সতর্ক থাকাঃ ভারতীয় উপমহাদেশের দেশগুলোর জনগণ স্বভাবতই আনাড়ি, অসচেতন। তাই এই করোনা মহামারিতে আমাদের সকলকে সচেতন থাকতে হবে। অপরকে সচেতন করতে হবে। বর্তমানে বিশেষ করে আমাদের বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ভূমিকা অতুলনীয়, তাঁরা দিনরাত পরিশ্রম করে যাচ্ছেন। জনসমাগম যাতে না হয় সেদিকে তারা যথেষ্ট সচেষ্ট রয়েছেন। আমাদের সকলকে পুলিশ ও আইন শৃঙ্খলা বাহীনিকে সহযোগিতা করতে হবে। বিশেষ করে লকডাউনে থাকা জেলা সমূহে অনধিকার প্রবেশ বন্ধ রাখতে হবে। ঠিক তেমনি একটি উপজেলা থেকে অন্য উপজেলায়। একটি গ্রাম থেকে অন্য গ্রামে অনধিকার প্রবেশ না করাই শ্রেয়।

বাংলাদেশের বেশিরভাগ মানুষ আস্তিক তাই যে, যে ধর্মই পালন করি না কেনো, ধর্মীয় কাজে যাতে গণজমায়েত না ঘটে, খেয়াল করতে হবে। মসজিদ, মন্দির, গীর্জা প্যাগোডা এগুলোর পরিচালনা কমিটির সকলকে খেয়াল করতে হবে, এই মহামারী করোনার সময় কোনো অবস্থাতেই জনসমাগম না হয়। যেমনটি হয়েছে, ব্রাহ্মণবাড়িয়ায়, একাধিকবার। ঠিক তেমনি জনসেবামুলক প্রতিষ্ঠান গুলোতেও ভীড় করা যাবে না।

ত্রাণ বিতরণ করতেও জনসমাগম এড়িয়ে চলতে হবে। দুস্থ অসহায় গরীব পরিবারগুলোকে তাদের বাসায় ত্রাণ পৌছাতে হবে। খাদ্যদ্রব্য, ঔষধপত্ত বাজার থেকে ক্রয় করতে হলে বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।

বারবার সাবান দিয়ে হাত ধৌত করতে হবে। মুসলিমদের প্রতিদিন পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করতে হবে। অন্যান্য ধর্মাবলম্বীরাও ধর্মকর্ম করতে হবে। প্রতিদিন গোসল করবেন। প্রতিদিনের জামাকাপড় ধৌত করবেন।

আমাদের করণীয়ঃ বর্তমানে করোনাভাইরাসের কারনে লকডাউনে থাকা কর্মজীবী, নিম্ন আয়ের মানুষের পাশে থাকতে হবে। তাদের আর্থিক সহযোগিতা করতে হবে। সমাজের বিত্তবান, আর্থিক সামর্থ্যবান ব্যক্তিরা অসহায় এই কর্মহীন কর্মজীবী লোকদের পাশে থাকতে হবে। বিভিন্ন সেবামূলক সংগঠনগুলোকে শ্রমজীবী মানুষের পাশে দাঁড়াতে হবে।

আপনার প্রতিবেশিদের খোজ খবর নিন, এরা খেতে পেয়েছে কি না? ওদের ঘরে খাবার আছে কি না? বিত্তবানদের প্রতি আমার আহ্বান, আপনি বাজার থেকে একসাথে একমাসের খাবার ক্রয় করবেন না।  কেন না এতে বাজারে খাদ্য ঘাটতি দেখা দিতে পারে। এই সুযোগে অসাধু ব্যবসায়ীমহল দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি করতে পারে! এর প্রভাব নিম্ন আয়ের মানুষদের উপর প্রকট হতে পারে।

হে বিত্তবান ভাই ও বোনেরা, আপনার ঘরের টাকা কেউ জোর করে কেড়ে নিতে পারবে না। কিন্ত আপনি যদি এভাবে বাজার করেন তাহলে আপনার কারনে যে পরিমাণ দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি পাবে, মনে রাখবেন ঐ পরিমাণ টাকা আপনি গরীবের পকেট থেকে ডাকাতির সমান।

আমার প্রিয় ব্যবসায়ী ভাইয়েরা, জীবনের এই ক্রান্তিকালে দয়া করে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি করবেন না, মজুত করবেন না।

চাল চোরদের কথা নাই বললাম, কারণ ‘চোরা না শুনে ধর্মের কাহিনী’। হে মহান ব্যক্তিগণ, জীবনের এই করুন সময়ে আপনি, জনসেবার মাধ্যমে আপনার মহানুভবতা প্রকাশ করুন।

