত্র সহ প্রথমে হামলা করার অভিযোগ করেছেন এ অভিযোগ করেন। তিনি বলেন, “তারা (কাউন্সিলর গ্রুপ) পুলিশের সামনেই কয়েক রাউন্ড গুলি করে ও ইট নিক্ষেপ করে ২৫টি গাড়ী ভাংচুর করেছে, এতে প্রায় ৮জন চালক আহত হন”।

অপর দিকে কাউন্সিলর রুহিন আহমদ খাঁন এ দাবি অস্বীকার করে বলেন, ‘আমি অটোরিক্সা সমিতির সভাপতিকে (মাখন মিয়া) বিষয়টি সমাধান করে দেওয়ার আশ্বাস দিলেও তিনিই প্রথম চালকেদের হামলার নির্দেশ দেন। পুলিশের সামনে আমাদের লোকজনের পক্ষ থেকে যে গুলির ছোড়ার কথা বলেছেন তা মিথ্যা ও ভিত্তিহীন।’

এদিকে ঘটনার সূত্রপাত যাকে নিয়ে, সেই সিএনজি চালক পৌরসভার রণকেলী গ্রামের তোফায়েল আহমদ জানান, ‘আমি ঐ দোকানের সামনে গাড়ি রেখে তাদেরই দোকানে গিয়েছিলাম কিছু কেনার জন্য কিন্তু দোকানের কর্মচারি আমাকে গাড়ি সরানোর জন্য গালিগালাজ শুরু করে এক পর্যায়ে উত্তেজিত হয়ে ছুরি নিয়ে আমার উপর হামলা করলে আমার বাম কানের নিকট জখম হয়’।

হামলা শুরু হলে বিপনি বিতানটি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় তাদের কোন বক্তব্য পাওয়া যায়নি তবে দোকানটির মালিক স্থানীয় টিকরবাড়ী গ্রামের সামছুল ইসলাম বলে জানা গেছে।

শুক্রবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত পরিস্থিতি থমথমে ও আবারো সংঘর্ষের আশংকা থাকায় পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। অপরদিকে ক্ষুদ্ধ শ্রমিক নেতৃবৃন্দ ও সিএনজি অটোরিক্সা শ্রমিকরা একটি বৈঠকে বসেছেন বলে জানাগেছে। বৈঠক থেকে ২দিন হরতালের ঘোষনা আসতে পারে বলে আভাস পাওয়া গেছে।