উজানের পাহাড়ি ঢল ও টানা বৃষ্টিতে সিলেটের বিয়ানীবাজারের কুশিয়ারা নদীর বিভিন্ন এলাকার ডাইক ভেঙ্গে পানি বেড়ে লোকালয়ে প্রবেশ করায় বিয়ানীবাজারের বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়েছে। তাছাড়া টানা বৃষ্টি অব্যাহত থাকায় সময় সময় বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে।

কুশিয়ারা নদীর পানি বিপদসীমার উপরে অবস্থান করায় বাড়তে মঙ্গলবার রাত থেকে তীরবর্তী বিভিন্ন এলাকায় ডাইক উপচে পানি লোকালয়ে ঢুকে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি সাধিত হয়েছে। চরম দুর্ভোগের মধ্যে এখন দিন পার করছেন এসব এলাকার মানুষ। একইসাথে বারইগ্রাম-সিলেট আঞ্চলিক মহাসড়কের বিভিন্ন এলাকা ডুবে যাওয়ায় সিলেট শহরের যোগাযোগের ক্ষেত্রেও বেগ পোহাতে হচ্ছে জনসাধারণকে।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, মঙ্গলবার রাতে উপজেলার শেওলা ইউনিয়নের দীঘলবাগ এলাকার কুশিয়ারা নদীর ডাইক ভেঙ্গে লোকালয়ে প্রবেশ করেছে বন্যার পানি। ফলে বন্যার পানিতে তলিয়ে যাচ্ছে ফসলি জমি। পাশাপাশি বাসাবাড়ি, দোকানপাট, হাটবাজার, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানও তলিয়ে যাচ্ছে পানির নিচে। গত দুইদিন ধরে কুশিয়ারা নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যহাত থাকায় বারইগ্রাম-সিলেট আঞ্চলিক মহাসড়কের কাকরদিয়া, চারখাই ও আলীনগরসহ বিভিন্ন অংশ পানির নিচে ডুবে গেছে। এতে দুরভোগ পোহাতে হচ্ছে যান চালক ও সড়ক ব্যবহারকারী জনগনকে। এই অবস্থার জন্য এলাকাবাসী পানি উন্নয়ন বোর্ডকে দায়ী করেছেন। ওই রাতে দুবাগ ইউনিয়নের খাড়াভরা-মইয়াখালি এলাকার কুশিয়ারা নদীর ডাইকের উপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হতে দেখা গেছে। এতে নদী তীরবর্তী ফসলী জমি, বাড়িঘর ও রাস্তাঘাট বন্যায় কবলিত হওয়ার শংকা দেখা দিয়েছে।

স্থানীয়রা বলেন, কুশিয়ারা নদীর শেওলা ইউনিয়নের দীঘলবাগ বাঁধটি ভাঙনের হাত থেকে বাচাতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কোন উদ্যোগ লক্ষ্য করা যায়নি। নদীর পানি বাড়ার আগে থেকেই সব ভেঙে নদীতে চলে যাচ্ছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডকে বারবার বিষয়টি অবগত করলেও তারা কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি।

সরেজমিনে গিয়ে স্থানীয়দের সাথে আলাপ করে জানা গেছে, বন্যার পানি লোকালয়ে প্রবেশ কয়ায় কবলিত এলাকার বাড়িঘর ছেড়ে গৃহপালিত পশু নিয়ে অন্যত্র অবস্থান নিয়েছেন। চরম দুর্ভোগে পড়েছেন নদীপাড়ের মানুষজন। বন্যার পানিতে বিভিন্ন প্রজাতির সাপের উপদ্রবও দেখা গেছে। উজানের ঢল আর বৃষ্টি না থামলে বন্যা পরিস্থিতি ভয়ঙ্কর আকার ধারণ করার আশঙ্কা রয়েছে।

এদিকে, এর আগে গত রোববার ভোর রাতে শেওলা ইউনিয়নের কাকরদিয়া দক্ষিণভাগ অংশে কুশিয়ারা নদীর ডাইক কেটে দেয় দুর্বৃত্তরা। ফলে লোকালয়ে হু হু করে পানির প্রবেশ এখনো পর্যন্ত অব্যাহত রয়েছে। পরে বিষয়টি জানতে পেরে তাৎক্ষনিক ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন বিয়ানীবাজার উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আবুল কাশে পল্লব। এ সময় তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করেন এতক্ষনিপাড়ের মানুষকে রাতে ডাইক পাহারা দেয়ার জন্য আহবান জানান।

উপজেলা চেয়ারম্যান আবুল কাশেম পল্লব বলেন, গুটি কয়েক মানুষ মাটি ও বালু ব্যবসার লোভে উপজেলার লাখো মানুষকে পানি বন্দি হওয়ার শংকা ফেলেছে। এসব দুর্বৃত্তদের সন্ধান পেলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবেজানিয়ে তিনি নদী পাড়ের মানুষকে পাহারা দিয়ে ডাইক রক্ষা করার জন্য আহবান জানান। এ সময় তিনি দায়িত্বশীলদের সাথে আলাপ করে ডাইক দ্রুত সময়ের মধ্যে মেরামত করার ব্যবস্থা প্রদান করেন।

অন্যদিকে, বন্যা নিয়ন্ত্রণে ব্যাপক উদ্যোগ গ্রহণ করেছে বিয়ানীবাজার উপজেলা প্রশাসন। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, বন্যার পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করতে উপজেলায় কন্ট্রোল রুম চালু রয়েছে। ইতোমধ্যে বন্যার্ত মানুষের সহায়তায় বন্যা কবলিত এলাকা সংলগ্ন সর্বমোট ২৪টি আশ্রয় কেন্দ্র প্রস্তুত রেখেছে উপজেলা প্রশাসন। পাশাপাশি বন্যার্তদের মধ্যে চাল-ডালসহ শুকনো খাবার সরবরাহ করা হচ্ছে বলেও জানা গেছে।

সিলেট পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, মঙ্গলবার দুপুর ১২টায় বিয়ানীবাজারের কুশিয়ারা নদীর শেওলা পয়েন্টে ০ দশমিক ৪৭ সেন্টিমিটার পর্যন্ত বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।