কুলাউড়া উপজেলার ১৩টি ইউনিয়নে ২৮ নভেম্বর অনুষ্ঠিত হবে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন। আওয়ামী লীগের গলার কাঁটা ৯ বিদ্রোহীকে এবার দল থেকে বহিস্কার করলেন স্থানীয় নেতারা। আর নির্বাচনী আচরণবিধি ভঙ্গ করায় শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিল প্রশাসন। সব দিক থেকেই তৃতীয় ধাপের নির্বাচনে যেন কড়াকড়ি অবস্থা।

ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়নবঞ্চিত হয়ে বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে মাঠে নেমেছিলেন দলটির ৯ নেতাকর্মী। গত বুধবার তাদের বহিস্কার করেছে কুলাউড়া উপজেলা আওয়ামী লীগ। উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি রফিকুল ইসলাম রেনু ও সাধারণ সম্পাদক আ স ম কামরুল ইসলাম এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানান।

বহিস্কৃতরা হলেন- বরমচাল ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান খোরশেদ আহমদ খান সুইট, ভাটেরা ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান সৈয়দ এ কে এম নজরুল ইসলাম ও বিদ্রোহী প্রার্থী কামাল ইবনে শহীদ চৌধুরী, কুলাউড়া সদর ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান নার্গিস আক্তার বুবলি ও বিদ্রোহী প্রার্থী শাহাদাৎ হোসেন চৌধুরী, টিলাগাঁও ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান আবদুল মালিক, শরীফপুর ইউনিয়নের বিদ্রোহী প্রার্থী খলিলুর রহমান, কর্মধা ইউনিয়নের মুহিবুল ইসলাম আজাদ ও মছলু আমিন।

প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়, দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গ করে বিদ্রোহী প্রার্থী হওয়ায় দলের পদ-পদবি এমনকি দলের প্রাথমিক সদস্য পদ থেকেও তাদের বহিস্কার করা হয়েছে। স্থায়ীভাবে বহিস্কারের জন্য জেলা ও কেন্দ্র বরাবর সিদ্ধান্ত পাঠানো হয়েছে।

এদিকে বহিস্কারের তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় টিলাগাঁও ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আবদুল মালিক বলেন, ‘বিগত নির্বাচনে আমাকে বহিস্কার করা হয়েছে। আমি তো দলের কেউ না। আমাকে আবার কেন বহিস্কার করা হলো? এ নিয়ে দ্বিতীয়বার আমাকে বহিস্কার করা হলো। কতবার বহিস্কার করা হলে তা কার্যকর হয়?’

নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘনে জরিমানা :ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে আচরণবিধি প্রতিপালনে কঠোর অবস্থানে এবার উপজেলা প্রশাসন। গত দু’দিনের মোবাইল কোর্টের অভিযানে আচরণবিধি লঙ্ঘনের অপরাধে দুই ইউনিয়নের সাত প্রার্থীকে মোট ২৫ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সাইফুল ইসলাম সজল মোল্লা ও জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট রফিকুল ইসলাম অভিযান পরিচালনা করে দেওয়াল ও যানবাহনে পোস্টার লাগানো, অতিরিক্ত নির্বাচনী ক্যাম্প, বিলবোর্ড স্থাপন ও যানবাহনে স্টিকার লাগানোর দায়ে জয়চণ্ডী ইউনিয়নে নৌকার প্রার্থী আবদুর রব মাহাবুবকে আট হাজার টাকা, স্বতন্ত্র প্রার্থী কমর উদ্দিন আহমদ কমরুকে (আনারস) পাঁচ হাজার টাকা, তিন নম্বর ওয়ার্ডের মেম্বার প্রার্থী আতাউর রহমানকে (মোরগ) দুই হাজার টাকাসহ মোট ১৫ হাজার টাকা জরিমানা করে তা আদায় করেন। এর আগে মঙ্গলবার রাতে উপজেলার বরমচাল ইউনিয়নে দু’জন চেয়ারম্যান ও দু’জন মেম্বার প্রার্থীকে ১০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।

এ বিষয়ে সহকারী কমিশনার (ভূমি) সাইফুল ইসলাম সজল মোল্লা বলেন, আচরণবিধি মানতে প্রার্থীদের কঠোরভাবে সতর্ক করা হচ্ছে।

ইউএনও এটিএম ফরহাদ চৌধুরী বলেন, নির্বাচনী আচরণবিধি মানতে প্রার্থীদের প্রতীক বরাদ্দের সময় নির্দেশনা দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু অনেক প্রার্থী সেই নির্দেশনা না মেনে আচরণবিধি লঙ্ঘন করছেন। নির্বাচনের আগমুহূর্ত পর্যন্ত কঠোরভাবে বিধি প্রতিপালনে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে।

প্রশাসনের সঙ্গে প্রার্থীদের মতবিনিময় :কুলাউড়া উপজেলার ১৩ ইউনিয়নের নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী চেয়ারম্যান, সদস্য, সংরক্ষিত সদস্য প্রার্থীরা প্রশাসনের কাছে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের দাবি জানিয়েছেন। গতকাল বৃহস্পতিবার পৌর মিলনায়তনে আচরণবিধি অবহিতকরণ ও আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত মতবিনিময় সভায় তারা প্রশাসনের কাছে এ দাবি জানান।

ইউএনও এটিএম ফরহাদ চৌধুরীর সভাপতিত্বে মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন জেলা প্রশাসক মীর নাহিদ আহসান। স্বাগত বক্তব্য দেন কুলাউড়া উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) সাইফুল ইসলাম সজল মোল্লা। বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার হাসান মোহাম্মদ নাসের, কুলাউড়া পৌরসভার মেয়র অধ্যক্ষ সিপার উদ্দিন আহমদ, জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মোহাম্মদ আলমগীর হোসেন প্রমুখ।