প্রিয় ভাইবোনেরা ঘরে থাকি, সচেতন থাকি, সুস্থ থাকি।

সরকার মহোদয়ের প্রতিঃ জনগণ বাঁচলে দেশ বাঁচবে, দেশ বাঁচলে সরকার বাঁচবে। জাতির এই ক্রান্তিকালে জনসেবাই হউক সরকারের ব্রত। সেনাবাহিনীকে কাজে লাগানো যায়, জাতীয় ত্রাণ কমিটিতে সেনাবাহিনীর প্রধান অফিসারকে সদস্য সচিব করা যেতে পারে। প্রতিটি জেলায় জেলা প্রশাসককে প্রধান ও একজন আর্মি অফিসারকে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বানিয়ে প্রতিটি উপজেলায় উপজেলা চেয়ারম্যান, ইউএনও, ও কয়েকজন আর্মি অফিসারের নেতৃত্বে প্রতিটি ইউনিয়নে ত্রাণ বিতরণ করা যেতে পারে। এভাবে প্রতিটি ওয়ার্ড, মহল্লায় ত্রাণ বিতরণ করা যায়।

ডাক্তার বাঁচলে দেশ বাঁচবে। জাতির এই ক্রান্তিলগ্নে ডাক্তারদের সেফটি অতিবো জরুরী, প্রতি ডাক্তারের জন্য প্রয়োজনীয় পিপিই’র ব্যবস্থা করতে হবে। ডাক্তারদের পরিবারের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে হবে। তাদের ছেলে-মেয়ের, মা-বাবার দায়িত্ব সরকারকে নিতে হবে। ডাক্তার-নার্সদের জীবন বীমা যৌক্তিকভাবে নিশ্চিত করতে হবে।

করোনাভাইরাস সনাক্তকরণ কীট প্রচুরসংখ্যক আমদানি করতে হবে এবং যথা সম্ভব নমুনা সংগ্রহ করে রোগী চিহ্নিত করতে হবে।
করোনাভাইরাস উপসর্গ আছে এমন ব্যক্তিদের হোম কোয়ারেন্টাইন/প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেইন্টাইন নিশ্চিত করা অতিবো জরুরী।

বাংলাদেশ জনবহুলতম দেশ। আল্লাহ না করুক, যদি এই করোনাভাইরাস বিষ্ফোরণ ঘটে। ভাবা যায়, কি হবে?

জনগণকে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে পুলিশ, সেনাবাহিনী, বিজিবিকে কাজে লাগাতে হবে। প্রয়োজনে কঠোর থেকে কঠোরতর ব্যবস্থা নিতে হবে।

জনদূর্ভোগ লাগবের জন্য বাজার মনিটরিং বাড়াতে হবে। কোনো ব্যবসায়ী যাতে মজুত, আড়তদারী, বেশি মূল্যে দ্রব্য বিক্রয় করতে না পারে, এজন্য ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান প্রসারিত করতে হবে। করোনাভাইরাস দুর্যোগকালীন সময়ে সেনাবাহিনীকে সব সময় মাঠে রাখতে হবে।।

শিক্ষার্থীদের পাঠদানের জন্য বিটিভিকে বেছে নিতে হবে।

বর্তমান ইরি মৌসুমে পর্যপ্ত খাদ্য সংগ্রহ করতে হবে। কৃষককে শস্যের সঠিক মূল্য পরিশোধ করে, ধান সংগ্রহ করতে হবে। খাদ্য শস্য আমদানি করা যেতে পারে।

সকল সরকারি চাকুরীজীবীদের জন্য রেশনের ব্যবস্থা করতে হবে।

চালচুরি, গমচুরি ঠেকাতে দরিদ্র প্রতিটি আইডিকার্ড সনাক্তকরণ করতোঃ নগদ টাকা বিকাশ/ ব্যাংক একাউন্টে জবা দিয়ে দিতে পারেন।

লকডাউন কার্যকর করতে হোমকোয়ারেনটাইন নিশ্চিত করতে হবে।

প্রিন্ট, ইলেক্টিক ও অনলাইন মিডিয়ার সংবাদকর্মী ভাইদের জন্য বিশেষ ভাতার ব্যবস্থা করা জরুরী।

এই মুহুর্তে মোবাইল কোম্পানীগুলোকে কলরেট কমানো, নেটওয়ার্ক নিশ্চিতকরণ, মোবাইল এমবি/জিবি দাম কমাতে কোম্পানিগুলোকে চাপ দিতে হবে।

বিদ্যুৎ বিলের জরিমানা মওকুফ করতে হবে যতদিন লকডাউন চলবে তত দিন।

(লকডাউন শেষে পল্লীবিদ্যুৎ কোঃ সরকারিকরণ করতে হবে। এই কোম্পানী কাবুলিওয়ালার চেয়েও ভয়ঙ্কর।)

সচেতন হই
ঘরে থাকি
সাবান দিয়ে হাত ধূই
সুস্থ থাকি।

  • লেখক- সাধারণ সম্পাদক, প্রাথমিক সহকারী শিক্ষক সমিতি, বিয়ানীবাজার উপজেলা।

‘এবি টিভি’র সর্বশেষ প্রতিবেদন-