সিলেট জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের গবেষণায় এডিস মশার অস্তিত্ব মিলেছে। এই এডিস মশার কামড়ে সিলেটে ব্যাপকহারে ডেঙ্গু ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা করছে স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তারা। তারা সিলেট নগরীর বিভিন্ন এলাকা থেকে নমুনা সংগ্রহ করে গবেষণা করছেন। যেসব এলাকা বেশি সংখ্যক এডিস মশার অস্বিত্ব মিলবে সেখানে বেশি সতর্কবস্থা গ্রহণ করা হবে। সিলেট জেলা সিভিল সার্জন হিমাংশু লাল রায় গতকাল জানিয়েছেন, ডেঙ্গু প্রকোপ শুরু হওয়ার পরপরই জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের পক্ষ থেকে একটি গবেষণা চালানো হয়।

তার সিলেট নগরীর কদমতলীর কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল থেকে নমুনা সংগ্রহ করা হয়। এই নমুনা সংগ্রহের স্থান হচ্ছে পুরাতন টায়ারের দোকান কিংবা তার আশেপাশের এলাকা। সেখান থেকে তারা নমুনা সংগ্রহ করে এনে পরীক্ষা করে দেখেছেন সিলেটের ওই এলাকায় এডিস মশার অস্তিত্ব রয়েছে। সেখান থেকে তারা এডিস মশার লার্ভা রয়েছে।

পরবর্তীতে সেই লার্ভা থেকে এডিস মশার জন্ম হয়েছে। সিভিল সার্জন জানান, এই গবেষণায় প্রমাণ করে সিলেটে এডিস মশার অস্তিত্ব রয়েছে। এবং এই মশা দ্বারা সিলেটের মানুষ আক্রান্ত হতে পারে। তবে আশার কথা হলো সিলেটের মানুষ ইতিমধ্যে সচেতন হয়ে উঠেছে। এরই মধ্যে শুরু করা হয়েছে পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা অভিযানও।

এদিকে গতকাল পর্যন্ত সিলেটে সরকারি বেসরকারি হাসপাতালসহ সব মিলিয়ে ৮৬ জন ডেঙ্গু রোগী হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন। এর মধ্যে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি থাকা রোগীর সংখ্যা ৪৩ জন। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ সকালে পরিসংখ্যান তুলে ধরে জানিয়েছেন ২৪ ঘণ্টা হাসপাতালে আরো ১৩ জন রোগী ভর্তি হয়েছে।

সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ডেঙ্গু কর্ণার ও মেডিসিন কর্নারের আবাসিক সার্জন ডা. আবু কামরান রাহুল জানিয়েছেন, প্রতিদিনই রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। এতে করে ডেঙ্গু কর্ণার বাড়ানো হয়েছে। হাসপাতালের ২৭ নম্বর ওয়ার্ডে মোট তিনটি ডেঙ্গু কর্নারে ৩২ জন রোগীকে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। আর মহিলা ওয়ার্ডে বাকিদের চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। তিনি জানান, রোগী বাড়ার কারণে তারা ডেঙ্গু কর্নারও বাড়াচ্ছেন। এবং বিনামূল্যে তাদের চিকিৎসা প্রদান করা হচ্ছে। সিভিল সার্জন জানিয়েছেন, সিলেটের ৪টি বেসরকারি মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও বিভিন্ন ক্লিনিকে ৪৩ জন ডেঙ্গু রোগী চিকিৎসা নিচ্ছেন।

জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ এসব ডেঙ্গু রোগী সম্পর্কে খোঁজখবর নিচ্ছেন। পাশাপাশি ডেঙ্গু রোগ শনাক্ত করনে যে প্যাথলজিক্যাল নিরীক্ষা সেখানে সরকার নির্ধারিত ৫০০ টাকা নেয়া হচ্ছে। এ বিষয়টিও মনিটরিং করা হচ্ছে বলে জানান তিনি। এদিকে গতকাল বিকাল পর্যন্ত সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যেসব রোগী ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন তারা সবাই ঢাকা ফেরত। এখন পর্যন্ত সিলেটে আক্রান্ত হওয়া রোগী পাওয়া যায়নি। সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সহকারী পরিচালক ডা. আবুল কালাম আজাদ জানিয়েছেন, কেস স্ট্যাডি করে আমরা জেনেছি যারাই আক্রান্ত হচ্ছে তাদের ঢাকা ভ্রমণের কারণে হচ্ছে। এ কারণে এখনো সিলেটে স্থানীয়ভাবে আক্রান্ত হওয়ার খবর আসেনি।

তিনি বলেন, ওসমানী হাসপাতালে রোগ নির্ণয়ের জন্য পর্যাপ্ত কিট নেই। জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ থেকে তারা ৫০টি কিট নিয়ে এসেছিলেন। সেগুলো শেষ হয়ে গেছে। এরপর ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ কিট কিনেছে। বিনামূল্যে হাসপাতালে রোগীদের চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। বুধবার রাতে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি থাকা এক রোগীর শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটেছিল। পরে রাতেই তাকে জরুরি ভিত্তিতে আইসিইউতে স্থানান্তরিত করা হয়। সকালে দিকে তার অবস্থার উন্নতি হয়েছে। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, শাহজাহান নামের ওই রোগীর অবস্থা ভালো। চিকিৎসা অব্যাহত থাকায় তার শারীরিক অবস্থার উন্নতি হচ্ছে বলে জানান তারা।

সূত্র- সুরমা নিউজ।