মৌলভীবাজারের কুলাউড়া-শাহবাজপুর রেলপথের পুনর্বাসন প্রকল্পের কাজ এগোচ্ছে ধীরগতিতে। প্রকল্পের মেয়াদ প্রায় শেষ হয়ে এলেও এখনো চলছে প্রাথমিক পর্যায়ের কাজ। এ অবস্থায় প্রকল্পের মেয়াদ আরো ছয় মাস বাড়ানো হয়েছে। ২০১৮ সালের মে মাসে শুরু হওয়া প্রকল্পের কাজ ২০২০ সালের মে মাসে শেষ হওয়ার কথা ছিল। প্রকল্পের বর্ধিত মেয়াদ অনুযায়ী কাজ শেষ হওয়ার কথা ২০২০ সালের ডিসেম্বরে।

গত বৃহস্পতি ও শুক্রবার সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, রেলপথের পুরনো রেল সরিয়ে ফেলা হয়েছে। ভাঙা হয়েছে পুরনো সেতু ও কালভার্ট। পুরনো স্টেশনঘর ভাঙার কাজ চলছে। শাহবাজপুর স্টেশন এলাকা ও দক্ষিণ শাহবাজপুর ইউনিয়ন এলাকার কিছু স্থানে রেলপথের মাটি সরিয়ে সেখানে নতুন করে মাটি ফেলে উঁচু করার কাজ চলছে। শাহবাজপুর ও মুড়াউলে নতুন স্টেশনঘর নির্মাণের প্রস্তুতি চলছে। সেখানে পাথর, রেলসহ প্রয়োজনীয় সামগ্রী এনে মজুদ করা হচ্ছে। তা ছাড়া এই লাইনের কাজে আর কোনো অগ্রগতি দেখা যায়নি।

রেলওয়ে ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ১৮৮৫ সালে আসাম-বেঙ্গল রেলওয়ের অংশ হিসেবে কুলাউড়া-শাহবাজপুর রেললাইন চালু হয়। রেলপথটির দৈর্ঘ্য ৫২ দশমিক ৫৪ কিলোমিটার। বড়লেখা উপজেলার লাতু সীমান্ত দিয়ে কুলাউড়া রেলওয়ে জংশন হয়ে আসাম রেলওয়ের ট্রেন দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে যাওয়া-আসা করত। কুলাউড়া-শাহবাজপুর লাইনে চলাচলকারী ট্রেনটি এলাকাবাসীর কাছে ‘লাতুর ট্রেন’ নামে পরিচিত ছিল। রেললাইনটি চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়ায় তা সংস্কার না করেই রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ ২০০২ সালের ৭ জুলাই লাইনটি বন্ধ করে দেয়। এতে বড়লেখা, জুড়ী ও কুলাউড়া এলাকার লোকজন দুর্ভোগে পড়ে। এরপর লাইনটি চালু করার জন্য নানা কর্মসূচির মাধ্যমে আন্দোলন করে এলাকাবাসী।

২০০৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মৌলভীবাজার-১ (বড়লেখা-জুড়ী) আসনে মহাজোটের প্রার্থী বর্তমানে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু মন্ত্রী মো. শাহাব উদ্দিনের অন্যতম প্রতিশ্রুতি ছিল, বিজয়ী হলে কুলাউড়া-শাহবাজপুর রেললাইন চালু করবেন। পরবর্তী সময়ে ২০১৩ সালের ৯ নভেম্বর বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বড়লেখা সফরকালে বড়লেখা ডিগ্রি কলেজ মাঠে আয়োজিত জনসভায় রেললাইন চালুর ঘোষণা দেন।

এর পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৫ সালের ২৬ মে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় ৬৭৮ কোটি টাকা ব্যয়ে কুলাউড়া-শাহবাজপুর রেলপথ পুনঃস্থাপন প্রকল্প অনুমোদিত হয়। এর মধ্যে বাংলাদেশ সরকার দেবে ১২২ কোটি ৫২ লাখ টাকা এবং ভারত সরকার দেবে ৫৫৫ কোটি ৯৯ লাখ টাকা। ৪৪ দশমিক ৭৭ কিলোমিটারের পুরোটিই দ্বৈত গেজ লাইন করা হবে। এর মধ্যে ৭ দশমিক ৭৭ কিলোমিটার লুপ লাইনের কাজ হবে। ওই বছরের ৬ জুন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বাংলাদেশ সফরকালে প্রকল্পটির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করা হয়।

ভারতের দিল্লির ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ‘কালিন্দি রেল নির্মাণ’ দরপত্রের মাধ্যমে এ কাজ পায়। প্রকল্পের পরামর্শক হিসেবে কাজ করছে ভারতের ‘বালাজি রেল রোড সিস্টেমস’। কুলাউড়া-শাহবাজপুর রেলপথে ছয়টি স্টেশন রয়েছে। সেগুলো হচ্ছে কুলাউড়া, জুড়ী, দক্ষিণভাগ, কাঁঠালতলী, বড়লেখা, মুড়াউল ও শাহবাজপুর। রেলপথটি ডুয়াল গেজের হবে। ছয়টি স্টেশনের চারটি বি ও দুটি ডি শ্রেণির হবে।

বাংলাদেশ রেলওয়ের কুলাউড়া সেকশনের ঊর্ধ্বতন উপসহকারী প্রকৌশলী (কার্য) মো. জুয়েল হোসেন বলেন, ‘প্রতিদিন কাজ ঘুরে দেখছি। কাজ ভালোভাবে এগোচ্ছে। বড়লেখা থেকে শাহবাজপুরের দিকে আগের মাটি কেটে নতুনভাবে মাটি দিচ্ছে। ওপরের এক মিটার মাটি কেটে তুলে ফেলা হবে। তারপর লেয়ার বাই লেয়ার কমপেকশন করে নতুন করে মাটি দেবে। ডুয়াল গেজ হবে। এ জন্য দুই পাশে মাটি বাড়বে। বর্ষায় কাজ কিছুটা ব্যাহত হওয়ায় কাজের মেয়াদ আরো ছয় মাস বেড়েছে।’

তথ্যসূত্র- কালের কন্ঠ।