গোলাপগঞ্জে প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে মামলা ও জেল হাজতে পাঠানোর অভিযোগে জনপ্রতিনিধি ও আইনজীবীসহ ৭ জনের বিরুদ্ধে সিলেট অতিরিক্ত চীফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতে মামলা করা হয়েছে। সম্প্রতি ফুলবাড়ি ইউনিয়নের কিসমত মাইজভাগ গ্রামের মৃত আব্দুল হাই চৌধুরীর ছেলে সুমন আহমদ চৌধুরী মামলাটি করেন।

তিনি অতিরিক্ত চীফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিষ্ট্রেট আদালত সিলেটে এ মামলাটি (সি.আর মামলা-১২৯/২০২১) দায়ের কারায় আদালত তা আমলে নিয়ে তদন্তপূর্বক প্রতিবেদন দাখিলের জন্য পিবিআইকে নির্দেশ প্রদান করেছেন।

মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, মামলার বাদি সুমন আহমদ চৌধুরীর ভাই প্রবাসী আবুল খায়ের চৌধুরী দেশে থাকা অবস্থায় হেতিমগঞ্জ বাজারে কাপড়ের ব্যবসা করতেন। সে সুবাদে একই উপজেলার নিমাদল গ্রামের ছয়ফুল ইসলাম আরব আলীর ছেলে, লক্ষীপাশা ইউপির সদস্য রুহেল আহমদের সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে উঠে। এক পর্যায়ে বাদীর ভাই আবুল খায়ের চৌধুরী ২০১৭ সালে প্রবাসে চলে যান। বর্তমানে তিনি প্রবাসে আছেন। প্রবাসে যাওয়ার পর ইউপি সদস্য রুহেল আহমদ সংঘবদ্ধ চক্র নিয়ে রহস্যজনক কারণে টাকা পাওনা বাবদ একে একে করে ৭টি উকিল নোটিশ প্রেরণ করেন। এতে আবুল খায়ের চৌধুরীর সাথে প্রবাসে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান রুহেল আহমদের সাথে কোন আর্থিক লেনদেন হয়নি এমনকি কোন চেক বাবদ কোন ডকুমেন্ট দেয়া হয়নি।

রুহেল আহমদ অবশেষে বিজ্ঞ আদালতে ১৯৭/২০১৮ মামলা দাখিল করে সুমন আহমদ ও তার মাতাকে আটক করে জেল হাজতে প্রেরণ করান। বর্তমানে আদালত থেকে জামিনে আছেন বলে জানা যায়। জামিনে এসে মামলার নথি সংগ্রহ করলে বেরিয়ে আসে থলের বিড়াল। ওই নথিতে দেখা যায় জাল জালিয়াতির মাধ্যমে বিভিন্ন দলালাদি ও স্বাক্ষর জাল করে আদালতে মামলা করে হয়রানিসহ জেল হাজতে প্রেরণ করে ওই চক্র।

আরও জানা যায়, রহস্যজনক কারণে ইউপি সদস্য রুহেল আহমদ একই এলাকার মৃত সফিক উদ্দিনের ছেলে মিজানুর রহমান বাবুল ও সিলেট কোর্টের নোটারি পাবলিক আইনজীবী আবুল হাসানের যোগসাজশ ও প্রতারণার মাধ্যমে একটি চক্র সংঘবদ্ধ হইয়া জাল দলিলাদি সৃষ্টি, স্বাক্ষর জাল জালিয়াতির মাধ্যমে ভূমি বিক্রয় সংক্রান্ত চুক্তিপত্র ও ভূমি বিক্রয়ের নিমিত্তে টাকা পরিশোধ সংক্রান্ত জালিয়াতি করে সেটি সঠিক ও খাটি হিসেবে নোটারী পাবলিক সিলেটের মাধ্যমে সত্যায়ন করে সংগোপনে রেখে ইউপি সদস্য ৭টি চেকের মামলার মধ্যে একটি মামলায় ২০১৯ সালে ১০ লাখ টাকার তিন গুন ৩০ লাখ টাকার জরিমানা ও ১ বছরের বিনাশ্রম কারাদণ্ড মর্মে রায় হাসিল করিয়াছেন।

পরবর্তীতে বিভিন্ন ভাবে তল্লাশি করিয়া নোটারি পাবলিক সিলেট এর এডভোকেট মো. আবুল হাসানের সম্পাদন সত্যায়ন হওয়া ২৫/৫/২০১৭ইং তারিখের ১০নং ক্রমিকযুক্ত ও ২০/১০/২০১৭ইং তারিখের ১১নং ক্রমিকযুক্ত অঙ্গিকারনামার অবিকল নকল কপি সংগ্রহ করলে মামলার বাদি সুমন আহমদ চৌধুরী অবগত হন এবং সৃষ্টিকৃত বিভিন্ন ডকুমেন্টে স্বাক্ষর করেন নাই। তার ভ্রাতাগণ ও মাতা আদালতে উপস্থিত হন নাই এবং আইনজীবীর সম্মুখে এসে কোন স্বাক্ষরও করেন নাই। রুহেল আহমদ সংঘবদ্ধ হইয়া মিথ্যা জাল বানোয়াট, জাল ডকুমেন্ট সৃষ্টি করে স্বার্থ হাসিলের পায়তারা করা ও হয়রানিসহ অন্যায় ভাবে জেল খাটানো এবং জাল ডকুমেন্ট সৃষ্টি করে আদালতে জরিমানাসহ ৩০ লাখ টাকার রায় করানোর ফলে তদন্তপূর্বক আসামীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা ও মূল রহস্য উদঘাটন করার জন্য সুমন আহমদ চৌধুরী বাদি হয়ে অতিরিক্ত চীফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতে মামলা নং ১২৯/২১ দায়ের করলে বিজ্ঞ আদালত মামলাটি আমলে নিয়ে তদন্ত পূর্বক প্রতিবেদন দাখিলের জন্য পিবিআইকে নির্দেশ প্রদান করছেন।

মামলার অন্যান্য আসামীরা হলেন- উপজেলার নিমাদল গ্রামের মৃত আব্দুল আজিজের ছেলে খলিলুর রহমান, একই উপজেলার হাজিপুর শুকনা গ্রামের মৃত মকবুল আলীর ছেলে মোঃ ছালিক আহমদ ও শ্রীরামপুর গ্রামের মৃত আব্দুল মালিকের ছেলে মোঃ সোহেল আহমদ।

এ ব্যাপারে মামলার বাদী সুমন আহমদ চৌধুরী বলেন, ইউপির সদস্য রুহেল আহমদ বিভিন্ন কৌশলে সংঘবদ্ধ একটি চক্রের মাধ্যমে বিভিন্ন জাল কাগজপত্র তৈরি করে দীর্ঘদিন ধরে আমার পরিবারকে হয়রানি করে আসছে। এমনকি আমাকে ও আমার মাকে জেল হাজতে প্রেরণ করেছে। এই সংঘবদ্ধ চক্রের মুখোশ উন্মোচন করতে আমি আদালতে মামলা করেছি।

এ ব্যাপারে মূল অভিযুক্ত ইউপি সদস্য রুহেল আহমদের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে তিনি কল রিসিভ করেননি।

সূত্র: সিলেটটুডে

বিয়ানীবাজারে সরু রাস্তায় ভোগান্তিতে সহস্রাধিক চলাচলকারী